—মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ
আল-গালিব
وَإِنْ طَائِفَتَانِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ اقْتَتَلُوا
فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا فَإِنْ بَغَتْ إِحْدَاهُمَا عَلَى الْأُخْرَى
فَقَاتِلُوا الَّتِي تَبْغِي حَتَّى تَفِيءَ إِلَى أَمْرِ اللهِ فَإِنْ فَاءَتْ
فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا بِالْعَدْلِ وَأَقْسِطُوا إِنَّ اللهَ يُحِبُّ
الْمُقْسِطِينَ- إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوا بَيْنَ
أَخَوَيْكُمْ وَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ- (الحجرات
৯-১০)-
فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا فَإِنْ بَغَتْ إِحْدَاهُمَا عَلَى الْأُخْرَى
فَقَاتِلُوا الَّتِي تَبْغِي حَتَّى تَفِيءَ إِلَى أَمْرِ اللهِ فَإِنْ فَاءَتْ
فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا بِالْعَدْلِ وَأَقْسِطُوا إِنَّ اللهَ يُحِبُّ
الْمُقْسِطِينَ- إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوا بَيْنَ
أَخَوَيْكُمْ وَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ- (الحجرات
৯-১০)-
‘যদি মুমিনদের দুই দল পরস্পরে
যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তাহ’লে তোমরা তাদের মধ্যে সন্ধি করে দাও। অতঃপর যদি তাদের একদল
অপর দলের উপর সীমালংঘন করে, তাহ’লে তোমরা ঐদলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর, যে সীমালংঘন করে। যতক্ষণ না তারা আল্লাহর নির্দেশের (সন্ধির) দিকে ফিরে আসে। অতঃপর যদি তারা ফিরে
আসে তাহ’লে তোমরা উভয় দলের মধ্যে ন্যায়ানুগভাবে মীমাংসা করে দাও এবং ন্যায়বিচার কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ
ন্যায়বিচারকারীদের ভালবাসেন’। ‘মুমিনগণ পরস্পরে ভাই ব্যতীত নয়। অতএব তোমরা তোমাদের দু’ভাইয়ের মধ্যে
সন্ধি করে দাও। আর আল্লাহকে ভয় কর। তাতে তোমরা
অনুগ্রহপ্রাপ্ত হবে’ (হুজুরাত ৪৯/৯-১০)।
যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তাহ’লে তোমরা তাদের মধ্যে সন্ধি করে দাও। অতঃপর যদি তাদের একদল
অপর দলের উপর সীমালংঘন করে, তাহ’লে তোমরা ঐদলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর, যে সীমালংঘন করে। যতক্ষণ না তারা আল্লাহর নির্দেশের (সন্ধির) দিকে ফিরে আসে। অতঃপর যদি তারা ফিরে
আসে তাহ’লে তোমরা উভয় দলের মধ্যে ন্যায়ানুগভাবে মীমাংসা করে দাও এবং ন্যায়বিচার কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ
ন্যায়বিচারকারীদের ভালবাসেন’। ‘মুমিনগণ পরস্পরে ভাই ব্যতীত নয়। অতএব তোমরা তোমাদের দু’ভাইয়ের মধ্যে
সন্ধি করে দাও। আর আল্লাহকে ভয় কর। তাতে তোমরা
অনুগ্রহপ্রাপ্ত হবে’ (হুজুরাত ৪৯/৯-১০)।
উপরের আয়াত দু’টি ইসলামী সমাজ পরিচালনায় স্থায়ী মূলনীতি ও চিরন্তন
দিগদর্শন সমতুল্য। কারণ সমাজবদ্ধ জীবনে
পরস্পরে দ্বন্দ্ব হওয়াটা স্বাভাবিক। সঙ্গে সঙ্গে সেই দ্বন্দ্ব নিরসনের পন্থা থাকাটাও আবশ্যিক। সব সমাজেই এটা আছে। তবে ইসলামী সমাজে এর
জন্য কিছু বিশেষ নীতিমালা রয়েছে। যা মেনে চলা সকল মুমিনের জন্য অপরিহার্য।
দিগদর্শন সমতুল্য। কারণ সমাজবদ্ধ জীবনে
পরস্পরে দ্বন্দ্ব হওয়াটা স্বাভাবিক। সঙ্গে সঙ্গে সেই দ্বন্দ্ব নিরসনের পন্থা থাকাটাও আবশ্যিক। সব সমাজেই এটা আছে। তবে ইসলামী সমাজে এর
জন্য কিছু বিশেষ নীতিমালা রয়েছে। যা মেনে চলা সকল মুমিনের জন্য অপরিহার্য।
আয়াতটির সর্বাধিক সম্ভাব্য শানে নুযূল :
হযরত সাহল বিন সা‘দ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, ক্বোবাবাসী
বনু ‘আমর বিন ‘আওফ-এর (মুসলমানেরা) পরস্পরে লড়াইয়ে লিপ্ত হ’ল। এক পর্যায়ে তারা
পরস্পরের প্রতি পাথর নিক্ষেপ শুরু করল। খবর পেয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সবাইকে বললেন, اذْهَبُوا بِنَا نُصْلِحُ بَيْنَهُمْ
‘তোমরা আমাদের সাথে চল। আমরা তাদের মধ্যে সন্ধি করে দেব’ (বুখারী হা/২৬৯৩)। অতঃপর তিনি গেলেন ও তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিলেন। অতঃপর ফিরে এলেন। তাতে ছালাত ফউত হওয়ার
উপক্রম হ’ল। তখন মুছল্লীরা আবু বকরকে ইমামতির জন্য এগিয়ে দিল’ (বুখারী হা/৬৮৪)। এর বাইরে শানে নুযূল হিসাবে ছহীহ বুখারীতে হযরত আনাস (হা/২৬৯১)
ও উসামা বিন যায়েদ (রাঃ) হ’তে (হা/৬২০৭) আব্দুল্লাহ বিন উবাইয়ের নিকট রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর
গমন ও তার তাচ্ছিল্যকরণ অতঃপর দু’পক্ষের মারামারি প্রসঙ্গে অত্র আয়াত নাযিল হয়েছে বলে যা
বর্ণিত হয়েছে, তা যুক্তিযুক্ত নয়। কেননা অত্র আয়াতে বলা হয়েছে طَائِفَتَانِ مِنَ
الْمُؤْمِنِينَ ‘মুমিনদের মধ্যকার দু’টি দল’। অথচ আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের সাথে ঝগড়ার ঘটনা বদর যুদ্ধের
আগেকার। যখন ইবনু উবাই ও তার
দল মুসলমান হয়নি। যা উক্ত হাদীছেই বলা
হয়েছে। অথচ ক্বোবার ঝগড়া ও
তার মীমাংসার ঘটনায় উভয় পক্ষ ছিল মুসলমান। যা আলোচ্য আয়াতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।[1] আল্লাহ সর্বাধিক অবগত।
বনু ‘আমর বিন ‘আওফ-এর (মুসলমানেরা) পরস্পরে লড়াইয়ে লিপ্ত হ’ল। এক পর্যায়ে তারা
পরস্পরের প্রতি পাথর নিক্ষেপ শুরু করল। খবর পেয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সবাইকে বললেন, اذْهَبُوا بِنَا نُصْلِحُ بَيْنَهُمْ
‘তোমরা আমাদের সাথে চল। আমরা তাদের মধ্যে সন্ধি করে দেব’ (বুখারী হা/২৬৯৩)। অতঃপর তিনি গেলেন ও তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিলেন। অতঃপর ফিরে এলেন। তাতে ছালাত ফউত হওয়ার
উপক্রম হ’ল। তখন মুছল্লীরা আবু বকরকে ইমামতির জন্য এগিয়ে দিল’ (বুখারী হা/৬৮৪)। এর বাইরে শানে নুযূল হিসাবে ছহীহ বুখারীতে হযরত আনাস (হা/২৬৯১)
ও উসামা বিন যায়েদ (রাঃ) হ’তে (হা/৬২০৭) আব্দুল্লাহ বিন উবাইয়ের নিকট রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর
গমন ও তার তাচ্ছিল্যকরণ অতঃপর দু’পক্ষের মারামারি প্রসঙ্গে অত্র আয়াত নাযিল হয়েছে বলে যা
বর্ণিত হয়েছে, তা যুক্তিযুক্ত নয়। কেননা অত্র আয়াতে বলা হয়েছে طَائِفَتَانِ مِنَ
الْمُؤْمِنِينَ ‘মুমিনদের মধ্যকার দু’টি দল’। অথচ আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের সাথে ঝগড়ার ঘটনা বদর যুদ্ধের
আগেকার। যখন ইবনু উবাই ও তার
দল মুসলমান হয়নি। যা উক্ত হাদীছেই বলা
হয়েছে। অথচ ক্বোবার ঝগড়া ও
তার মীমাংসার ঘটনায় উভয় পক্ষ ছিল মুসলমান। যা আলোচ্য আয়াতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।[1] আল্লাহ সর্বাধিক অবগত।
তবে ঘটনা যেটাই হৌক না কেন এটি সর্বযুগে সম্ভব এবং সর্বযুগেই সন্ধি ও মীমাংসা
থাকতে হবে। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলেছেন,انْصُرْ أَخَاكَ ظَالِمًا أَوْ
مَظْلُومًا. فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللهِ أَنْصُرُهُ إِذَا كَانَ مَظْلُومًا،
أَفَرَأَيْتَ إِذَا كَانَ ظَالِمًا كَيْفَ أَنْصُرُهُ قَالَ : تَحْجُزُهُ أَوْ
تَمْنَعُهُ مِنَ الظُّلْمِ، فَإِنَّ ذَلِكَ نَصْرُهُ– ‘তুমি তোমার
ভাইকে সাহায্য কর সে যালেম হৌক বা মযলূম হৌক। লোকেরা বলল, হে আল্লাহর
রাসূল! আমরা মযলূমকে সাহায্য করব। কিন্তু যালেমকে কিভাবে সাহায্য করব? জবাবে তিনি বললেন, তাকে যুলুম
থেকে বাধা দাও। আর এটাই হ’ল তাকে
সাহায্য করা’।[2]
থাকতে হবে। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলেছেন,انْصُرْ أَخَاكَ ظَالِمًا أَوْ
مَظْلُومًا. فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللهِ أَنْصُرُهُ إِذَا كَانَ مَظْلُومًا،
أَفَرَأَيْتَ إِذَا كَانَ ظَالِمًا كَيْفَ أَنْصُرُهُ قَالَ : تَحْجُزُهُ أَوْ
تَمْنَعُهُ مِنَ الظُّلْمِ، فَإِنَّ ذَلِكَ نَصْرُهُ– ‘তুমি তোমার
ভাইকে সাহায্য কর সে যালেম হৌক বা মযলূম হৌক। লোকেরা বলল, হে আল্লাহর
রাসূল! আমরা মযলূমকে সাহায্য করব। কিন্তু যালেমকে কিভাবে সাহায্য করব? জবাবে তিনি বললেন, তাকে যুলুম
থেকে বাধা দাও। আর এটাই হ’ল তাকে
সাহায্য করা’।[2]
পারস্পরিক সন্ধির মূলনীতি সমূহ
১. সন্ধিকে লক্ষ্য নির্ধারণ করা ২. সন্ধিকালে ন্যায়নীতি ও সুবিচার নিশ্চিত করা
৩. ইসলামী ভ্রাতৃত্ব সমুন্নত রাখা।
১. সন্ধিকে লক্ষ্য নির্ধারণ করা :
ইসলামী সমাজে পারস্পরিক সন্ধিকে অপরিহার্য কর্তব্য হিসাবে গণ্য করা প্রত্যেকের
জীবনে অন্যতম লক্ষ্য হিসাবে নির্ধারণ করা। যার মধ্যে আল্লাহর সন্তোষলাভ ও উভয়পক্ষের সন্তুষ্টি লক্ষ্য
থাকবে। সন্ধিকারীকে অবশ্যই
বিবাদীয় বিষয় সম্পর্কে পূর্ণ ওয়াকিফহাল হ’তে হবে। তখন এই ব্যক্তির মর্যাদা হবে নিয়মিত ছায়েম ও ক্বায়েম তথা
ছিয়াম পালনকারী ও রাত্রি জাগরণকারী মুমিনের চাইতে উত্তম। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِأَفْضَلَ
مِنْ دَرَجَةِ الصِّيَامِ وَالصَّلاَةِ وَالصَّدَقَةِ؟ صَلاَحُ ذَاتِ الْبَيْنِ
فَإِنَّ فَسَادَ ذَاتِ الْبَيْنِ هِىَ الْحَالِقَةُ– ‘আমি তোমাদেরকে
ছিয়াম-ছালাত ও ছাদাক্বার চেয়েও উত্তম কোন বিষয়ের খবর দিব কি? আর তা হ’ল পারস্পরিক বিবাদ মীমাংসা করে দেওয়া। কেননা পরস্পরের বিবাদ দ্বীনকে ছাফকারী’।[3] অর্থাৎ বিবদমান পক্ষ দ্বয়ের মধ্যে দ্বীন গৌণ হয়ে যায়। সেকারণ পারস্পরিক
সন্ধির গুরুত্ব এত বেশী দেওয়া হয়েছে যে, সন্ধিকারীকে
মিথ্যা বলারও অনুমতি দেওয়া হয়েছে কেবল সন্ধির স্বার্থে। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন,لَيْسَ الْكَذَّابُ الَّذِى
يُصْلِحُ بَيْنَ النَّاسِ، فَيَنْمِى خَيْرًا، أَوْ يَقُولُ خَيْرًا– ‘ঐ ব্যক্তি
মিথ্যাবাদী নয়, যে ব্যক্তি মানুষের মধ্যে মীমাংসা করে দেয়। অতঃপর উত্তম কথা বলে’।[4] তবে এই মিথ্যা হ’তে হবে পারস্পরে কল্যাণের উদ্দেশ্যে। ক্ষতির উদ্দেশ্যে নয়। এটাকে তাওরিয়া বা তা‘রীয বলা হয় (ফাৎহুল বারী)। যেভাবে ইবরাহীম (আঃ) বলেছিলেন, إِنِّي سَقِيمٌ
‘আমি অসুস্থ’ (ছাফফাত ৩৭/৮৯)। এর দ্বারা তিনি
নিজেকে মানসিকভাবে অসুস্থ বুঝিয়ে বলেছিলেন।قَالَ بَلْ فَعَلَهُ كَبِيرُهُمْ
هَذَا ‘ওদের মধ্যকার এই বড় মূর্তিটাই একাজ করেছে’ অর্থাৎ অন্য
মূর্তিগুলিকে ভেঙ্গেছে (আম্বিয়া ২১/৬৩)। এর দ্বারা তিনি বড় মূর্তিটার প্রতি কওমের অন্ধ বিশ্বাস
ভাঙতে চেয়েছিলেন। এছাড়া মদীনায়
হিজরতকালে রাস্তায় পথিকদের প্রশ্নের উত্তরে সামনে বসা রাসূল (ছাঃ)-এর পরিচয়
সম্পর্কে আবুবকর (রাঃ) বলতেন, هَذَا الرَّجُلُ يَهْدِينِى السَّبِيلَ ‘এ ব্যক্তি
আমাকে রাস্তা দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন’ (বুখারী হা/৩৯১১)। এর দ্বারা তিনি হেদায়াতের রাস্তা বুঝাতেন। কিন্তু লোকেরা ভাবত
রাস্তা দেখানো কোন দক্ষ ব্যক্তি হবেন। আরবী অলংকার শাস্ত্রে এই দ্ব্যর্থবোধক বক্তব্যকে ‘তাওরিয়া’ বলা হয়। যাতে একদিকে সত্য বলা
হয়। অন্যদিকে শ্রোতাকেও
বুঝানো যায়। (সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) ৩য় মুদ্রণ ২৩৪ পৃ.)।
জীবনে অন্যতম লক্ষ্য হিসাবে নির্ধারণ করা। যার মধ্যে আল্লাহর সন্তোষলাভ ও উভয়পক্ষের সন্তুষ্টি লক্ষ্য
থাকবে। সন্ধিকারীকে অবশ্যই
বিবাদীয় বিষয় সম্পর্কে পূর্ণ ওয়াকিফহাল হ’তে হবে। তখন এই ব্যক্তির মর্যাদা হবে নিয়মিত ছায়েম ও ক্বায়েম তথা
ছিয়াম পালনকারী ও রাত্রি জাগরণকারী মুমিনের চাইতে উত্তম। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِأَفْضَلَ
مِنْ دَرَجَةِ الصِّيَامِ وَالصَّلاَةِ وَالصَّدَقَةِ؟ صَلاَحُ ذَاتِ الْبَيْنِ
فَإِنَّ فَسَادَ ذَاتِ الْبَيْنِ هِىَ الْحَالِقَةُ– ‘আমি তোমাদেরকে
ছিয়াম-ছালাত ও ছাদাক্বার চেয়েও উত্তম কোন বিষয়ের খবর দিব কি? আর তা হ’ল পারস্পরিক বিবাদ মীমাংসা করে দেওয়া। কেননা পরস্পরের বিবাদ দ্বীনকে ছাফকারী’।[3] অর্থাৎ বিবদমান পক্ষ দ্বয়ের মধ্যে দ্বীন গৌণ হয়ে যায়। সেকারণ পারস্পরিক
সন্ধির গুরুত্ব এত বেশী দেওয়া হয়েছে যে, সন্ধিকারীকে
মিথ্যা বলারও অনুমতি দেওয়া হয়েছে কেবল সন্ধির স্বার্থে। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন,لَيْسَ الْكَذَّابُ الَّذِى
يُصْلِحُ بَيْنَ النَّاسِ، فَيَنْمِى خَيْرًا، أَوْ يَقُولُ خَيْرًا– ‘ঐ ব্যক্তি
মিথ্যাবাদী নয়, যে ব্যক্তি মানুষের মধ্যে মীমাংসা করে দেয়। অতঃপর উত্তম কথা বলে’।[4] তবে এই মিথ্যা হ’তে হবে পারস্পরে কল্যাণের উদ্দেশ্যে। ক্ষতির উদ্দেশ্যে নয়। এটাকে তাওরিয়া বা তা‘রীয বলা হয় (ফাৎহুল বারী)। যেভাবে ইবরাহীম (আঃ) বলেছিলেন, إِنِّي سَقِيمٌ
‘আমি অসুস্থ’ (ছাফফাত ৩৭/৮৯)। এর দ্বারা তিনি
নিজেকে মানসিকভাবে অসুস্থ বুঝিয়ে বলেছিলেন।قَالَ بَلْ فَعَلَهُ كَبِيرُهُمْ
هَذَا ‘ওদের মধ্যকার এই বড় মূর্তিটাই একাজ করেছে’ অর্থাৎ অন্য
মূর্তিগুলিকে ভেঙ্গেছে (আম্বিয়া ২১/৬৩)। এর দ্বারা তিনি বড় মূর্তিটার প্রতি কওমের অন্ধ বিশ্বাস
ভাঙতে চেয়েছিলেন। এছাড়া মদীনায়
হিজরতকালে রাস্তায় পথিকদের প্রশ্নের উত্তরে সামনে বসা রাসূল (ছাঃ)-এর পরিচয়
সম্পর্কে আবুবকর (রাঃ) বলতেন, هَذَا الرَّجُلُ يَهْدِينِى السَّبِيلَ ‘এ ব্যক্তি
আমাকে রাস্তা দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন’ (বুখারী হা/৩৯১১)। এর দ্বারা তিনি হেদায়াতের রাস্তা বুঝাতেন। কিন্তু লোকেরা ভাবত
রাস্তা দেখানো কোন দক্ষ ব্যক্তি হবেন। আরবী অলংকার শাস্ত্রে এই দ্ব্যর্থবোধক বক্তব্যকে ‘তাওরিয়া’ বলা হয়। যাতে একদিকে সত্য বলা
হয়। অন্যদিকে শ্রোতাকেও
বুঝানো যায়। (সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) ৩য় মুদ্রণ ২৩৪ পৃ.)।
২. সন্ধিকালে ন্যায়নীতি ও সুবিচার নিশ্চিত করা :
এটি খুবই কঠিন। অথচ এটিই হ’ল সবচেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় সাধ্যমত ও
সর্বোচ্চ সহনশীলতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে এবং উভয় পক্ষকে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে
হ’লেও সন্ধি করতে হবে। যেভাবে রাসূল (ছাঃ) হোদায়বিয়ার সন্ধিকালে ছাড় দিয়েছিলেন। সেখানে চারটি শর্তের তিনটিই ছিল বাহ্যিকভাবে
তাঁর বিপক্ষে। অথচ কেবল ‘দশ বছর যুদ্ধ
নয়’ শর্তটিকে অগ্রাধিকার দিয়ে তিনি সন্ধি চুক্তিতে স্বাক্ষর
করেন। যদিও সাথীরা সবাই
ছিলেন এর বিপক্ষে। কিন্তু পরে সবাই মেনে
নিয়েছিলেন এর গুরুত্ব উপলব্ধি করে। কারণ রাসূল (ছাঃ) সন্ধিকেই লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন এবং
যুদ্ধের বদলে শান্তিকেই অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর
উদ্দেশ্যে সত্য সাক্ষ্য দানে অবিচল থাক এবং কোন সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ যেন
তোমাদেরকে সুবিচার বর্জনে প্ররোচিত না করে। তোমরা ন্যায়বিচার কর, যা
আল্লাহভীতির অধিকতর নিকটবর্তী। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের সকল কৃতকর্ম সম্পর্কে
সম্যক অবগত’ (মায়েদাহ ৫/৮)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,إِنَّ الْمُقْسِطِينَ عِنْدَ
اللهِ عَلَى مَنَابِرَ مِنْ نُورٍ عَنْ يَمِينِ الرَّحْمَنِ عَزَّ وَجَلَّ
وَكِلْتَا يَدَيْهِ يَمِينٌ الَّذِينَ يَعْدِلُونَ فِى حُكْمِهِمْ وَأَهْلِيهِمْ
وَمَا وَلُوا ‘ন্যায়বিচারকারীরা ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট আরশের ডান
পার্শ্বে নূরের আসনে বসবে। যারা দুনিয়াতে তাদের শাসনে ও পরিবারে, যাদের উপর তারা নেতৃত্ব দেয়, সর্বদা ন্যায়বিচার করেছে’।[5]
গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় সাধ্যমত ও
সর্বোচ্চ সহনশীলতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে এবং উভয় পক্ষকে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে
হ’লেও সন্ধি করতে হবে। যেভাবে রাসূল (ছাঃ) হোদায়বিয়ার সন্ধিকালে ছাড় দিয়েছিলেন। সেখানে চারটি শর্তের তিনটিই ছিল বাহ্যিকভাবে
তাঁর বিপক্ষে। অথচ কেবল ‘দশ বছর যুদ্ধ
নয়’ শর্তটিকে অগ্রাধিকার দিয়ে তিনি সন্ধি চুক্তিতে স্বাক্ষর
করেন। যদিও সাথীরা সবাই
ছিলেন এর বিপক্ষে। কিন্তু পরে সবাই মেনে
নিয়েছিলেন এর গুরুত্ব উপলব্ধি করে। কারণ রাসূল (ছাঃ) সন্ধিকেই লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন এবং
যুদ্ধের বদলে শান্তিকেই অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর
উদ্দেশ্যে সত্য সাক্ষ্য দানে অবিচল থাক এবং কোন সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ যেন
তোমাদেরকে সুবিচার বর্জনে প্ররোচিত না করে। তোমরা ন্যায়বিচার কর, যা
আল্লাহভীতির অধিকতর নিকটবর্তী। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের সকল কৃতকর্ম সম্পর্কে
সম্যক অবগত’ (মায়েদাহ ৫/৮)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,إِنَّ الْمُقْسِطِينَ عِنْدَ
اللهِ عَلَى مَنَابِرَ مِنْ نُورٍ عَنْ يَمِينِ الرَّحْمَنِ عَزَّ وَجَلَّ
وَكِلْتَا يَدَيْهِ يَمِينٌ الَّذِينَ يَعْدِلُونَ فِى حُكْمِهِمْ وَأَهْلِيهِمْ
وَمَا وَلُوا ‘ন্যায়বিচারকারীরা ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট আরশের ডান
পার্শ্বে নূরের আসনে বসবে। যারা দুনিয়াতে তাদের শাসনে ও পরিবারে, যাদের উপর তারা নেতৃত্ব দেয়, সর্বদা ন্যায়বিচার করেছে’।[5]
৩. ইসলামী ভ্রাতৃত্ব সমুন্নত রাখা :
এটাই হ’ল ইসলামী দাওয়াতের রূহ এবং ইসলামী সমাজের ভিত্তি। যার উপরে এই সমাজের
সৌধ নির্মিত হয়। এই চেতনা হারিয়ে গেলে
ইসলামী সমাজের সবকিছু হারিয়ে যাবে। মুসলমানের কেবল নাম বাকী থাকবে। বৈশিষ্ট্য বিলুপ্ত হবে। প্রাণহীন লাশ যেমন কবরে আশ্রয় নেয়। চেতনাহীন জাতি তেমনি
ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়। অতএব সন্ধিকালে ইসলামী ভ্রাতৃত্বের চেতনা সর্বোচ্চ
অগ্রাধিকারে রাখতে হবে। যেন কেউ পরস্পরের ক্ষতি ও অকল্যাণের চিন্তা না করে। এ সময় কোন ব্যক্তি নয়, বরং আল্লাহর রজ্জু কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহকে মযবূত হাতল
হিসাবে হাতে-দাঁতে অাঁকড়ে ধরতে হবে।
সৌধ নির্মিত হয়। এই চেতনা হারিয়ে গেলে
ইসলামী সমাজের সবকিছু হারিয়ে যাবে। মুসলমানের কেবল নাম বাকী থাকবে। বৈশিষ্ট্য বিলুপ্ত হবে। প্রাণহীন লাশ যেমন কবরে আশ্রয় নেয়। চেতনাহীন জাতি তেমনি
ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়। অতএব সন্ধিকালে ইসলামী ভ্রাতৃত্বের চেতনা সর্বোচ্চ
অগ্রাধিকারে রাখতে হবে। যেন কেউ পরস্পরের ক্ষতি ও অকল্যাণের চিন্তা না করে। এ সময় কোন ব্যক্তি নয়, বরং আল্লাহর রজ্জু কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহকে মযবূত হাতল
হিসাবে হাতে-দাঁতে অাঁকড়ে ধরতে হবে।
আল্লাহ বলেন, وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللهِ جَمِيعًا وَلاَ تَفَرَّقُوا، ‘তোমরা সকলে
সমবেতভাবে আল্লাহর রজ্জুকে ধারণ কর এবং পরস্পরে বিচ্ছিন্ন হয়ো না’ (আলে ইমরান ৩/১০৩)। হযরত নু‘মান বিন বাশীর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,تَرَى الْمُؤْمِنِينَ فِى تَرَاحُمِهِمْ وَتَوَادِّهِمْ
وَتَعَاطُفِهِمْ كَمَثَلِ الْجَسَدِ إِذَا اشْتَكَى عُضْوًا تَدَاعَى لَهُ سَائِرُ
جَسَدِهِ بِالسَّهَرِ وَالْحُمَّى– ‘তুমি ঈমানদারগণকে পারস্পরিক সহানুভূতি, বন্ধুত্ব ও দয়াশীলতার ক্ষেত্রে একটি দেহের মত দেখবে। যখন দেহের কোন অঙ্গ
আক্রান্ত হয়, তখন সমস্ত দেহ নিদ্রাহীনতা ও জ্বরে আক্রান্ত হয়’।[6] রাসূল (ছাঃ) বলেন, الْمُؤْمِنُ لِلْمُؤْمِنِ كَالْبُنْيَانِ، يَشُدُّ
بَعْضُهُ بَعْضًا. ثُمَّ شَبَّكَ بَيْنَ أَصَابِعِهِ– ‘এক মুমিন অপর
মুমিনের জন্য ভবন স্বরূপ, যার এক অংশ অপর অংশকে দৃঢ় রাখে। অতঃপর তিনি তাঁর এক
হাতের আঙ্গুল সমূহ অন্য হাতের আঙ্গুল সমূহের মধ্যে প্রবেশ করালেন’।[7] তিনি বলেন,الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ لاَ يَظْلِمُهُ وَلاَ يَخْذُلُهُ وَلاَ
يَحْقِرُهُ ‘এক মুসলিম আরেক মুসলিমের ভাই। সে তাকে যুলুম করে না, লজ্জিত করে না, লাঞ্ছিত করে না’।[8]
সমবেতভাবে আল্লাহর রজ্জুকে ধারণ কর এবং পরস্পরে বিচ্ছিন্ন হয়ো না’ (আলে ইমরান ৩/১০৩)। হযরত নু‘মান বিন বাশীর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,تَرَى الْمُؤْمِنِينَ فِى تَرَاحُمِهِمْ وَتَوَادِّهِمْ
وَتَعَاطُفِهِمْ كَمَثَلِ الْجَسَدِ إِذَا اشْتَكَى عُضْوًا تَدَاعَى لَهُ سَائِرُ
جَسَدِهِ بِالسَّهَرِ وَالْحُمَّى– ‘তুমি ঈমানদারগণকে পারস্পরিক সহানুভূতি, বন্ধুত্ব ও দয়াশীলতার ক্ষেত্রে একটি দেহের মত দেখবে। যখন দেহের কোন অঙ্গ
আক্রান্ত হয়, তখন সমস্ত দেহ নিদ্রাহীনতা ও জ্বরে আক্রান্ত হয়’।[6] রাসূল (ছাঃ) বলেন, الْمُؤْمِنُ لِلْمُؤْمِنِ كَالْبُنْيَانِ، يَشُدُّ
بَعْضُهُ بَعْضًا. ثُمَّ شَبَّكَ بَيْنَ أَصَابِعِهِ– ‘এক মুমিন অপর
মুমিনের জন্য ভবন স্বরূপ, যার এক অংশ অপর অংশকে দৃঢ় রাখে। অতঃপর তিনি তাঁর এক
হাতের আঙ্গুল সমূহ অন্য হাতের আঙ্গুল সমূহের মধ্যে প্রবেশ করালেন’।[7] তিনি বলেন,الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ لاَ يَظْلِمُهُ وَلاَ يَخْذُلُهُ وَلاَ
يَحْقِرُهُ ‘এক মুসলিম আরেক মুসলিমের ভাই। সে তাকে যুলুম করে না, লজ্জিত করে না, লাঞ্ছিত করে না’।[8]
তৃতীয় পক্ষ :
আল্লাহ বলেন,إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوا بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ
وَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ ‘মুমিনগণ
পরস্পরে ভাই ব্যতীত নয়। অতএব তোমরা তোমাদের দু’ভাইয়ের মধ্যে সন্ধি করে দাও। আর আল্লাহকে ভয় কর। তাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হবে’ (হুজুরাত ১০)। অত্র আয়াতে দু’ভাইয়ের মধ্যে সন্ধিকারী একটি আল্লাহভীরু ও
ন্যায়নিষ্ঠ তৃতীয় পক্ষ থাকার অপরিহার্যতা বর্ণিত হয়েছে। যাদের কর্তব্য সম্পর্কে পূর্বের আয়াতে বলা
হয়েছে যে, দু’পক্ষের কোন পক্ষ যদি অপর পক্ষের উপর সীমালংঘন
করে,
তাহ’লে তোমরা ঐ পক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর’। এতে প্রয়োজনে অস্ত্র ধারণের কথা বলা হয়েছে। যেটা হযরত আবুবকর (রাঃ)
করেছিলেন যাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে এবং হযরত আলী (রাঃ) করেছিলেন বিদ্রোহী
খারেজী ও অন্য মুসলমানদের বিরুদ্ধে। কিন্তু সাধ্যমত এটি এড়িয়ে যেতে হবে। কেননা মুসলমানের রক্ত পরস্পরের জন্য হারাম। তাছাড়া আয়াতটি নাযিল
হয়েছিল ক্বোবার দু’দল বিবাদকারী মুসলমানদের লড়াই উপলক্ষে। যারা কেবল হাত, পাথর ইত্যাদি নিয়ে পরস্পরে মারামারিতে লিপ্ত হয়েছিল (বুখারী হা/২৬৯৩) এবং রাসূল (ছাঃ) তাদের বিরুদ্ধে
অস্ত্র ধারণ করেননি।
وَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ ‘মুমিনগণ
পরস্পরে ভাই ব্যতীত নয়। অতএব তোমরা তোমাদের দু’ভাইয়ের মধ্যে সন্ধি করে দাও। আর আল্লাহকে ভয় কর। তাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হবে’ (হুজুরাত ১০)। অত্র আয়াতে দু’ভাইয়ের মধ্যে সন্ধিকারী একটি আল্লাহভীরু ও
ন্যায়নিষ্ঠ তৃতীয় পক্ষ থাকার অপরিহার্যতা বর্ণিত হয়েছে। যাদের কর্তব্য সম্পর্কে পূর্বের আয়াতে বলা
হয়েছে যে, দু’পক্ষের কোন পক্ষ যদি অপর পক্ষের উপর সীমালংঘন
করে,
তাহ’লে তোমরা ঐ পক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর’। এতে প্রয়োজনে অস্ত্র ধারণের কথা বলা হয়েছে। যেটা হযরত আবুবকর (রাঃ)
করেছিলেন যাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে এবং হযরত আলী (রাঃ) করেছিলেন বিদ্রোহী
খারেজী ও অন্য মুসলমানদের বিরুদ্ধে। কিন্তু সাধ্যমত এটি এড়িয়ে যেতে হবে। কেননা মুসলমানের রক্ত পরস্পরের জন্য হারাম। তাছাড়া আয়াতটি নাযিল
হয়েছিল ক্বোবার দু’দল বিবাদকারী মুসলমানদের লড়াই উপলক্ষে। যারা কেবল হাত, পাথর ইত্যাদি নিয়ে পরস্পরে মারামারিতে লিপ্ত হয়েছিল (বুখারী হা/২৬৯৩) এবং রাসূল (ছাঃ) তাদের বিরুদ্ধে
অস্ত্র ধারণ করেননি।
তাছাড়া তিনি বিদায় হজ্জের ভাষণে উম্মতকে সাবধান করে গেছেন,لاَ تَرْجِعُوا بَعْدِى
كُفَّارًا يَضْرِبُ بَعْضُكُمْ رِقَابَ بَعْضٍ ‘তোমরা আমার
পরে কুফরীতে ফিরে যেয়ো না। তোমরা একে অপরের গর্দান মেরো না’।[9] তিনি বলেছেন, سِبَابُ الْمُسْلِمِ فُسُوقٌ، وَقِتَالُهُ كُفْرٌ
‘মুসলমানকে গালি দেওয়া ফাসেকী এবং তার সাথে যুদ্ধ করা কুফরী’।[10]
كُفَّارًا يَضْرِبُ بَعْضُكُمْ رِقَابَ بَعْضٍ ‘তোমরা আমার
পরে কুফরীতে ফিরে যেয়ো না। তোমরা একে অপরের গর্দান মেরো না’।[9] তিনি বলেছেন, سِبَابُ الْمُسْلِمِ فُسُوقٌ، وَقِتَالُهُ كُفْرٌ
‘মুসলমানকে গালি দেওয়া ফাসেকী এবং তার সাথে যুদ্ধ করা কুফরী’।[10]
আল্লাহ বলেন,وَمَنْ يَقْتُلْ مُؤْمِنًا مُتَعَمِّدًا فَجَزَاؤُهُ جَهَنَّمُ
خَالِدًا فِيهَا وَغَضِبَ اللهُ عَلَيْهِ وَلَعَنَهُ وَأَعَدَّ لَهُ عَذَابًا
عَظِيمًا ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুমিনকে হত্যা করে, তার শাস্তি হ’ল জাহান্নাম। সেখানেই সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন, তাকে অভিসম্পাৎ করেছেন এবং তার জন্য ভীষণ শাস্তি প্রস্ত্তত
রেখেছেন’ (নিসা ৪/৯৩)। কিন্তু এর দ্বারা
বিদ্রোহী ও সমাজ বিরোধীদের ছাড় দেওয়া বুঝায় না। কেননা অন্য হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَنْ حَمَلَ عَلَيْنَا
السِّلاَحَ فَلَيْسَ مِنَّا ‘যে জাতি আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র উত্তোলন করল, সে আমাদের দলভুক্ত নয়’।[11] অর্থাৎ
অন্যায়ভাবে যে বিদ্রোহ করে, সে আর মুসলিম সমাজভুক্ত থাকে না। তাকে শাস্তি পেতেই
হবে। আর এটা না থাকলে তো
পাপীরা পাপ করেই যাবে। তাদের উপর দন্ডবিধি কার্যকর করা যাবে না। অতএব সামাজিক শৃংখলা রক্ষার জন্য ‘দুষ্টের দমন ও
শিষ্টের পালন’ নীতি বজায় রাখতে হবে।
خَالِدًا فِيهَا وَغَضِبَ اللهُ عَلَيْهِ وَلَعَنَهُ وَأَعَدَّ لَهُ عَذَابًا
عَظِيمًا ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুমিনকে হত্যা করে, তার শাস্তি হ’ল জাহান্নাম। সেখানেই সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন, তাকে অভিসম্পাৎ করেছেন এবং তার জন্য ভীষণ শাস্তি প্রস্ত্তত
রেখেছেন’ (নিসা ৪/৯৩)। কিন্তু এর দ্বারা
বিদ্রোহী ও সমাজ বিরোধীদের ছাড় দেওয়া বুঝায় না। কেননা অন্য হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَنْ حَمَلَ عَلَيْنَا
السِّلاَحَ فَلَيْسَ مِنَّا ‘যে জাতি আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র উত্তোলন করল, সে আমাদের দলভুক্ত নয়’।[11] অর্থাৎ
অন্যায়ভাবে যে বিদ্রোহ করে, সে আর মুসলিম সমাজভুক্ত থাকে না। তাকে শাস্তি পেতেই
হবে। আর এটা না থাকলে তো
পাপীরা পাপ করেই যাবে। তাদের উপর দন্ডবিধি কার্যকর করা যাবে না। অতএব সামাজিক শৃংখলা রক্ষার জন্য ‘দুষ্টের দমন ও
শিষ্টের পালন’ নীতি বজায় রাখতে হবে।
এজন্য প্রয়োজন তৃতীয় পক্ষকে শক্তিশালী ও ন্যায়বিচারক হওয়া। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মাদানী
জীবনে এটি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। অথচ মাক্কী জীবনে তিনি দুর্বল থাকায় সক্ষম হননি। যুগে যুগে প্রতি
সমাজে শৃংখলা রক্ষার জন্য সামাজিক শালিশী ব্যবস্থা ও রাষ্ট্রীয় আদালতের ব্যবস্থা
রয়েছে। এ যুগে জাতিসংঘ, ওআইসি প্রভৃতি সংস্থা রয়েছে। কিন্তু দুর্বলতার কারণে তারা তাদের যথার্থ
ভূমিকা পালনে সবসময় সক্ষম হয় না। অথচ ইসলামী সমাজে এটি অপরিহার্য বিষয়। ক্বোবায় মসজিদে যেরার ধ্বংস করার ঘটনা
এক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
জীবনে এটি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। অথচ মাক্কী জীবনে তিনি দুর্বল থাকায় সক্ষম হননি। যুগে যুগে প্রতি
সমাজে শৃংখলা রক্ষার জন্য সামাজিক শালিশী ব্যবস্থা ও রাষ্ট্রীয় আদালতের ব্যবস্থা
রয়েছে। এ যুগে জাতিসংঘ, ওআইসি প্রভৃতি সংস্থা রয়েছে। কিন্তু দুর্বলতার কারণে তারা তাদের যথার্থ
ভূমিকা পালনে সবসময় সক্ষম হয় না। অথচ ইসলামী সমাজে এটি অপরিহার্য বিষয়। ক্বোবায় মসজিদে যেরার ধ্বংস করার ঘটনা
এক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করে এসে প্রথম ক্বোবার বনু ‘আমর বিন ‘আওফ গোত্রের
নেতা কুলছূম বিন হিদাম-এর বাড়ীতে আশ্রয় নেন। অতঃপর তাদের দেওয়া মাটিতে ‘মসজিদে ক্বোবা’ নির্মাণ করেন। যা অদ্যাবধি বর্তমান
আছে। কিন্তু বনু ‘আমরের ভাইদের
গোত্র বনু গুনুম বিন ‘আওফ-এর লোকেরা এতে হিংসায় জ্বলে ওঠে। তারা ‘মদীনার দরবেশ’ বলে খ্যাত বনু আবু ‘আমের আর-রাহেব-এর
কুপরামর্শে ৯ম হিজরীতে ক্বোবায় উক্ত মসজিদের অনতিদূরে আরেকটি মসজিদ নির্মাণ করে। একাজে ১২জন মুনাফিক
তাদেরকে সহযোগিতা করে। তারা এসে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে উক্ত মসজিদে এক ওয়াক্ত ছালাত আদায় করার ও
বরকতের দো‘আ করার আবেদন জানায়। এ সময় তারা পৃথক মসজিদ করার অজুহাত হিসাবে লোকদের
কর্মব্যস্ততা, অসুখ-বিসুখ এবং বর্ষা-বৃষ্টি ইত্যাদির কথা বলে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদের
বলেন,إِنِّي عَلَى جَنَاحِ سَفَرٍ
وَحَالِ شُغِلٍ وَلَوْ قَدْ قَدِمْنَا لأَتَيْنَاكُمْ إِنَّ شَاءَ اللهُ
فَصَلَّيْنَا لَكُمْ فِيهِ– ‘আমি এখন সফরের মুখে এবং অত্যন্ত ব্যস্ত অবস্থায় আছি। যদি আমরা ফিরে আসি, তাহ’লে ইনশাআল্লাহ তোমাদের ওখানে যাব এবং সেখানে ছালাত আদায় করব’।
নেতা কুলছূম বিন হিদাম-এর বাড়ীতে আশ্রয় নেন। অতঃপর তাদের দেওয়া মাটিতে ‘মসজিদে ক্বোবা’ নির্মাণ করেন। যা অদ্যাবধি বর্তমান
আছে। কিন্তু বনু ‘আমরের ভাইদের
গোত্র বনু গুনুম বিন ‘আওফ-এর লোকেরা এতে হিংসায় জ্বলে ওঠে। তারা ‘মদীনার দরবেশ’ বলে খ্যাত বনু আবু ‘আমের আর-রাহেব-এর
কুপরামর্শে ৯ম হিজরীতে ক্বোবায় উক্ত মসজিদের অনতিদূরে আরেকটি মসজিদ নির্মাণ করে। একাজে ১২জন মুনাফিক
তাদেরকে সহযোগিতা করে। তারা এসে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে উক্ত মসজিদে এক ওয়াক্ত ছালাত আদায় করার ও
বরকতের দো‘আ করার আবেদন জানায়। এ সময় তারা পৃথক মসজিদ করার অজুহাত হিসাবে লোকদের
কর্মব্যস্ততা, অসুখ-বিসুখ এবং বর্ষা-বৃষ্টি ইত্যাদির কথা বলে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদের
বলেন,إِنِّي عَلَى جَنَاحِ سَفَرٍ
وَحَالِ شُغِلٍ وَلَوْ قَدْ قَدِمْنَا لأَتَيْنَاكُمْ إِنَّ شَاءَ اللهُ
فَصَلَّيْنَا لَكُمْ فِيهِ– ‘আমি এখন সফরের মুখে এবং অত্যন্ত ব্যস্ত অবস্থায় আছি। যদি আমরা ফিরে আসি, তাহ’লে ইনশাআল্লাহ তোমাদের ওখানে যাব এবং সেখানে ছালাত আদায় করব’।
আবু ‘আমের আর-রাহেব-এর প্ররোচনায় রোম সম্রাট মদীনায় হামলা করার
প্রস্ত্ততি নিলেও পরে তিনি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। ফলে বিনা যুদ্ধে বিজয়ীর বেশে দেড় মাসাধিক কাল
পর রাসূল (ছাঃ) তাবূক থেকে ফিরে আসেন। অতঃপর সেখানে যাওয়ার মনস্থ করলে আল্লাহর পক্ষ থেকে সূরা
তওবা ১০৭-০৮ আয়াত নাযিল হয়। যেখানে বলা হয়, ‘আরেক দল লোক
রয়েছে যারা মসজিদ নির্মাণ করে (ইসলামের) ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে, যিদ ও কুফরীর তাড়নায়, মুমিনদের
মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির জন্য এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে পূর্ব থেকেই
যুদ্ধকারীদের ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহারের জন্য। অথচ তারা কসম করে বলে যে, কল্যাণ ব্যতীত আমরা অন্য কিছুই কামনা করি না। পক্ষান্তরে আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, ওরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী’। ‘তুমি সেখানে কখনো দাঁড়াবে না। অবশ্যই যে মসজিদ
প্রথম দিন থেকে তাক্বওয়ার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে, সেটাই তোমার (ছালাতের জন্য) দাঁড়াবার যথাযোগ্য স্থান। সেখানে এমন সব লোক
রয়েছে,
যারা উত্তমরূপে পরিশুদ্ধ হওয়াকে ভালবাসে। বস্ত্ততঃ আল্লাহ
পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালবাসেন’ (তওবা ৯/১০৭-০৮)। ইতিহাসে এটি ‘মসজিদে যেরার’ (مَسْجِدُ الضِّرَار) বা ‘ক্ষতিকর মসজিদ’ নামে প্রসিদ্ধ।
প্রস্ত্ততি নিলেও পরে তিনি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। ফলে বিনা যুদ্ধে বিজয়ীর বেশে দেড় মাসাধিক কাল
পর রাসূল (ছাঃ) তাবূক থেকে ফিরে আসেন। অতঃপর সেখানে যাওয়ার মনস্থ করলে আল্লাহর পক্ষ থেকে সূরা
তওবা ১০৭-০৮ আয়াত নাযিল হয়। যেখানে বলা হয়, ‘আরেক দল লোক
রয়েছে যারা মসজিদ নির্মাণ করে (ইসলামের) ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে, যিদ ও কুফরীর তাড়নায়, মুমিনদের
মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির জন্য এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে পূর্ব থেকেই
যুদ্ধকারীদের ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহারের জন্য। অথচ তারা কসম করে বলে যে, কল্যাণ ব্যতীত আমরা অন্য কিছুই কামনা করি না। পক্ষান্তরে আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, ওরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী’। ‘তুমি সেখানে কখনো দাঁড়াবে না। অবশ্যই যে মসজিদ
প্রথম দিন থেকে তাক্বওয়ার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে, সেটাই তোমার (ছালাতের জন্য) দাঁড়াবার যথাযোগ্য স্থান। সেখানে এমন সব লোক
রয়েছে,
যারা উত্তমরূপে পরিশুদ্ধ হওয়াকে ভালবাসে। বস্ত্ততঃ আল্লাহ
পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালবাসেন’ (তওবা ৯/১০৭-০৮)। ইতিহাসে এটি ‘মসজিদে যেরার’ (مَسْجِدُ الضِّرَار) বা ‘ক্ষতিকর মসজিদ’ নামে প্রসিদ্ধ।
উক্ত আয়াত নাযিলের পর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মালেক বিন দুখশুম ও মা‘আন বিন ‘আদী, অন্য বর্ণনায় ‘আমের বিন সাকান ও হামযা (রাঃ)-এর হত্যাকারী
ওয়াহশী সহ মোট চারজনকে ডাকলেন এবং বললেন, انْطَلِقُوا إِلَى هَذَا الْمَسْجِدِ الظَّالِمِ
أَهْلُهُ فَاهْدِمُوهُ وَأَحْرِقُوهُ ‘তোমরা ঐ মসজিদের দিকে যাও, যার অধিবাসীরা যালেম। তোমরা ওটাকে গুঁড়িয়ে দাও ও জ্বালিয়ে দাও’। যা সঙ্গে সঙ্গে পালিত হয়। উক্ত ১২ জন মুনাফিকের নামও ইতিহাসে এসেছে।[12] অভিশপ্ত ঐ মসজিদের
স্থানটি অদ্যাবধি অনাবাদী ও পরিত্যক্ত হিসাবে রয়েছে। সেখানে কোন ঘাস পর্যন্ত জন্মে না।
ওয়াহশী সহ মোট চারজনকে ডাকলেন এবং বললেন, انْطَلِقُوا إِلَى هَذَا الْمَسْجِدِ الظَّالِمِ
أَهْلُهُ فَاهْدِمُوهُ وَأَحْرِقُوهُ ‘তোমরা ঐ মসজিদের দিকে যাও, যার অধিবাসীরা যালেম। তোমরা ওটাকে গুঁড়িয়ে দাও ও জ্বালিয়ে দাও’। যা সঙ্গে সঙ্গে পালিত হয়। উক্ত ১২ জন মুনাফিকের নামও ইতিহাসে এসেছে।[12] অভিশপ্ত ঐ মসজিদের
স্থানটি অদ্যাবধি অনাবাদী ও পরিত্যক্ত হিসাবে রয়েছে। সেখানে কোন ঘাস পর্যন্ত জন্মে না।
উল্লেখ্য যে, ঐ যেরার মসজিদ নির্মাণের মূল নায়ক ছিলেন মদীনার
আউস গোত্রের অন্যতম নেতা ও শ্রেষ্ঠ পুরোহিত আবু ‘আমের আর-রাহেব। যিনি বনু ‘আমর বিন ‘আওফের বিরুদ্ধে
বনু গুনুম বিন ‘আওফদের পারস্পরিক ভ্রাতৃ হিংসাকে তার কপট উদ্দেশ্যে কাজে
লাগিয়েছিলেন। তিনি মুনাফিকদেরকে
আশ্বাস দিয়েছিলেন এই মর্মে যে, তোমরা একটি মসজিদ
নির্মাণ কর এবং সেখানে সাধ্যমত শক্তি ও অস্ত্র জমা কর। আমি রোম সম্রাট ক্বায়ছার-এর নিকটে যাচ্ছি। অতঃপর তার নিকট থেকে
রোমক সেনাবাহিনী এনে হামলা চালিয়ে মদীনা থেকে মুহাম্মাদকে বহিষ্কার করে দেব’ (তাফসীর কুরতুবী)। এই আবু ‘আমেরের পুত্র ছিলেন বিখ্যাত তরুণ ছাহাবী হানযালা, যিনি ওহোদের যুদ্ধে শহীদ হন এবং যার লাশ ফেরেশতারা গোসল
দিয়েছিল। সেকারণ তিনি ইসলামের
ইতিহাসে ‘গাসীলুল মালায়েকাহ’ নামে খ্যাত। যদি ঐ সময় অর্থাৎ ৯ম হিজরীতে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
শক্তিশালী অবস্থানে না থাকতেন এবং ন্যায়বিচারক না হ’তেন, তাহ’লে তাঁর পক্ষে ‘মসজিদে যেরার’ ধ্বংস করা সম্ভব হ’ত না।
আউস গোত্রের অন্যতম নেতা ও শ্রেষ্ঠ পুরোহিত আবু ‘আমের আর-রাহেব। যিনি বনু ‘আমর বিন ‘আওফের বিরুদ্ধে
বনু গুনুম বিন ‘আওফদের পারস্পরিক ভ্রাতৃ হিংসাকে তার কপট উদ্দেশ্যে কাজে
লাগিয়েছিলেন। তিনি মুনাফিকদেরকে
আশ্বাস দিয়েছিলেন এই মর্মে যে, তোমরা একটি মসজিদ
নির্মাণ কর এবং সেখানে সাধ্যমত শক্তি ও অস্ত্র জমা কর। আমি রোম সম্রাট ক্বায়ছার-এর নিকটে যাচ্ছি। অতঃপর তার নিকট থেকে
রোমক সেনাবাহিনী এনে হামলা চালিয়ে মদীনা থেকে মুহাম্মাদকে বহিষ্কার করে দেব’ (তাফসীর কুরতুবী)। এই আবু ‘আমেরের পুত্র ছিলেন বিখ্যাত তরুণ ছাহাবী হানযালা, যিনি ওহোদের যুদ্ধে শহীদ হন এবং যার লাশ ফেরেশতারা গোসল
দিয়েছিল। সেকারণ তিনি ইসলামের
ইতিহাসে ‘গাসীলুল মালায়েকাহ’ নামে খ্যাত। যদি ঐ সময় অর্থাৎ ৯ম হিজরীতে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
শক্তিশালী অবস্থানে না থাকতেন এবং ন্যায়বিচারক না হ’তেন, তাহ’লে তাঁর পক্ষে ‘মসজিদে যেরার’ ধ্বংস করা সম্ভব হ’ত না।
যুগে যুগে এভাবে ধর্মের দোহাই দিয়ে মুনাফিকরা এবং দুষ্টমতি আলেম, সমাজনেতা ও অহংকারী ধনী ব্যক্তিরা বহু মসজিদ তৈরী করেছে। যা কখনোই তাক্বওয়ার
উপরে প্রতিষ্ঠিত নয়। যার মাধ্যমে ইসলামী সমাজে কেবলই বিদ্বেষ ও বিভক্তি সৃষ্টি হয়েছে এবং এসব
মসজিদগুলি ইবাদতখানার বদলে বিদ‘আতখানায় পরিণত হয়েছে। তাক্বওয়াশীলদের বিরুদ্ধে সেগুলি ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। ইমাম কুরতুবী বলেন,قَالَ عُلَمَاؤُنَا: وَكُلُّ
مَسْجِدٍ بُنِيَ عَلَى ضِرَارٍ أَوْ رِيَاءٍ وَسُمْعَةٍ فَهُوَ فِي حُكْمِ
مَسْجِدِ الضِّرَارِ لاَ تَجُوزُ الصَّلاَةُ فِيهِ– ‘আমাদের
বিদ্বানগণ বলেন, যে সকল মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ক্ষতির
উদ্দেশ্যে অথবা রিয়া ও শ্রুতির উদ্দেশ্যে, সেটি যেরার
মসজিদের হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। তাতে ছালাত আদায় করা জায়েয নয়’ (কুরতুবী, তাফসীর সূরা তওবা ১০৭ আয়াত)।
উপরে প্রতিষ্ঠিত নয়। যার মাধ্যমে ইসলামী সমাজে কেবলই বিদ্বেষ ও বিভক্তি সৃষ্টি হয়েছে এবং এসব
মসজিদগুলি ইবাদতখানার বদলে বিদ‘আতখানায় পরিণত হয়েছে। তাক্বওয়াশীলদের বিরুদ্ধে সেগুলি ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। ইমাম কুরতুবী বলেন,قَالَ عُلَمَاؤُنَا: وَكُلُّ
مَسْجِدٍ بُنِيَ عَلَى ضِرَارٍ أَوْ رِيَاءٍ وَسُمْعَةٍ فَهُوَ فِي حُكْمِ
مَسْجِدِ الضِّرَارِ لاَ تَجُوزُ الصَّلاَةُ فِيهِ– ‘আমাদের
বিদ্বানগণ বলেন, যে সকল মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ক্ষতির
উদ্দেশ্যে অথবা রিয়া ও শ্রুতির উদ্দেশ্যে, সেটি যেরার
মসজিদের হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। তাতে ছালাত আদায় করা জায়েয নয়’ (কুরতুবী, তাফসীর সূরা তওবা ১০৭ আয়াত)।
উল্লেখ্য যে, ক্বোবার ‘যেরার মসজিদ’ ধ্বংস করার ঘটনায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছিলেন
দ্বিতীয় পক্ষ। কিন্তু বিশ্বনবী
হিসাবে তিনি ছিলেন নিঃসন্দেহে তৃতীয় পক্ষ। তাই তাঁর নির্দেশ মেনে নেওয়া সকলের জন্য ছিল অপরিহার্য।
দ্বিতীয় পক্ষ। কিন্তু বিশ্বনবী
হিসাবে তিনি ছিলেন নিঃসন্দেহে তৃতীয় পক্ষ। তাই তাঁর নির্দেশ মেনে নেওয়া সকলের জন্য ছিল অপরিহার্য।
বস্ত্ততঃ শক্তিশালী ও ন্যায়বিচারক তৃতীয় পক্ষ না থাকাটাই সমাজে অধিকাংশ অন্যায়
ও বিশৃংখলার জন্য দায়ী।
ও বিশৃংখলার জন্য দায়ী।
সংশয় নিরসন :
প্রশ্ন আসে যে, হযরত ওছমান ও আলী (রাঃ)-এর খেলাফতকালে ছাহাবীগণ
পরস্পরে যুদ্ধে লিপ্ত হন, তখন যারা নিরপেক্ষ ছিলেন এবং উভয়পক্ষে
সন্ধিকারীর ভূমিকা পালন করেননি, তাদের বিষয়টি কেমন
হবে?
এর জবাব এই যে, বিদ্রোহী দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা সকলের জন্য ফরয নয়। বরং একদল করলে অপরের জন্য উক্ত ফরয আদায় হয়ে যায়। যেমন বিদ্রোহী দলের বিরুদ্ধে আলী (রাঃ)-এর যুদ্ধের সময় সা‘দ বিন আবু
ওয়াকক্বাছ, আব্দুল্লাহ বিন ওমর, মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ, উসামা বিন
যায়েদ প্রমুখ ছাহাবী যুদ্ধ করেননি। পরে তারা সবাই খলীফা আলী (রাঃ)-এর নিকট ওযর পেশ করেন এবং
তিনি তা কবুল করেন। বর্ণিত হয়েছে যে, মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর উপর খেলাফত সোপর্দ করার পর তিনি সা‘দ বিন আবু
ওয়াকক্বাছ (রাঃ)-এর নিরপেক্ষ ভূমিকার বিষয়ে অভিযোগ করে বলেন, আপনি তৃতীয় পক্ষ হয়ে মীমাংসাও করেননি বা বিদ্রোহী দলের
বিরুদ্ধে যুদ্ধও করেননি। জবাবে সা‘দ তাঁকে বলেন, বিদ্রোহী দলের
বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করায় আমি লজ্জিত’। ইবনু ওমর (রাঃ) যুদ্ধ
করেনি এজন্য যে, তিনি এটাকে রাজনৈতিক বিষয়ভুক্ত গণ্য করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন,يَمْنَعُنِى أَنَّ اللهَ حَرَّمَ
دَمَ أَخِى ‘আমাকে যুদ্ধ থেকে বিরত রেখেছে এ বিষয়টি যে, আল্লাহ আমার উপর আমার ভাইয়ের রক্ত হারাম করেছেন’।[13] তিনি আরও বলেন, كَانَ مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
يُقَاتِلُ الْمُشْرِكِينَ، وَكَانَ الدُّخُولُ عَلَيْهِمْ فِتْنَةً، وَلَيْسَ
كَقِتَالِكُمْ عَلَى الْمُلْكِ– ‘মুহাম্মাদ (ছাঃ) যুদ্ধ করেছিলেন মুশরিকদের বিরুদ্ধে। আর তাদের বিরুদ্ধে
যুদ্ধটাই ছিল ফিৎনা। তোমাদের মত শাসন ক্ষমতা লাভের জন্য যুদ্ধ নয়’।[14] তবে জমহূর বিদ্বানগণের মত এই যে, ক্ষমতা দখলের
লড়াইকে ফিৎনা বলা হয়, বিদ্রোহীকে অনুগত করার লড়াইকে নয়’।[15]
পরস্পরে যুদ্ধে লিপ্ত হন, তখন যারা নিরপেক্ষ ছিলেন এবং উভয়পক্ষে
সন্ধিকারীর ভূমিকা পালন করেননি, তাদের বিষয়টি কেমন
হবে?
এর জবাব এই যে, বিদ্রোহী দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা সকলের জন্য ফরয নয়। বরং একদল করলে অপরের জন্য উক্ত ফরয আদায় হয়ে যায়। যেমন বিদ্রোহী দলের বিরুদ্ধে আলী (রাঃ)-এর যুদ্ধের সময় সা‘দ বিন আবু
ওয়াকক্বাছ, আব্দুল্লাহ বিন ওমর, মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ, উসামা বিন
যায়েদ প্রমুখ ছাহাবী যুদ্ধ করেননি। পরে তারা সবাই খলীফা আলী (রাঃ)-এর নিকট ওযর পেশ করেন এবং
তিনি তা কবুল করেন। বর্ণিত হয়েছে যে, মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর উপর খেলাফত সোপর্দ করার পর তিনি সা‘দ বিন আবু
ওয়াকক্বাছ (রাঃ)-এর নিরপেক্ষ ভূমিকার বিষয়ে অভিযোগ করে বলেন, আপনি তৃতীয় পক্ষ হয়ে মীমাংসাও করেননি বা বিদ্রোহী দলের
বিরুদ্ধে যুদ্ধও করেননি। জবাবে সা‘দ তাঁকে বলেন, বিদ্রোহী দলের
বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করায় আমি লজ্জিত’। ইবনু ওমর (রাঃ) যুদ্ধ
করেনি এজন্য যে, তিনি এটাকে রাজনৈতিক বিষয়ভুক্ত গণ্য করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন,يَمْنَعُنِى أَنَّ اللهَ حَرَّمَ
دَمَ أَخِى ‘আমাকে যুদ্ধ থেকে বিরত রেখেছে এ বিষয়টি যে, আল্লাহ আমার উপর আমার ভাইয়ের রক্ত হারাম করেছেন’।[13] তিনি আরও বলেন, كَانَ مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
يُقَاتِلُ الْمُشْرِكِينَ، وَكَانَ الدُّخُولُ عَلَيْهِمْ فِتْنَةً، وَلَيْسَ
كَقِتَالِكُمْ عَلَى الْمُلْكِ– ‘মুহাম্মাদ (ছাঃ) যুদ্ধ করেছিলেন মুশরিকদের বিরুদ্ধে। আর তাদের বিরুদ্ধে
যুদ্ধটাই ছিল ফিৎনা। তোমাদের মত শাসন ক্ষমতা লাভের জন্য যুদ্ধ নয়’।[14] তবে জমহূর বিদ্বানগণের মত এই যে, ক্ষমতা দখলের
লড়াইকে ফিৎনা বলা হয়, বিদ্রোহীকে অনুগত করার লড়াইকে নয়’।[15]
আর উসামা বিন যায়েদ (রাঃ) যুদ্ধ করেননি এজন্য যে, তিনি তরুণ বয়সে যুদ্ধকালে এক শত্রু সেনাকে হত্যা করেছিলেন। অথচ সে কালেমা
শাহাদাত পাঠ করেছিল। তিনি ভেবেছিলেন সে বাঁচার জন্য ভান করেছে। এতে রাসূল (ছাঃ) ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ হন এবং বলেন, তুমি তার হৃদয় ফেড়ে দেখলে না কেন? ক্বিয়ামতের দিন যখন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এসে তোমার সামনে
দাঁড়াবে, তখন তুমি কি জবাব দিবে? একথা তিনি বারবার বলতে থাকেন (কঠিন পরিণতি বুঝানোর জন্য)। এই ঘটনার পর উসামা
কসম করেন যে, তিনি কখনোই আর কোন মুসলমানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
করবেন না’।[16]
শাহাদাত পাঠ করেছিল। তিনি ভেবেছিলেন সে বাঁচার জন্য ভান করেছে। এতে রাসূল (ছাঃ) ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ হন এবং বলেন, তুমি তার হৃদয় ফেড়ে দেখলে না কেন? ক্বিয়ামতের দিন যখন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এসে তোমার সামনে
দাঁড়াবে, তখন তুমি কি জবাব দিবে? একথা তিনি বারবার বলতে থাকেন (কঠিন পরিণতি বুঝানোর জন্য)। এই ঘটনার পর উসামা
কসম করেন যে, তিনি কখনোই আর কোন মুসলমানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
করবেন না’।[16]
বস্ত্ততঃ কিছু ছাহাবীর নিরপেক্ষ থাকা এবং তৃতীয় পক্ষ হিসাবে মীমাংসাকারীর
ভূমিকা পালন না করাটা ছিল তাদের সাময়িক ইজতিহাদী বিষয়। এটি সার্বিক ও স্থায়ী কোন মূলনীতি নয়। তাছাড়া অনেক সময়
পরিবেশ-পরিস্থিতির উপর অনেক কিছু নির্ভর করে। যখন কিছু করার থাকে না। অতএব ছাহাবীগণের বিষয়ে চুপ থাকাটাই যথার্থ রীতি
এবং এটাই হ’ল আহলে সুন্নাত আহলেহাদীছের গৃহীত নীতি।
ভূমিকা পালন না করাটা ছিল তাদের সাময়িক ইজতিহাদী বিষয়। এটি সার্বিক ও স্থায়ী কোন মূলনীতি নয়। তাছাড়া অনেক সময়
পরিবেশ-পরিস্থিতির উপর অনেক কিছু নির্ভর করে। যখন কিছু করার থাকে না। অতএব ছাহাবীগণের বিষয়ে চুপ থাকাটাই যথার্থ রীতি
এবং এটাই হ’ল আহলে সুন্নাত আহলেহাদীছের গৃহীত নীতি।
ইসলামী সমাজে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব সৃষ্টির অন্যতম প্রধান কারণ হ’ল পরস্পরকে
উপহাস করা ও মনদ লকবে ডাকা। এ বিষয়ে নিষেধ করে আল্লাহ নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল করেন।-
উপহাস করা ও মনদ লকবে ডাকা। এ বিষয়ে নিষেধ করে আল্লাহ নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল করেন।-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لاَ يَسْخَرْ قَوْمٌ مِنْ
قَوْمٍ عَسَى أَنْ يَكُونُوا خَيْرًا مِنْهُمْ وَلاَ نِسَاءٌ مِنْ نِسَاءٍ عَسَى
أَنْ يَكُنَّ خَيْرًا مِنْهُنَّ وَلاَ تَلْمِزُوا أَنْفُسَكُمْ وَلاَ تَنَابَزُوا
بِالْأَلْقَابِ بِئْسَ الِاسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الْإِيمَانِ وَمَنْ لَمْ يَتُبْ
فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ– ‘হে বিশ্বাসীগণ! কোন সম্প্রদায় যেন কোন সম্প্রদায়কে উপহাস না
করে। হ’তে পারে তারা
তাদের চাইতে উত্তম। আর নারীরা যেন
নারীদের উপহাস না করে। হ’তে পারে তারা তাদের চাইতে উত্তম। তোমরা পরস্পরের দোষ বর্ণনা করো না এবং একে অপরকে মন্দ লকবে
ডেকো না। বস্ত্ততঃ ঈমান আনার
পর তাকে মন্দ নামে ডাকা হ’ল ফাসেকী কাজ। আর যারা এ থেকে তওবা করে না, তারা সীমালংঘনকারী’ (হুজুরাত ৪৯/১১)।
قَوْمٍ عَسَى أَنْ يَكُونُوا خَيْرًا مِنْهُمْ وَلاَ نِسَاءٌ مِنْ نِسَاءٍ عَسَى
أَنْ يَكُنَّ خَيْرًا مِنْهُنَّ وَلاَ تَلْمِزُوا أَنْفُسَكُمْ وَلاَ تَنَابَزُوا
بِالْأَلْقَابِ بِئْسَ الِاسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الْإِيمَانِ وَمَنْ لَمْ يَتُبْ
فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ– ‘হে বিশ্বাসীগণ! কোন সম্প্রদায় যেন কোন সম্প্রদায়কে উপহাস না
করে। হ’তে পারে তারা
তাদের চাইতে উত্তম। আর নারীরা যেন
নারীদের উপহাস না করে। হ’তে পারে তারা তাদের চাইতে উত্তম। তোমরা পরস্পরের দোষ বর্ণনা করো না এবং একে অপরকে মন্দ লকবে
ডেকো না। বস্ত্ততঃ ঈমান আনার
পর তাকে মন্দ নামে ডাকা হ’ল ফাসেকী কাজ। আর যারা এ থেকে তওবা করে না, তারা সীমালংঘনকারী’ (হুজুরাত ৪৯/১১)।
অত্র আয়াতে মানব সমাজের মৌলিক কয়েকটি ত্রুটি উল্লেখ করে তা থেকে সাবধান করা
হয়েছে। যেমন অন্য
সম্প্রদায়কে উপহাস করা। এখানে ব্যক্তি না বলে সম্প্রদায় বলার কারণ ব্যক্তির দোষে সম্প্রদায়ের বদনাম হয়
এবং ব্যক্তির পক্ষে সম্প্রদায় এগিয়ে আসে। ফলে ব্যক্তি ও সম্প্রদায় পরস্পরে অবিচ্ছিন্ন। قَوْمٌ শব্দটির
উৎপত্তিই হয়েছে قِيَامٌ (দাঁড়ানো) থেকে।لِأَنَّهُمْ يَقُومُونَ مَعَ دَاعِيهِمْ فِي الشَّدَائِدِ
‘কারণ তাদের কারু বিপদে সবাই তাদের আহবানকারীর সঙ্গে দাঁড়িয়ে যায়’। সেখান থেকে প্রত্যেক সম্প্রদায় ও সংগঠনের জন্য এটি ব্যবহৃত
হয়। যদিও সকলে একত্রে না
দাঁড়ায়’ (কুরতুবী)। ‘সম্প্রদায়’ বলার পর ‘নারীরা’ বলা হয়েছে এ বিষয়ে ইঙ্গিত করার জন্য এবং সাবধান করার জন্য
যে, তাদের মধ্যে পরস্পরে উপহাস করার প্রবণতাটা বেশী (কুরতুবী)।
হয়েছে। যেমন অন্য
সম্প্রদায়কে উপহাস করা। এখানে ব্যক্তি না বলে সম্প্রদায় বলার কারণ ব্যক্তির দোষে সম্প্রদায়ের বদনাম হয়
এবং ব্যক্তির পক্ষে সম্প্রদায় এগিয়ে আসে। ফলে ব্যক্তি ও সম্প্রদায় পরস্পরে অবিচ্ছিন্ন। قَوْمٌ শব্দটির
উৎপত্তিই হয়েছে قِيَامٌ (দাঁড়ানো) থেকে।لِأَنَّهُمْ يَقُومُونَ مَعَ دَاعِيهِمْ فِي الشَّدَائِدِ
‘কারণ তাদের কারু বিপদে সবাই তাদের আহবানকারীর সঙ্গে দাঁড়িয়ে যায়’। সেখান থেকে প্রত্যেক সম্প্রদায় ও সংগঠনের জন্য এটি ব্যবহৃত
হয়। যদিও সকলে একত্রে না
দাঁড়ায়’ (কুরতুবী)। ‘সম্প্রদায়’ বলার পর ‘নারীরা’ বলা হয়েছে এ বিষয়ে ইঙ্গিত করার জন্য এবং সাবধান করার জন্য
যে, তাদের মধ্যে পরস্পরে উপহাস করার প্রবণতাটা বেশী (কুরতুবী)।
কোন সম্প্রদায়ের নাম ধরে কাউকে উপহাস করা খুবই অন্যায় কাজ। এটি কোন মুমিনের
বৈশিষ্ট্য হ’তে পারে না। কেননা আল্লাহ কোন একটি সম্প্রদায়ের মধ্যে তাঁর হেদায়াত ও
রহমত সীমায়িত করেননি। সেজন্যেই তো দেখা গেছে কুরায়েশ বংশের অন্যতম নেতা হওয়া সত্ত্বেও উমাইয়া বিন
খালাফ ইসলামের হেদায়াত ও আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত ছিলেন। অথচ তারই ক্রীতদাস বেলাল বিন রাবাহ কৃষ্ণকায়
হাবশী হওয়া সত্ত্বেও ইসলামের হেদায়াত ও আল্লাহর রহমত লাভে দুনিয়া ও আখেরাতে মহা
সম্মানিত ছিলেন। যদিও বংশ মর্যাদা
সর্বদা প্রশংসিত। কিন্তু সেজন্য অহংকার
করা ও অন্য বংশকে উপহাস করা নিষিদ্ধ। এটি পাপীদের স্বভাব হিসাবে বর্ণনা করে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা
পাপী,
তারা (দুনিয়ায়) বিশ্বাসীদের উপহাস করত’। ‘যখন তারা
তাদের অতিক্রম করত, তখন তাদের প্রতি চোখ টিপে হাসতো’। ‘আর যখন তারা
তাদের পরিবারের কাছে ফিরত, তখন উৎফুল্ল হয়ে ফিরত’। ‘যখন তারা
বিশ্বাসীদের দেখত, তখন বলত নিশ্চয়ই ওরা পথভ্রষ্ট’। ‘অথচ তারা
বিশ্বাসীদের উপর তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে প্রেরিত হয়নি’। ‘পক্ষান্তরে আজকের দিনে বিশ্বাসীরা
অবিশ্বাসীদের দেখে হাসবে’। ‘উচ্চাসনে বসে তারা অবলোকন করবে’। ‘অবিশ্বাসীরা
যা করত,
তার প্রতিফল তারা পেয়েছে তো?’ (মুত্বাফফেফীন ৮৩/২৯-৩৬)। অন্যত্র এটিকে মুনাফিকদের স্বভাব হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘মুনাফিকরা ভয়
করে যে,
মুসলমানদের উপর না জানি এমন কোন সূরা নাযিল হয়ে
যায় যা তাদের অন্তরের কথাগুলো ওদের কাছে ফাঁস করে দেয়। বলে দাও, তোমরা বিদ্রূপ
করতে থাক। নিশ্চয়ই আল্লাহ সেই
সব বিষয় প্রকাশ করে দিবেন, যেসব বিষয়ে তোমরা ভয় করছ’ (তওবা ৯/৬৪)। অন্যত্র সরাসরি ঈমান ও মুমিনদের প্রতি মুনাফিকদের উপহাস
আল্লাহ বর্ণনা করেন, ‘তারা যখন ঈমানদারগণের সাথে মিশে, তখন বলে আমরা ঈমান এনেছি। আবার যখন তারা তাদের শয়তানদের সাথে নিরিবিলি
মিশে,
তখন বলে আমরা তোমাদের সঙ্গেই আছি। আমরা তো ওদের সাথে
উপহাস করি মাত্র’। ‘বরং আল্লাহ তাদের উপহাসের বদলা নেন এবং তাদেরকে তাদের
অবাধ্যতার মধ্যে ছেড়ে দেন বিভ্রান্ত অবস্থায়’ (বাক্বারাহ ২/১৪-১৫)। আর উক্ত উপহাস আরও মারাত্মক গোনাহের কাজ হয়, যখন এর মাধ্যমে আল্লাহর ক্রোধের বিনিময়ে মানুষের সন্তুষ্টি
কামনা করা হয়। যেমন নিম্নের হাদীছে
এসেছে,
‘হযরত মু‘আবিয়া (রাঃ) একবার আয়েশা (রাঃ)-কে পত্র লেখেন এই মর্মে যে, আমাকে উপদেশ দিয়ে কিছু লিখুন এবং বেশী লিখবেন না। তখন আয়েশা (রাঃ) লিখলেন, আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হৌক! অতঃপর আমি আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-কে
বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি মানুষের ক্রোধের বিনিময়ে আল্লাহর
সন্তুষ্টি কামনা করে, আল্লাহ তাকে মানুষ থেকে নিরাপদ করার জন্য
যথেষ্ট হয়ে যান’। আল্লাহ আপনার উপর
শান্তি বর্ষণ করুন![17]
বৈশিষ্ট্য হ’তে পারে না। কেননা আল্লাহ কোন একটি সম্প্রদায়ের মধ্যে তাঁর হেদায়াত ও
রহমত সীমায়িত করেননি। সেজন্যেই তো দেখা গেছে কুরায়েশ বংশের অন্যতম নেতা হওয়া সত্ত্বেও উমাইয়া বিন
খালাফ ইসলামের হেদায়াত ও আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত ছিলেন। অথচ তারই ক্রীতদাস বেলাল বিন রাবাহ কৃষ্ণকায়
হাবশী হওয়া সত্ত্বেও ইসলামের হেদায়াত ও আল্লাহর রহমত লাভে দুনিয়া ও আখেরাতে মহা
সম্মানিত ছিলেন। যদিও বংশ মর্যাদা
সর্বদা প্রশংসিত। কিন্তু সেজন্য অহংকার
করা ও অন্য বংশকে উপহাস করা নিষিদ্ধ। এটি পাপীদের স্বভাব হিসাবে বর্ণনা করে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা
পাপী,
তারা (দুনিয়ায়) বিশ্বাসীদের উপহাস করত’। ‘যখন তারা
তাদের অতিক্রম করত, তখন তাদের প্রতি চোখ টিপে হাসতো’। ‘আর যখন তারা
তাদের পরিবারের কাছে ফিরত, তখন উৎফুল্ল হয়ে ফিরত’। ‘যখন তারা
বিশ্বাসীদের দেখত, তখন বলত নিশ্চয়ই ওরা পথভ্রষ্ট’। ‘অথচ তারা
বিশ্বাসীদের উপর তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে প্রেরিত হয়নি’। ‘পক্ষান্তরে আজকের দিনে বিশ্বাসীরা
অবিশ্বাসীদের দেখে হাসবে’। ‘উচ্চাসনে বসে তারা অবলোকন করবে’। ‘অবিশ্বাসীরা
যা করত,
তার প্রতিফল তারা পেয়েছে তো?’ (মুত্বাফফেফীন ৮৩/২৯-৩৬)। অন্যত্র এটিকে মুনাফিকদের স্বভাব হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘মুনাফিকরা ভয়
করে যে,
মুসলমানদের উপর না জানি এমন কোন সূরা নাযিল হয়ে
যায় যা তাদের অন্তরের কথাগুলো ওদের কাছে ফাঁস করে দেয়। বলে দাও, তোমরা বিদ্রূপ
করতে থাক। নিশ্চয়ই আল্লাহ সেই
সব বিষয় প্রকাশ করে দিবেন, যেসব বিষয়ে তোমরা ভয় করছ’ (তওবা ৯/৬৪)। অন্যত্র সরাসরি ঈমান ও মুমিনদের প্রতি মুনাফিকদের উপহাস
আল্লাহ বর্ণনা করেন, ‘তারা যখন ঈমানদারগণের সাথে মিশে, তখন বলে আমরা ঈমান এনেছি। আবার যখন তারা তাদের শয়তানদের সাথে নিরিবিলি
মিশে,
তখন বলে আমরা তোমাদের সঙ্গেই আছি। আমরা তো ওদের সাথে
উপহাস করি মাত্র’। ‘বরং আল্লাহ তাদের উপহাসের বদলা নেন এবং তাদেরকে তাদের
অবাধ্যতার মধ্যে ছেড়ে দেন বিভ্রান্ত অবস্থায়’ (বাক্বারাহ ২/১৪-১৫)। আর উক্ত উপহাস আরও মারাত্মক গোনাহের কাজ হয়, যখন এর মাধ্যমে আল্লাহর ক্রোধের বিনিময়ে মানুষের সন্তুষ্টি
কামনা করা হয়। যেমন নিম্নের হাদীছে
এসেছে,
‘হযরত মু‘আবিয়া (রাঃ) একবার আয়েশা (রাঃ)-কে পত্র লেখেন এই মর্মে যে, আমাকে উপদেশ দিয়ে কিছু লিখুন এবং বেশী লিখবেন না। তখন আয়েশা (রাঃ) লিখলেন, আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হৌক! অতঃপর আমি আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-কে
বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি মানুষের ক্রোধের বিনিময়ে আল্লাহর
সন্তুষ্টি কামনা করে, আল্লাহ তাকে মানুষ থেকে নিরাপদ করার জন্য
যথেষ্ট হয়ে যান’। আল্লাহ আপনার উপর
শান্তি বর্ষণ করুন![17]
عَسَى أَنْ يَكُونُوا خَيْرًا مِنْهُمْ
‘হ’তে পারে তারা তাদের চাইতে উত্তম’ বলার মধ্যে ইঙ্গিত রয়েছে যে, হ’তে পারে উপহাসকৃত ব্যক্তি বা সম্প্রদায় উপহাসকারীর চাইতে
আল্লাহর নিকট অধিক উত্তম। যে বিষয়ে অন্যের জানা নেই। অথবা তাদের ইখলাছ উপহাসকারীর চাইতে বেশী। যেটা কারু জানা নেই। অথবা তাদের ভবিষ্যৎ
অধিক উত্তম। যা কেউ জানে না। এজন্যেই বিদায় হজ্জের
ভাষণে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) চূড়ান্তভাবে নিষিদ্ধ করে বলেন, ‘নিশ্চয়ই
আল্লাহ তোমাদের উপর হারাম করেছেন তোমাদের রক্ত, সম্পদ ও ইযযত। যেমন এই দিন, এই মাস ও এই শহর তোমাদের জন্য হারাম’ (বুখারী হা/১৭৪২ ‘মিনার ভাষণ’ অনুচ্ছেদ)। তিনি আরও বলেন, ‘এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। সে তার উপর যুলুম
করবে না, তাকে লজ্জিত করবে না ও তাকে হীন মনে করবে না। ‘আল্লাহভীতি এখানে’– একথা বলে রাসূল (ছাঃ) তিনবার নিজের বুকের দিকে
ইশারা করেন। অতঃপর তিনি বলেন, কোন ব্যক্তির মন্দ কাজের জন্য এটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার কোন মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ জ্ঞান করে। আর এক মুসলমানের জন্য
অপর মুসলমানের উপর হারাম হ’ল তার রক্ত, সম্পদ ও
সম্মান’।[18]
‘হ’তে পারে তারা তাদের চাইতে উত্তম’ বলার মধ্যে ইঙ্গিত রয়েছে যে, হ’তে পারে উপহাসকৃত ব্যক্তি বা সম্প্রদায় উপহাসকারীর চাইতে
আল্লাহর নিকট অধিক উত্তম। যে বিষয়ে অন্যের জানা নেই। অথবা তাদের ইখলাছ উপহাসকারীর চাইতে বেশী। যেটা কারু জানা নেই। অথবা তাদের ভবিষ্যৎ
অধিক উত্তম। যা কেউ জানে না। এজন্যেই বিদায় হজ্জের
ভাষণে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) চূড়ান্তভাবে নিষিদ্ধ করে বলেন, ‘নিশ্চয়ই
আল্লাহ তোমাদের উপর হারাম করেছেন তোমাদের রক্ত, সম্পদ ও ইযযত। যেমন এই দিন, এই মাস ও এই শহর তোমাদের জন্য হারাম’ (বুখারী হা/১৭৪২ ‘মিনার ভাষণ’ অনুচ্ছেদ)। তিনি আরও বলেন, ‘এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। সে তার উপর যুলুম
করবে না, তাকে লজ্জিত করবে না ও তাকে হীন মনে করবে না। ‘আল্লাহভীতি এখানে’– একথা বলে রাসূল (ছাঃ) তিনবার নিজের বুকের দিকে
ইশারা করেন। অতঃপর তিনি বলেন, কোন ব্যক্তির মন্দ কাজের জন্য এটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার কোন মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ জ্ঞান করে। আর এক মুসলমানের জন্য
অপর মুসলমানের উপর হারাম হ’ল তার রক্ত, সম্পদ ও
সম্মান’।[18]
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘নিশ্চয়ই
আল্লাহ তোমাদের চেহারা ও মাল-সম্পদ দেখেন না। বরং তিনি দেখেন তোমাদের অন্তর ও তোমাদের
কর্মসমূহ’।[19]
আল্লাহ তোমাদের চেহারা ও মাল-সম্পদ দেখেন না। বরং তিনি দেখেন তোমাদের অন্তর ও তোমাদের
কর্মসমূহ’।[19]
وَلاَ تَلْمِزُوا أَنْفُسَكُمْ
অর্থ لاَ يَطْعَنْ
بَعْضُكُمْ عَلَى بَعْضٍ ‘তোমরা একে অপরের দোষ বর্ণনা করো না’।اللَّمْزُ أى الْعَيْبُ লাম্য অর্থ দোষ। ত্বাবারী বলেন, লাম্য হয়ে
থাকে হাত, চোখ, যবান ও ইঙ্গিতের
মাধ্যমে এবং হাম্য হয়ে থাকে কেবল যবানের মাধ্যমে (কুরতুবী)। আল্লাহ বলেন, وَيْلٌ لِكُلِّ هُمَزَةٍ لُمَزَةٍ ‘দুর্ভোগ
প্রত্যেক সম্মুখে ও পিছনে নিন্দাকারীর জন্য’ (সূরা হুমাযাহ ১০৪/১)।
অর্থ لاَ يَطْعَنْ
بَعْضُكُمْ عَلَى بَعْضٍ ‘তোমরা একে অপরের দোষ বর্ণনা করো না’।اللَّمْزُ أى الْعَيْبُ লাম্য অর্থ দোষ। ত্বাবারী বলেন, লাম্য হয়ে
থাকে হাত, চোখ, যবান ও ইঙ্গিতের
মাধ্যমে এবং হাম্য হয়ে থাকে কেবল যবানের মাধ্যমে (কুরতুবী)। আল্লাহ বলেন, وَيْلٌ لِكُلِّ هُمَزَةٍ لُمَزَةٍ ‘দুর্ভোগ
প্রত্যেক সম্মুখে ও পিছনে নিন্দাকারীর জন্য’ (সূরা হুমাযাহ ১০৪/১)।
وَلاَ تَنَابَزُوا بِالْأَلْقَابِ ‘তোমরা একে
অপরকে মন্দ লকবে ডেকো না’। نَبَزَ يَنْبِزُ نَبْزًا، أَيْ لَقَّبَهُ
অর্থ لَقَبُ السُّوءِ
‘মন্দ লকব’ (কুরতুবী)। আবু জুবাইরা অথবা আবু
জাবীরাহ বিন যাহহাক (রাঃ) বলেন, আয়াতটি আমাদের বনু
সালামা গোত্র সম্পর্কে নাযিল হয়। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন মদীনায় আগমন করেন, তখন আমাদের প্রত্যেকের দু’তিনটা করে নাম ছিল। তাদের কারু একটি নামে
ডাকা হ’লে তারা বলত
অপরকে মন্দ লকবে ডেকো না’। نَبَزَ يَنْبِزُ نَبْزًا، أَيْ لَقَّبَهُ
অর্থ لَقَبُ السُّوءِ
‘মন্দ লকব’ (কুরতুবী)। আবু জুবাইরা অথবা আবু
জাবীরাহ বিন যাহহাক (রাঃ) বলেন, আয়াতটি আমাদের বনু
সালামা গোত্র সম্পর্কে নাযিল হয়। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন মদীনায় আগমন করেন, তখন আমাদের প্রত্যেকের দু’তিনটা করে নাম ছিল। তাদের কারু একটি নামে
ডাকা হ’লে তারা বলত
হে আল্লাহর রাসূল! এর ফলে ঐ ব্যক্তি ক্রুদ্ধ হয়’।[20]
একবার আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সম্মুখে সপত্নী হযরত ছাফিইয়াহ (রাঃ) সম্পর্কে
‘বেঁটে’ (قَصِيرَةٌ) হওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ‘ছাফিইয়াহ সম্পর্কে আপনাকে এটুকু বলাই যথেষ্ট যে, সে এইরূপ এইরূপ। তখন রাসূল (ছাঃ) তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, যদি তোমার এই কথাকে সমুদ্রের পানির সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়, তবে তা সমুদ্রের রং পরিবর্তন করে দিবে’।[21] একবার তিনি স্ত্রী যয়নবকে তার অতিরিক্ত সওয়ারীটি ছাফিইয়াহকে
দিতে বলেন। তাতে যয়নব ক্ষেপে
গিয়ে বলেন, আমি কি ঐ ইহূদীনীকে ওটা প্রদান করব? এতে ক্রুদ্ধ হয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যিলহজ্জ, মুহাররম ও ছফর মাসের কিছুদিন পর্যন্ত তার থেকে দূরে থাকেন’।[22] কারণ এটিও ছিল গীবত। এতে বুঝা যায়, তিন দিনের
বেশী সম্পর্ক ছিন্ন রাখা নাজায়েয হ’লেও সংশোধনের জন্য সেটি জায়েয (মিরক্বাত)। তবে ভালো লকবে ডাকা
যাবে। যেমন রাসূল (ছাঃ) কখনো
কখনো হযরত আবুবকর-কে ছিদ্দীক্ব, আয়েশা-কে হোমায়রা, আলী-কে আবু তুরাব, আব্দুর রহমান-কে
আবু হুরায়রা, হুযায়ফা-কে নওমান, আব্দুল্লাহ-কে যুল-বিজাদায়েন, খিরবাক্ব-কে যুল-ইয়াদায়েন ইত্যাদি লকবে ডেকেছেন।[23]
‘বেঁটে’ (قَصِيرَةٌ) হওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ‘ছাফিইয়াহ সম্পর্কে আপনাকে এটুকু বলাই যথেষ্ট যে, সে এইরূপ এইরূপ। তখন রাসূল (ছাঃ) তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, যদি তোমার এই কথাকে সমুদ্রের পানির সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়, তবে তা সমুদ্রের রং পরিবর্তন করে দিবে’।[21] একবার তিনি স্ত্রী যয়নবকে তার অতিরিক্ত সওয়ারীটি ছাফিইয়াহকে
দিতে বলেন। তাতে যয়নব ক্ষেপে
গিয়ে বলেন, আমি কি ঐ ইহূদীনীকে ওটা প্রদান করব? এতে ক্রুদ্ধ হয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যিলহজ্জ, মুহাররম ও ছফর মাসের কিছুদিন পর্যন্ত তার থেকে দূরে থাকেন’।[22] কারণ এটিও ছিল গীবত। এতে বুঝা যায়, তিন দিনের
বেশী সম্পর্ক ছিন্ন রাখা নাজায়েয হ’লেও সংশোধনের জন্য সেটি জায়েয (মিরক্বাত)। তবে ভালো লকবে ডাকা
যাবে। যেমন রাসূল (ছাঃ) কখনো
কখনো হযরত আবুবকর-কে ছিদ্দীক্ব, আয়েশা-কে হোমায়রা, আলী-কে আবু তুরাব, আব্দুর রহমান-কে
আবু হুরায়রা, হুযায়ফা-কে নওমান, আব্দুল্লাহ-কে যুল-বিজাদায়েন, খিরবাক্ব-কে যুল-ইয়াদায়েন ইত্যাদি লকবে ডেকেছেন।[23]
بِئْسَ الِاسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الْإِيمَانِ অর্থبِئْسَ أَنْ يُسَمَّى الرَّجُلُ كَافِرًا أَوْ زَانِيًا بَعْدَ
إسلامه وتوبته ‘ইসলাম কবুলের পর বা তওবা করার পর কাউকে কাফের বা ব্যভিচারী
নামে অভিহিত করা’ (কুরতুবী)।
إسلامه وتوبته ‘ইসলাম কবুলের পর বা তওবা করার পর কাউকে কাফের বা ব্যভিচারী
নামে অভিহিত করা’ (কুরতুবী)।
ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, ‘মন্দ লকবে ডাকা’ অর্থ কোন মানুষ অন্যায় থেকে তওবা করলে তাকে
পুনরায় ঐ নামে ডাকা (কুরতুবী)। যেমন আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ
করেন,
‘যে ব্যক্তি তার কোন ভাইকে বলে হে কাফের, তখন সে
ব্যক্তি দু’টির একটির অধিকারী হবে। যদি সে ব্যক্তি যথার্থ কাফের হয়, তবে ঠিক আছে। নইলে সেটি তার উপর ফিরে আসবে’।[24] আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জনৈক মদখোরকে মারতে বললেন। তখন আমাদের মধ্যে কেউ
তাকে হাত দিয়ে, কেউ কাপড় দিয়ে, কেউ জুতা দিয়ে পিটাতে লাগল। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) বললেন, তোমরা ওকে ধমকাও। তখন কেউ এসে বলল, তুমি কি আল্লাহকে ভয় করো না? তুমি কি আল্লাহর রাসূল থেকে লজ্জা পাও না? এ সময় একজন বলল, أَخْزَاكَ اللهُ ‘আল্লাহ তোমাকে
লাঞ্ছিত করুন! এটা শুনে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বললেন, তোমরা এরূপ বলো না। তোমরা তার বিরুদ্ধে শয়তানকে সাহায্য করো না। বরং তোমরা বল, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করো (দুনিয়াতে) এবং রহম করো (আখেরাতে)’।[25]
পুনরায় ঐ নামে ডাকা (কুরতুবী)। যেমন আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ
করেন,
‘যে ব্যক্তি তার কোন ভাইকে বলে হে কাফের, তখন সে
ব্যক্তি দু’টির একটির অধিকারী হবে। যদি সে ব্যক্তি যথার্থ কাফের হয়, তবে ঠিক আছে। নইলে সেটি তার উপর ফিরে আসবে’।[24] আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জনৈক মদখোরকে মারতে বললেন। তখন আমাদের মধ্যে কেউ
তাকে হাত দিয়ে, কেউ কাপড় দিয়ে, কেউ জুতা দিয়ে পিটাতে লাগল। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) বললেন, তোমরা ওকে ধমকাও। তখন কেউ এসে বলল, তুমি কি আল্লাহকে ভয় করো না? তুমি কি আল্লাহর রাসূল থেকে লজ্জা পাও না? এ সময় একজন বলল, أَخْزَاكَ اللهُ ‘আল্লাহ তোমাকে
লাঞ্ছিত করুন! এটা শুনে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বললেন, তোমরা এরূপ বলো না। তোমরা তার বিরুদ্ধে শয়তানকে সাহায্য করো না। বরং তোমরা বল, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করো (দুনিয়াতে) এবং রহম করো (আখেরাতে)’।[25]
উপরোক্ত হাদীছে স্পষ্ট যে, কাউকে তার তওবাকৃত
মন্দকর্মের জন্য মন্দ লকবে ডাকা যাবে না এবং কেবল মারপিট ও গালি-গালাজের মাধ্যমে
কষ্ট দিয়ে কাউকে সুপথে আনা যায় না। বরং দন্ডবিধি প্রয়োগের সাথে উত্তম ব্যবহার আবশ্যক। যাতে সে আল্লাহর পথে
ফিরে আসে। এমনকি মৃত্যুদন্ড
কার্যকর হ’লেও সে যেন আল্লাহর ক্ষমা ও অনুগ্রহ লাভে সমর্থ হয়।
মন্দকর্মের জন্য মন্দ লকবে ডাকা যাবে না এবং কেবল মারপিট ও গালি-গালাজের মাধ্যমে
কষ্ট দিয়ে কাউকে সুপথে আনা যায় না। বরং দন্ডবিধি প্রয়োগের সাথে উত্তম ব্যবহার আবশ্যক। যাতে সে আল্লাহর পথে
ফিরে আসে। এমনকি মৃত্যুদন্ড
কার্যকর হ’লেও সে যেন আল্লাহর ক্ষমা ও অনুগ্রহ লাভে সমর্থ হয়।
وَمَنْ لَمْ يَتُبْ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ অর্থাৎ যে ব্যক্তি এইসব মন্দ লকবে ডাকা থেকে তওবা করে না, যার ফলে শ্রবণকারী কষ্ট পায়, তারা যালেম’। কারণ ঐ নিষিদ্ধ
কর্মটি সে ইচ্ছাকৃতভাবে করেছে। দেশে দেশে তথাকথিত গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে যারা ডুবে আছেন
এবং যারা সর্বদা অন্যের চরিত্র হননে ব্যস্ত থাকেন ও পরস্পরকে মন্দ লকবে ডাকেন, তারা বিষয়টি লক্ষ্য করুন।
কর্মটি সে ইচ্ছাকৃতভাবে করেছে। দেশে দেশে তথাকথিত গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে যারা ডুবে আছেন
এবং যারা সর্বদা অন্যের চরিত্র হননে ব্যস্ত থাকেন ও পরস্পরকে মন্দ লকবে ডাকেন, তারা বিষয়টি লক্ষ্য করুন।
উল্লেখ্য যে, পরিস্থিতির কারণে অতীতে কেউ কোন কাজ করলে এমনকি
নিরপরাধ ব্যক্তিকে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাভোগ করানো হ’লেও পরবর্তীতে
সেটাই তার জন্য স্থায়ী বদনাম হিসাবে গণ্য করা বর্তমান যুগে রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা কবীরা গোনাহ। যেকারণে দেশে
অপরাধীরা সংশোধিত হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ও অপরাধীর সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি
পাচ্ছে।
নিরপরাধ ব্যক্তিকে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাভোগ করানো হ’লেও পরবর্তীতে
সেটাই তার জন্য স্থায়ী বদনাম হিসাবে গণ্য করা বর্তমান যুগে রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা কবীরা গোনাহ। যেকারণে দেশে
অপরাধীরা সংশোধিত হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ও অপরাধীর সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি
পাচ্ছে।
আয়াতটি শুরু হয়েছিল لاَ يَسْخَرْ قَوْمٌ مِنْ قَوْمٍ ‘কোন সম্প্রদায়
যেন কোন সম্প্রদায়কে উপহাস না করে’ বক্তব্য দিয়ে। অতঃপর বলা হয়েছে وَلاَ تَلْمِزُوا أَنْفُسَكُمْ ‘তোমরা পরস্পরে
দোষ বর্ণনা করো না’। তারপর বলা হয়েছে وَلاَ تَنَابَزُوا
بِالْأَلْقَابِ ‘তোমরা একে অপরকে মন্দ লকবে ডেকোনা’। অতঃপর বলা হয়েছে ‘ঈমানের পরে এটিই সবচেয়ে বড় গর্হিত কাজ’। এতে বুঝা যায় যে, السُّخْرِيَةُ
অর্থাৎ কাউকে সামনাসামনি উপহাস ও ঠাট্টা-বিদ্রুপ করাটা হ’ল সবচেয়ে বড় ও
সামগ্রিক অপরাধ। আর اللَّمْزُ ‘হ’ল সামনে বা
পিছনে নিন্দা করা’। অতএব কুরআনী বর্ণনা
ধারার সূক্ষ্মতত্ত্ব অনুযায়ী সামনে ‘উপহাস’ টাই সবচেয়ে বড় পাপ। যা ‘লাম্য’ অর্থাৎ ‘সামনে বা পিছনে নিন্দা করা’ এবং ‘নাবয’ অর্থাৎ ‘মন্দ লকবে
ডাকা’ বা অনুরূপ সকল বদস্বভাবকে শামিল করে। বরং এগুলি হ’ল উপহাসেরই শাখা-প্রশাখা। যা মুনাফিকদের বড়
লক্ষণ। যারা সরাসরি আল্লাহর
রাসূল (ছাঃ)-কেও বিদ্রুপ করেছে। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘আর তাদের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে, যারা ছাদাক্বা বণ্টনের ব্যাপারে তোমার প্রতি দোষারোপ করে। যদি তাদেরকে ছাদাক্বা
থেকে কিছু দেওয়া হয়, তাহ’লে তারা খুশী হয়। আর যদি কিছু না দেওয়া হয়, তাহ’লে তারা ক্রুদ্ধ হয়’ (তওবা ৯/৫৮)। তিনি আরও বলেন, ‘যারা স্বেচ্ছায় ছাদাক্বা দানকারী মুমিনদের
প্রতি বিদ্রূপ করে এবং যাদের স্বীয় পরিশ্রমলব্ধ বস্ত্ত ছাড়া কিছুই নেই তাদেরকে
উপহাস করে, আল্লাহ তাদেরকে লাঞ্ছিত করেন এবং তাদের জন্য
রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি’ (তওবা ৯/৭৯)। এমনকি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
হোনায়েন যুদ্ধের গণীমত বণ্টনের সময় জনৈক মুনাফিকনেতা বলেছিল,اتَّقِ اللهَ يَا مُحَمَّدُ
‘হে মুহাম্মাদ! আল্লাহকে ভয় করুন’ (মুসলিম হা/১০৬৪)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, يَا مُحَمَّدُ اعْدِلْ ‘হে মুহাম্মাদ!
ন্যায়বিচার করুন’ (মুসলিম ১০৬৩ (১৪২)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, وَمَا أَرَادَ بِهَا وَجْهُ
اللهِ ‘এই বণ্টনে মুহাম্মাদ আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করেননি’। এতে ক্রোধে রাসূল (ছাঃ)-এর চেহারা পরিবর্তিত হয়ে যায়। অতঃপর তিনি বলেন,رَحِمَ اللهُ مُوسَى قَدْ
أُوذِىَ بِأَكْثَرَ مِنْ هَذَا فَصَبَرَ– ‘আল্লাহ মূসার
উপর রহম করুন! এর চাইতে তাকে বেশী কষ্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরেও তিনি ছবর করেছিলেন’।[26] যেজন্য মূসা (আঃ) স্বীয় কওমকে লক্ষ্য করে বলতে বাধ্য
হয়েছিলেন, ‘স্মরণ কর, যখন মূসা তার কওমকে
বলেছিল,
হে আমার কওম! তোমরা কেন আমাকে কষ্ট দিচ্ছ? অথচ তোমরা জানো যে, আমি তোমাদের
নিকটে আল্লাহর প্রেরিত রাসূল। অতঃপর যখন তারা বক্রতা অবলম্বন করল, তখন আল্লাহ তাদের অন্তরসমূহকে বক্র করে দিলেন। আল্লাহ পাপাচারী
সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না’ (ছফ ৬১/৫)। সবশেষে সঙ্গতভাবেই
বলা হয়েছে, যারা এসব বদ স্বভাব থেকে তওবা না করবে, তারা হবে যালেম। আর যালেমদের পরিণতি হ’ল জাহান্নাম। আর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা যুলুম
থেকে বেঁচে থাকো। কেননা ‘যুলুম
ক্বিয়ামতের দিন ঘন অন্ধকার হয়ে দেখা দিবে’।[27]
যেন কোন সম্প্রদায়কে উপহাস না করে’ বক্তব্য দিয়ে। অতঃপর বলা হয়েছে وَلاَ تَلْمِزُوا أَنْفُسَكُمْ ‘তোমরা পরস্পরে
দোষ বর্ণনা করো না’। তারপর বলা হয়েছে وَلاَ تَنَابَزُوا
بِالْأَلْقَابِ ‘তোমরা একে অপরকে মন্দ লকবে ডেকোনা’। অতঃপর বলা হয়েছে ‘ঈমানের পরে এটিই সবচেয়ে বড় গর্হিত কাজ’। এতে বুঝা যায় যে, السُّخْرِيَةُ
অর্থাৎ কাউকে সামনাসামনি উপহাস ও ঠাট্টা-বিদ্রুপ করাটা হ’ল সবচেয়ে বড় ও
সামগ্রিক অপরাধ। আর اللَّمْزُ ‘হ’ল সামনে বা
পিছনে নিন্দা করা’। অতএব কুরআনী বর্ণনা
ধারার সূক্ষ্মতত্ত্ব অনুযায়ী সামনে ‘উপহাস’ টাই সবচেয়ে বড় পাপ। যা ‘লাম্য’ অর্থাৎ ‘সামনে বা পিছনে নিন্দা করা’ এবং ‘নাবয’ অর্থাৎ ‘মন্দ লকবে
ডাকা’ বা অনুরূপ সকল বদস্বভাবকে শামিল করে। বরং এগুলি হ’ল উপহাসেরই শাখা-প্রশাখা। যা মুনাফিকদের বড়
লক্ষণ। যারা সরাসরি আল্লাহর
রাসূল (ছাঃ)-কেও বিদ্রুপ করেছে। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘আর তাদের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে, যারা ছাদাক্বা বণ্টনের ব্যাপারে তোমার প্রতি দোষারোপ করে। যদি তাদেরকে ছাদাক্বা
থেকে কিছু দেওয়া হয়, তাহ’লে তারা খুশী হয়। আর যদি কিছু না দেওয়া হয়, তাহ’লে তারা ক্রুদ্ধ হয়’ (তওবা ৯/৫৮)। তিনি আরও বলেন, ‘যারা স্বেচ্ছায় ছাদাক্বা দানকারী মুমিনদের
প্রতি বিদ্রূপ করে এবং যাদের স্বীয় পরিশ্রমলব্ধ বস্ত্ত ছাড়া কিছুই নেই তাদেরকে
উপহাস করে, আল্লাহ তাদেরকে লাঞ্ছিত করেন এবং তাদের জন্য
রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি’ (তওবা ৯/৭৯)। এমনকি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
হোনায়েন যুদ্ধের গণীমত বণ্টনের সময় জনৈক মুনাফিকনেতা বলেছিল,اتَّقِ اللهَ يَا مُحَمَّدُ
‘হে মুহাম্মাদ! আল্লাহকে ভয় করুন’ (মুসলিম হা/১০৬৪)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, يَا مُحَمَّدُ اعْدِلْ ‘হে মুহাম্মাদ!
ন্যায়বিচার করুন’ (মুসলিম ১০৬৩ (১৪২)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, وَمَا أَرَادَ بِهَا وَجْهُ
اللهِ ‘এই বণ্টনে মুহাম্মাদ আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করেননি’। এতে ক্রোধে রাসূল (ছাঃ)-এর চেহারা পরিবর্তিত হয়ে যায়। অতঃপর তিনি বলেন,رَحِمَ اللهُ مُوسَى قَدْ
أُوذِىَ بِأَكْثَرَ مِنْ هَذَا فَصَبَرَ– ‘আল্লাহ মূসার
উপর রহম করুন! এর চাইতে তাকে বেশী কষ্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরেও তিনি ছবর করেছিলেন’।[26] যেজন্য মূসা (আঃ) স্বীয় কওমকে লক্ষ্য করে বলতে বাধ্য
হয়েছিলেন, ‘স্মরণ কর, যখন মূসা তার কওমকে
বলেছিল,
হে আমার কওম! তোমরা কেন আমাকে কষ্ট দিচ্ছ? অথচ তোমরা জানো যে, আমি তোমাদের
নিকটে আল্লাহর প্রেরিত রাসূল। অতঃপর যখন তারা বক্রতা অবলম্বন করল, তখন আল্লাহ তাদের অন্তরসমূহকে বক্র করে দিলেন। আল্লাহ পাপাচারী
সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না’ (ছফ ৬১/৫)। সবশেষে সঙ্গতভাবেই
বলা হয়েছে, যারা এসব বদ স্বভাব থেকে তওবা না করবে, তারা হবে যালেম। আর যালেমদের পরিণতি হ’ল জাহান্নাম। আর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা যুলুম
থেকে বেঁচে থাকো। কেননা ‘যুলুম
ক্বিয়ামতের দিন ঘন অন্ধকার হয়ে দেখা দিবে’।[27]
উপসংহার :
উপরোক্ত আলোচনায় এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, সন্ধি ব্যতীত
সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয় না। আর সন্ধির জন্য উভয়পক্ষের আন্তরিকতা থাকা আবশ্যক। একপক্ষ হঠকারী হ’লে তাকে দমনের
জন্য শক্তিশালী তৃতীয় পক্ষ থাকতে হবে এবং তাদেরকে অবশ্যই নিরপেক্ষ ও সুবিচারক হ’তে হবে।
সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয় না। আর সন্ধির জন্য উভয়পক্ষের আন্তরিকতা থাকা আবশ্যক। একপক্ষ হঠকারী হ’লে তাকে দমনের
জন্য শক্তিশালী তৃতীয় পক্ষ থাকতে হবে এবং তাদেরকে অবশ্যই নিরপেক্ষ ও সুবিচারক হ’তে হবে।
———————————————————
[1]. বুখারী, ফাৎহুল বারী হা/২৬৯১-এর আলোচনা দ্রঃ ৫/২৯৮-৯৯ পৃ.
‘সন্ধি’ অধ্যায়।
‘সন্ধি’ অধ্যায়।
[2]. বুখারী হা/৬৯৫২; মিশকাত হা/৪৯৫৭।
[3]. তিরমিযী হা/২৫০৯; আবুদাঊদ হা/৪৯১৯; মিশকাত হা/৫০৩৮।
[4]. বুখারী হা/২৬৯২; মুসলিম হা/২৬০৫; মিশকাত হা/৪৮২৫।
[5]. মুসলিম হা/১৮২৭ ‘ইমারত’ অধ্যায় ‘ন্যায়বিচারক নেতার মর্যাদা’ অনুচ্ছেদ।
[6]. বুখারী হা/৬০১১; মুসলিম হা/২৫৮৬; মিশকাত হা/৪৯৫৩ ‘শিষ্টাচার সমূহ’ অধ্যায়, ‘সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ’ অনুচ্ছেদ।
[7]. বুখারী হা/৬০২৬; মুসলিম হা/২৫৮৫; মিশকাত হা/৪৯৫৫।
[8]. মুসলিম হা/২৫৬৪; মিশকাত হা/৪৯৫৯।
[9]. বুখারী হা/১৭৩৯; মিশকাত হা/৩৫৩৭।
[10]. বুখারী হা/৭০৭৬; মুসলিম হা/৬৪; মিশকাত হা/৪৮১৪।
[11]. মুসলিম হা/১০১; মিশকাত হা/৩৫২০।
[12]. কুরতুবী, তাফসীর উক্ত আয়াত হা/৩৪৮৫; তাফসীর ত্বাবারী হা/১৭২০০, ১৭১৮৬, ইমাম যুহরী ও অন্যান্যদের থেকে ‘মুরসাল’ সূত্রে বর্ণিত; তাফসীরে কাশশাফ, ইবনু কাছীর
প্রভৃতি; সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) ৩য় মুদ্রণ ৬০৮-০৯ পৃ.।
প্রভৃতি; সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) ৩য় মুদ্রণ ৬০৮-০৯ পৃ.।
[13]. বুখারী হা/৪৫১৩; মিশকাত হা/৫৯৯৫।
[14]. বুখারী হা/৪৬৫১, ৭০৯৫; জিহাদ ও
ক্বিতাল ২৬ পৃ.।
ক্বিতাল ২৬ পৃ.।
[15]. ফাৎহুল বারী হা/৭০৯৫-এর ব্যাখ্যা দ্রঃ ‘জিহাদ ও
ক্বিতাল ২৭ পৃ.।
ক্বিতাল ২৭ পৃ.।
[16]. বুখারী, ফাৎহুল বারী হা/৬৮৭২-এর আলোচনা দ্রঃ। ৭ম হিজরীর রামাযান
মাসে সারিইয়া গালেব বিন আব্দুল্লাহ লায়ছী, সারিইয়া
ক্রমিক ৬১ ‘সীরাতুর রাসূল (ছাঃ)’ ৩য় মুদ্রণ ৫০৫ পৃ.।
মাসে সারিইয়া গালেব বিন আব্দুল্লাহ লায়ছী, সারিইয়া
ক্রমিক ৬১ ‘সীরাতুর রাসূল (ছাঃ)’ ৩য় মুদ্রণ ৫০৫ পৃ.।
[17]. তিরমিযী হা/২৪১৪; ছহীহাহ হা/ ২৩১১; মিশকাত হা/৫১৩০।
[18]. মুসলিম হা/২৫৬৪; মিশকাত হা/৪৯৫৯ ‘শিষ্টাচার সমূহ’ অধ্যায়।
[19]. মুসলিম হা/২৫৬৪; মিশকাত হা/৫৩১৪।
[20]. আবুদাঊদ হা/৪৯৬২; তিরমিযী হা/৩২৬৮ প্রভৃতি।
[21]. আবুদাঊদ হা/৪৮৭৫; তিরমিযী হা/২৫০২; মিশকাত হা/৪৮৫৩।
[22]. আবুদাঊদ হা/৪৬০২; মিশকাত হা/৫০৪৯; ছহীহ আত-তারগীব হা/২৮৩৫।
[23]. তাহকীক ইবনু হিশাম ক্রমিক ৩৯২; ছহীহাহ হা/৩২৭৭; বুখারী ৪৪১; ইছাবাহ ১০৬৭৪; মুসলিম হা/১৭৮৮; ইছাবাহ ৪৮০৭; মিরক্বাত হা/১০১৭-এর আলোচনা।
[24]. মুসলিম হা/৬০; ছহীহ ইবনু হিববান হা/২৫০; বুখারী হা/৬১০৪।
[25]. আবুদাঊদ হা/৪৪৭৭, ৪৪৭৮; মিশকাত হা/৩৬২১
‘দন্ডবিধি সমূহ’ অধ্যায়।
‘দন্ডবিধি সমূহ’ অধ্যায়।
[26]. বুখারী হা/৪৩৩৫; মুসলিম হা/১০৬২ (১৬৪)।
[27]. মুসলিম হা/২৫৭৮; মিশকাত হা/১৮৬৫।