মদের মত হোমিও ওষুধ কী হারাম (?)

ইসলাম সকল প্রকার মাদক তথা নেশাদার দ্রব্য হারাম ঘোষণা করেছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেনكُلُّ مُسْكِرٍ خَمْرٌ
وَ كُلُّ خَمْرٍ حَرَامٌ
  প্রত্যেক নেশাদার দ্রব্যই মদ আর যাবতীয় মদই হারাম [মুসলিমমিশকাত হা/৩৬৩৮] অথচ
এই মাদকের ভয়ংকর থাবায় আজ বিশ্বব্যাপী বিপন্ন মানব সভ্যতা
 এর সর্বনাশা মরণ ছোবলে জাতি আজ অকালে ধ্বংস হয়ে যচ্ছে ভেঙ্গে পড়ছে অসংখ্য পরিবার বিঘ্নিত হচ্ছে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক
উন্নয়ন
 বৃদ্ধি পাচ্ছে চোরাচালানসহ মানবতা বিধ্বংসী অসংখ্য অপরাধ মাদকাসক্তির কারণে সকল জনপদেই চুরিডাকাতিছিনতাইচাঁদাবাজি ও সন্ত্রাস বেড়ে গিয়ে মানুষের জান-মাল ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে সমাজের অধিকাংশ অপরাধের জন্য মুখ্যভাবে দায়ী এই মাদকতা এজন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেনلاَتَشْرَبِ الْخَمْرَ، فَإِنَّهُ مِفْتَاحُ كُلِّ شَرٍّ. মদ পান করো না কেননা তা সকল অপকর্মের চাবিকাঠি[ইবনু মাজাহ হা/৩৩৭১হাদীছ ছহীহ] অন্য হাদীছে এসেছেاِجْتَنِبُوا الْخَمْرَ فَإِنَّهَا أُمُّ الْخَبَائِثِ. তোমরা মদ থেকে বেঁচে থাক কেননা তা অশ্লীল কাজের মূল[নাসাঈ হা/৫৬৬৭হাদীছ ছহীহ]

আভিধানিক অর্থ : মাদকদ্রব্যের আরবী প্রতিশব্দ খমর (خمر) এর অর্থ- সমাচ্ছন্ন করাঢেকে দেয়া এই সকল অর্থের সাথে সম্পর্কিত হওয়ার কারণেই মদ ও শরাবকে খমর বলা হয় 
Cambridge Dictionary-
তে বলা হয়েছে, An alcoholic drink which is usually made from grapes but can also be made from other fruits or flowers. It is made by FERMENTING, the fruit with water and sugar. 
মদ হল নেশাকর পানীয় যা সাধারণত আঙ্গুর থেকে তৈরী হয় তবে অন্যান্য ফল ও ফুল থেকেও তৈরী হতে
পারে
 এটা উত্তেজনা সৃষ্টির জন্য চিনি ও পানির মাধ্যমে ফল দ্বারা তৈরী হয় 

পারিভাষিক অর্থ : যে সকল বস্ত্ত সেবনে মাদকতা সৃষ্টি হয় এবং বুদ্ধিকে আচ্ছন্ন করে ফেলে অথবা বোধশক্তির
উপর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে তাকে মাদকদ্রব্য বলে
 কবি বলেনشَرِبْتُ الْخَمْرَ حَتَّى ضَلَّ عَقْلِىْ + كَذَاكَ الْخَمْرُ تَفْعَلُ بِالْعُقُوْلِ. মদ পান করে আমার বিবেক হারিয়ে গেছে মদ এভাবেই বুদ্ধিকে নিয়ে খেল-তামাশা করে সাধারণত নেশা জাতীয় দ্রব্যসামগ্রী গ্রহণ করা বা পান করাই মাদকাসক্তি  এ মর্মে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর বাণী : وَ الْخَمْرُ مَا
خَامَرَ الْعَقْلَ
 মদ বা মাদকদ্রব্য তাইযা জ্ঞান-বুদ্ধিকে আচ্ছন্ন করে[বুখারীমিশকাত হা/৩৬৩৫ হুদূদ’ অধ্যায়] 

মদ কেন হারাম : 

মদ হারাম এ বিষয়ে আল্লাহ বলেনيَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالأَنصَابُ وَالأَزْلاَمُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ- إِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَن يُوْقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاء فِيْ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَن ذِكْرِ اللهِ
وَعَنِ الصَّلاَةِ فَهَلْ أَنْتُم مُّنْتَهُوْنَ
–  হে ঈমানদারগণ! নিশ্চয়ই মদজুয়াপূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ধারক শর সমূহ শয়তানের নাপাক কর্ম বৈ কিছুই নয় অতএব এগুলো থেকে বিরত হও তাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হবে শয়তান তো কেবল চায়মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের মধ্যে পরস্পরে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও ছালাত হতে তোমাদেরকে বাধা প্রদান করতে অতএব তোমরা নিবৃত্ত হবে কি? (মায়েদাহ ৫/৯০-৯১)
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেনخَمِّرُوا الآنِيَةَ وَاذْكُرُوا اسْمَ اللهِ عَلَيْهَا তোমরা তোমাদের পাত্র সমূহ ঢেকে রাখ এবং তার উপরে আল্লাহর নাম স্মরণ কর[মুত্তাফাক্ব আলাইহমিশকাত হা/৪২৯৪আল-আদাবুল মুফরাদহা/১২৩৪ওমর ফারূক (রাঃ) বলেনالْخَمْرُ مَا خَامَرَ الْعَقْلَ   মদ তাইযা মানুষের বিবেককে আচ্ছন্ন করে[বুখারী হা/৪৬১৯মুসলিম হা/৩০৩২মিশকাত হা/৩৬৩৫সে সময় আরব দেশে আঙ্গুরখেজুরমধুগম ও যব সহ পাঁচটি বস্ত্ত থেকে মদ তৈরী হ[বুখারীআবূদাঊদ হা/৩৬৬৯তবে প্রধানতঃ আঙ্গুর থেকেই সচরাচর মদ তৈরী হ যেমন বলা হয়েছেالنَّيُّ مِنْ مَاءِ الْعِنَبِ إِذَا غَلاَ وَاشْتَدَّ وَبَلَغَ حَدَّ الْإِسْكَارِ মদ হল আঙ্গুরের কাঁচা রস যখন পচে গরম হয় এবং ফুলে ফেনা ধরে যায় ও চূড়ান্ত নেশাকর অবস্থায় পৌঁছে যায়
আঙ্গুরের কাঁচা রস পচে ফেনা ধরে গেলে তাতে নেশা সৃষ্টি হয়যাতে মানুষের স্বাভাবিক বিবেক-বুদ্ধি লোপ
পেয়ে যায়
 বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন পচা-সড়া জিনিষ দিয়ে মদ তৈরী হয় যেমন বাংলাদেশে পচা পান্তাপচা খেজুর রসতালের রস ইত্যাদি দিয়ে দেশী মদ ও তাড়ি বানানো হয় এছাড়াও রয়েছে তামাকগাঁজাআফিম প্রভৃতি বহু প্রাচীন মাদক সমূহ বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে হিরোইনফেন্সিডিলইয়াবা ট্যাবলেটপেথিড্রিন ইনজেকশন ইত্যাদি নানাবিধ নেশাকর বস্ত্ত নামে-বেনামে তৈরী হচ্ছে যা সবই এক কথায় মাদক দ্রব্য বা মদ মদ সাময়িকভাবে দেহের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করলেও চূড়ান্তভাবে তা মানুষকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করে

মদ নির্লজ্জতার উৎস : 
মদকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) উম্মুল ফাওয়াহেশ বা সকল নির্লজ্জতার উৎস বলেছেন আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেনسَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صـ يَقُولُ : الْخَمْرُ أُمُّ الْفَوَاحِشِ وَأَكْبَرُ الْكَبَائِرِ مَنْ شَرِبَهَا وَقَعَ عَلَى أُمِّهِ وَعَمَّتِهِ وَخَالَتِهِ– ‘আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি যেমদ হল সকল নির্লজ্জতার উৎস এবং সকল পাপের মধ্যে সবচেয়ে বড় পাপ যে ব্যক্তি মদ পান করেসে তার মাখালাফুফু সকলের উপর পতিত হয়[নাসাঈ হা/৫৬৬৬-৬৭বায়হাক্বী ৮/২৮৭-২৮৮]
কিছু ছাহাবী এসে মদের অপকারিতা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং এ বিষয়ে আল্লাহর নির্দেশ কামনা করেন তখন নাযিল হয়,  يَسْأَلُوْنَكَ عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ قُلْ فِيْهِمَا إِثْمٌ كَبِيْرٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَإِثْمُهُمَا أَكْبَرُ مِن
نَّفْعِهِمَا- (البقرة
 ২১৯)- ‘তারা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে আপনি বলে দিন যেএ দুটির মধ্যে রয়েছে বড় পাপ ও মানুষের জন্য রয়েছে কিছু উপকারিতা তবে এ দুটির পাপ এ দুটির উপকারিতার চাইতে অধিক (বাক্বারাহ ২/২১৯) এ আয়াত নাযিলের ফলে বহু লোক মদ-জুয়া ছেড়ে দেয় তবুও কিছু লোক থেকে যায়
অতঃপর (২) একদিন এক ছাহাবীর বাড়ীতে মেযবানী শেষে মদ্যপান করে একজন অজ্ঞান হয়ে পড়েন অন্যজন ছালাতে ইমামতি করতে গিয়ে সূরা কাফিরূণে نَحْنُ نَعْبُدُ مَا تَعْبُدُونَপড়েন যার অর্থ আমরা ইবাদত করি তোমরা যাদের ইবাদত কর[তিরমিযী হা/৩০২৬যাতে আয়াতের মর্ম একেবারেই পরিবর্তিত হয়ে যায় তখন আয়াত নাযিল হয়,
 يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لاَ تَقْرَبُوا الصَّلاَةَ وَأَنْتُمْ سُكَارَى حَتَّى تَعْلَمُوا مَا تَقُولُونَ- (النساء 43)- হে মুমিনগণ! তোমরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছালাতের নিকটবর্তী হয়ো না যতক্ষণ না তোমরা যা বল তা বুঝতে পার (নিসা ৪/৪৩)

মদে নেশা হয়, হোমিও ওষুধেও কী (?) নেশা হয় : 
১. জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেনكُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ প্রত্যেক নেশাকর বস্ত্ত হারাম[মুসলিমমিশকাত হা/৩৬৩৯ দন্ডবিধি সমূহ অধ্যায়-১৭ অনুচ্ছেদ-৬]
২. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেনكُلُّ شَرَابٍ أَسْكَرَ فَهُوَ حَرَامٌ প্রত্যেক পানীয় যা নেশাগ্রস্ত করেতা হারাম[মুত্তাফাক্ব আলাইহমিশকাত হা/৩৬৩৭]
৩. জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেনمَا أَسْكَرَ كَثِيرُهُ فَقَلِيلُهُ حَرَامٌ যার বেশীতে মাদকতা আনেতার অল্পটাও হারাম[তিরমিযীআবুদাঊদইবনু মাজাহমিশকাত হা/৩৬৪৫]এই হাদীছের ওপর ভিত্তি করে কোন কোন ভাই ফতওয়া প্রদান করেন যে, হোমিও ওষূধ হারামকিন্তু কিছু কিছু বিদ্যান একে হালাল বলেছেনহোমিও
ঔষধ সেবনে শরী
আতে কোন বাধা নেই কেননা হোমিও সহ বিভিন্ন ঔষধে কেবল সংরক্ষণের জন্য  সামান্য পরিমাণ পরিশোধিত এ্যালকোহল ব্যবহার করা হয় যাতে মাদকতা আসে না এবং তা ছালাত ও যিকর হতে বিরতও রাখে না (ফাতাওয়া উছায়মীন ১১/২৫৬-২৫৯১৭/৩১)
মহান আল্লাহ মৃত পশু হারাম করেছেনকিন্তু তীব্র ক্ষুধায় কাতর হলে ব্যতিক্রম হবেঅর্থাৎ জীবন বাঁচানোর তাগিদে
তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে মৃত জীবরক্তশুকরের মাংসযেসব জন্তু আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গকৃত হয়যা কন্ঠরোধে মারা যায়যা আঘাত লেগে মারা যায়যা উচচ স্থান থেকে পতনের ফলে মারা যাযা শিং এর আঘাতে মারা যায় এবং যাকে হিংস্র জন্তূ ভক্ষণ করেছেকিন্তূ যাকে তোমরা যবেহ করেছ যে জন্তূ যজ্ঞবেদীতে যবেহ করা হয় এবং যা ভাগ্য নির্ধারক শর দ্বারা বণ্টন করা হয় এসব গোনাহর কাজ আজ কাফেররা তোমাদের দ্বীন থেকে নিরাশ হয়ে গেছে অতএব তাদেরকে ভয় করো না বরং আমাকে ভয় কর আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলামতোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম অতএব যে ব্যাক্তি তীব্র ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়েকিন্তূ কোন গোনাহর প্রতি প্রবণতা না থাকেতবে নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাআলা ক্ষমাশীল (মায়েদা /৩)
হোমিও ওষুধ মানুষ নেশা গ্রস্থ হওয়ার জন্যে সেবন করে না এটা সত্য এবং এটাও সত্য যে, অল্প পরিমাণ যে পরিশোধিত এ্যালকাহোল হোমিও ওষুধে ব্যবহার করা হয় তাতে মাদকতা বা নেশাও হয় নাতবে কেন হোমিও হালাল হবে না (?) তাই আমাদের জানা প্রয়োজন আমরা কোন উদ্দেশ্য,কতটুকু পরিমাণ তা পান করছিআর এতে মতিভ্রম
কতটুকু হচ্ছে
বলতে চাই নেশার উদ্দেশ্য নিয়ে অধিক পরিমাণে পান করা হারামআর ওষুধের বা শেফা পাওয়ার উদ্দেশ্যে সেবন করা হালালআর হোমিও ওষুধের যে উপকারণ তার সাথে মিশিয়ে এটা সেবন করতে দেওয়া হয়ধরুন সাপের বিষ মানুষের জন্যে উপকারী নয়কিন্তু বিজ্ঞানের বিভিন্ন প্রক্রিয়ার ফলে তা মানুষের নানা প্রকার উপকার করে চলেছেযেমন ধরুন হোমিও ওষুধ ল্যাকেসিস তৈরী হয় সাপের বিষ থেকেকিন্তু সেটা প্রক্রিয়া ও পরিশোধিত করে অতিব সুক্ষ মাত্রায় তা এ্যালকোহলের মধ্যে দিয়ে ওষুধ তৈরী করা হয়আর সেই ওষুধ হোমিও ডাক্তারগণ পানি বা গ্লোবিউসের মাধ্যমে রোগীকে সেবন করতে বলে থাকেন
৪. আবুদ্দারদা (রাঃ) বলেনআমার বন্ধু (মুহাম্মাদ) আমাকে অছিয়ত করেছেন যেতুমি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে নাযদিও তোমাকে কেটে টুকরা টুকরা করা হয় বা আগুনে পুড়িয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় তুমি ইচ্ছাকৃতভাবে ছালাত ত্যাগ করবে না কেননা যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ছালাত ত্যাগ করেতার উপর থেকে আল্লাহর যিম্মাদারী উঠে যায় আর তুমি মদ্যপান করবে না কেননা মদ হ مِفْتَاحُ كُلِّ شَرٍّ সকল অনিষ্টের মূল[ইবনু মাজাহসনদ
হাসান
মিশকাত হা/৫৮০ ছালাত অধ্যায়]
৫. আনাস (রাঃ) বলেনরাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মদের সাথে সম্পৃক্ত দশ ব্যক্তিকে লানত করেছেন। (১) মদ প্রস্ত্ততকারী  (২) মদের ফরমায়েশ দানকারী (৩) মদ পানকারী (৪) মদ বহনকারী (৫) যার প্রতি মদ বহন করা হয় (৬) যে মদ পান করায় (৭) মদ বিক্রেতা (৮) মদের মূল্য ভোগকারী (৯) মদ ক্রয়কারী (১০) যার জন্য মদ ক্রয় করা হয়[তিরমিযীইবনু মাজাহমিশকাত হা/২৭৭৬]

শিক্ষনীয় দুটি হাদীছ :
 (১) ছাহাবী আনাস বিন মালেক (রাঃ) বলেনযেদিন মদ হারাম ঘোষিত হয়সেদিন আমি আবু ত্বালহার বাড়ীতে মেহমানদের মদ পরিবেশনের দায়িত্বে ছিলাম সেদিন ফাযীহ (الْفَضِيْخُ) নামক উন্নত মানের মদ পরিবেশিত হচ্ছিল এমন সময় ঘোষণা শোনা গেলأَلاَ إِنَّ الْخَمْرَ قَدْ حُرِّمَتْ সাবধান হও! মদ  হারাম করা হয়েছে সাথে সাথে মদের বড় বড়
কলসীগুলো সব রাস্তায় ফেলে দেওয়া হ
 বাড়ীওয়ালা আবু ত্বালহা বললেনতুমি বের হও এবং ওগুলিকে জ্বালিয়ে দাও তখন আমি সব জ্বালিয়ে দিলাম এসময় মদীনার অলি-গলিতে মদের স্রোত বয়ে গেল আমাদের কেউ ওযূ করল কেউ গোসল করল কেউ গলায় আঙ্গুল ঢুকিয়ে পেটের ভিতরকার সবকিছু বমি করে ফেলে দিল অতঃপর আমরা সবাই মসজিদে গেলাম তখন আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) আমাদেরকে সূরা মায়েদাহ ৯০ ও ৯১ আয়াত দুটি পাঠ করে শুনালেন তখন একজন বলে উঠলহে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মধ্যে যারা মদ পান করেছে অথবা মৃত্যু বরণ করেছেতাদের
উপায় কি হবে
তখন মায়েদাহ ৯৩ আয়াতটি নাযিল হয় যেখানে বলা হয় لَيْسَ عَلَى الَّذِيْنَ آمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ جُنَاحٌ فِيْمَا طَعِمُوْا إِذَا مَا اتَّقَوْا যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে তাদের জন্য তাতে কোন গোনাহ নেইযতটুকু
তারা খেয়েছে
যদি তারা সংযত হয়… (মায়েদাহ ৫/৯৩)[বুখারী হা/৪৬২০ তাফসীর অধ্যায়ইবনু জারীর হা/১২৫২৭তাফসীর ইবনু কাছীর]
(২) উক্ত মর্মে হযরত ওছমান গণী (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছেতিনি বলেনاجْتَنِبُوا الْخَمْرَ فَإِنَّهَا أُمُّ الْخَبَائِثِ তোমরা
মদ থেকে বেঁচে থাক
 কেননা এটি হল সকল নিকৃষ্ট কর্মের উৎস মনে রেখ তোমাদের পূর্বেকার একজন সাধু ব্যক্তি সর্বদা ইবাদতে রত থাকত এবং লোকালয় থেকে দূরে থাকত একদা এক বেশ্যা মেয়ে তাকে প্রলুব্ধ করল তার কাছে সে তার দাসীকে পাঠিয়ে দেয় সে গিয়ে বলে যেআমরা আপনাকে আহবান করছি একটি ব্যাপারে সাক্ষী থাকার জন্য তখন সাধু লোকটি দাসীটির সাথে গেল যখনই সে কোন দরজা অতিক্রম করততখনই তা পিছন থেকে তালাবদ্ধ করে দেওয়া হ এভাবে অবশেষে একজন সুন্দরী মহিলার কাছে তাকে পৌঁছানো হ যার কাছে একটি বালক ও এক পাত্র মদ ছিল তখন ঐ মহিলাটি তাকে বললআমি আপনাকে সাক্ষ্য করার জন্য ডাকিনি বরং ডেকেছি আমার সাথে যেনা করার জন্য অথবা এই বালকটিকে আপনি হত্যা করবেন অথবা এই এক পেয়ালা মদ পান করবেন সাধু লোকটি তখন মদ পান করল অতঃপর বললআরো দাও অতঃপর সে মাতাল হয়ে গেল ফলে সে উক্ত নারীর সাথে অপকর্ম করল এবং ঐ বালকটিকেও হত্যা করল অতএব তোমরা মদ থেকে বেঁচে থাক فَإِنَّهَا وَاللهِ لاَ يَجْتَمِعُ الإِيْمَانُ وَالْخَمْرُ إِلاَّ لَيُوْشِكُ أَنْ يُخْرِجَ أَحَدُهُمَا صَاحِبَهُ কেননা মদ ও ঈমান কখনো একত্রে থাকতে পারে না বরং একটি আরেকটিকে বের করে
দেয়
দারাকুৎনী হা/৪৫৬৫ছহীহাহ হা/১৮৫৩]

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loader-image

Scroll to Top