প্রারম্ভিক আলোচনা :
বিশ্বের সকল মানব জাতির আদি পিতা হযরত আদম (আঃ) ও মাতা হাওয়া (আঃ) এ কথা সার্বজনীন বিদিত। মহান আল্লাহ রূহানী জগতে সমস্ত মানুষকে একত্রিত করে তিনি (আল্লাহ) তার একত্ববাদ ও অবিনশ্বর স্রষ্টা সম্পর্কে অঙ্গিকার নিয়েছেন । মহান আল্লাহর ভাষায় وَإِذْ أَخَذَ رَبُّكَ مِنْ بَنِي آدَمَ مِنْ ظُهُورِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَأَشْهَدَهُمْ عَلَى أَنْفُسِهِمْ أَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ قَالُوا بَلَى شَهِدْنَا أَنْ تَقُولُوا يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّا كُنَّا عَنْ هَذَا غَافِلِينَ “আর যখন তোমার পালনকর্তা বনী আদমের পৃষ্ঠদেশ থেকে বের করলেন তাদের সন্তানদের এবং নিজের উপর প্রতিজ্ঞা করালেন, আমি কি তোমাদের পালনকর্তা নই ? তারা সকলেই বলল, অবশ্যই আমরা অঙ্গিকার করছি” (আ’রাফ -৭/১৭২)।
আর এই বনী আদম সময়ের প্রেক্ষাপটে নিজেদের চাহিদামত পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু যখনই আল্লাহকে ভূলে গিয়ে তাগুতির পূজা অর্চনা শুরু করেছে, তখনই মহান আল্লাহ্ যুগে যুগে নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। হযরত মুহাম্মদ (ছাঃ) এমন একজন আল্লাহ প্রেরিত রাসূল, যিনি সারা বিশ্বের প্রতি রহমত স্বরূপ (আম্বিয়া-২১/১০৭)।
২.“আমি যাদেরকে (ঐশী) কিতাব দান করেছি, তারা (নবী-রাসূল) তাকে (মুহাম্মাদ) চিনে, যেমন তাদের সন্তানদেরকে চিনে” (আনআম-৬/২০) ।
৩.“তোমরা ভেবে দেখেছ কি ? যদি এটা (অহী) আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়, আর তোমরা একে (মুহাম্মাদ) কিভাবে অস্বীকার কর ? আর বনী ইসরাঈলের একজন স্বাক্ষী (মূসা )-এর পক্ষে স্বাক্ষ্য দিয়ে এতে বিশ্বাস স্থাপন করেছেন”(আহক্বাফ-৪৬/১০)।
৪.“হযরত ঈসা (আঃ) বললেন, হে বনী ইসরাঈল , আমি তোমাদের কাছে আল্লাহর প্রেরিত রাসূল, আমার পূর্ববর্তী তাওরাতের সত্যায়নকারী এবং আমি এমন একজন রাসূলের সুসংবাদাতা যিনি আমার পরে আগমন করবেন । তার নাম আহমাদ”(আছ-ছাফ-৬১/০৬) ।
ইহুদী-নাসারাদের বিধান তাওরাত-ইনজিল শরীফে যেমন তার আগমন বার্তা এসেছে, তেমনি হিন্দু শাস্ত্রেও কল্কি অবতার তথা শেষ রাসুলের আবির্ভাব সম্পর্কে যথার্থই বর্ণিত হয়েছে । এখানে প্রশ্ন হতে পারে কখোন কি ভারত বর্ষে নবী-রাসূলের আগমন ঘটেছে ? এ প্রশ্নের জবাব হ’ল, এটা আত্মকেন্দ্রিক কথা ও একতরফা বিচার বিশ্লেষণ নয় । এমর্মে মহান আল্লাহ নিজেই ঘোষনা করেছেন :
১. “আমার আদেশক্রমে, আমি তো রাসূল প্রেরণ করে থাকি” (দুখান-৪৪/০৫)।
২. “আমি প্রত্যেক উম্মাতের নিকটে রাসূল প্রেরণ করেছি” (নাহল-১৬/৩৬)।
৩. “আমি তোমার পুর্বে পূর্ববর্তী সম্প্রদায়ের মধ্যে রাসূল প্রেরণ করেছি” (হিজর-১৫/১০)।
৪. “পূর্ববর্তীদের নিকটে আমি বহুনবী প্রেরণ করেছিলাম” (যখরুক-৪৩/০৬)।
৫. “আল্লাহর শপথ, তোমার পূর্বেও আমি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতি রাসুল প্রেরণ করেছি” (নাহল-১৬/৬৩)।
৬. “এমন কোন সম্প্রদায় নেই, যাদের নিকটে কোন না কোন ভয় প্রদর্শনকারী আসেনি” (ফাতির-৩৫/২৪)।
৭. “আমি রাসুল না পাঠিয়ে কাউকেই শাস্তি দেয় না” (ইসরা-১৭/১৫)।
উল্লেখিত আয়াতগুলো থেকে এটাই প্রতিয়মান হয় যে, এই ভারত বর্ষের ভূখন্ডে বসবাসকারী বনী আদমের পূর্ববর্তী পিতৃ পুরুষের উদ্দেশ্যে কোন এক সময় নবী-রাসূলগণ দ্বীন ইসলাম প্রচার করে ছিলেন । হয়তবা সেই ইতিহাস কালের আবর্তনে চাপা পড়ে গেছে, নতুবা উম্মাতে মুহাম্মাদী সেই জ্ঞান থেকে মাহরূম হয়েছেন । এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, “তাদের (নবী-রাসূলদের) মধ্যে কারো কাহিনী বর্ণনা করেছি, আর কারো কাহিনী বর্ণনা করিনি”(নিসা-৪/১৬৪)।
তাছাড়া পৃথিবীর ভৌগলিক বিচার বিশ্লেষণ করলে এটাও প্রতিয়মান হয় যে, কালের আবর্তনে বিভিন্ন দেশ-মহাদেশ,সাগর-মহাসাগর গড়ে উঠেছে । হযরত আদম (আঃ) কে যখন বেহেশত থেকে নামিয়ে দেয়া হয়, তখন হিন্দুস্থানের সরন্দ্বীপের বূয্ بز নামক পাহাড়ে অবতরণ করানো হয় । বর্তমান প্রেক্ষাপটে, তখন নৌ-যান ব্যতিত হযরত আদম হাওয়া (আঃ) এর সাথে কি ভাবে? মিলিত হয়েছিলেন এবং জান্নাত হতে বহনকৃত হাজরে আসওয়াদ কি করে? মক্কায় পৌছান এর জবাব হ’ল, সেই সময় সারা বিশ্বের ভৌগলিক সীমারেখা, দেশ-মহাদেশ এমন ছিলনা । তাছাড়া পৃথিবীর মানচিত্রের প্রতি আপাত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে দেখা যায়, সেখানে এক একটি মহাদেশ অপর মহাদেশের সাথে সম্পৃক্ত ছিল তা অনুমান করা যায়। যেমন¬ মৃত সাগর (Death Sea) সৃষ্টি হয়েছে হযরত লূত (আঃ) এর যুগে, আটলান্টিক মহা সাগরে জেগে উঠেছে হাওয়াইন দ্বীপপুঞ্জ, যমুনার বুকে চর জেগে জনবসতি গড়ে উঠেছে এবং চাষাবাদ করছে ইত্যাদি ইত্যাদি ভৌগলিক পরিবর্তন । হযরত নূহ (আঃ) এর প্লাবন পরবর্তী পৃথিবীর সমস্ত মানব জাতি একই ভূখন্ডে বসবাস করত এবং পরবর্তী কালে তারা চাহিদামত পৃথিবীর বিভিন্ন চারণ ভূমিতে ছড়িয়ে পড়ে । ঐতিহাসিকদের মতে, সবচেয়ে পূরাতন জাতি হ’ল সেমিটিক জাতি । কারণ হযরত নূহ (আ:) ইরাকের মূছেল নগরীতে স্বীয় সম্প্রদায়ের সাতে বসবাস করতেন। তারা বাহ্যত: সভ্য হলেও শিরকের অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। তিনি তাদের হেদায়েতের জন্য প্রেরিত হয়েছিলেন। প্লাবন পরবর্তীতে তার সাথে নৌকারোহী মুমিন নর-নারীদের মাধ্যমে সমগ্র পৃথিবীতে নতুন করে আবাদ শুরু হয় এবং তাদেরকে তিনি সত্যের পথে পরিচালিত করেন। এ কারণেই তাকে ابوالبشر الثانى বা ‘মানব জাতির দ্বিতীয় পিতা’ বলা হয় । আর তিনিই ছিলেন পৃথিবীর প্রথম রাসূল । পৃথিবীর সমস্ত মানব জাতি একই ভূখন্ডে বসবাস করত এবং পরবর্তী কালে তারা
চাহিদামত পৃথিবীর বিভিন্ন চারণ ভূমিতে ছড়িয়ে পড়ে মহান আল্লাহ্ বলেন: وجعلنا ذريته هم الباقين আমরা তার (নূহের) বংশধরগণকেই অবশিষ্ট রেখেছি (ছাফফাতÑ৩৭/৭৭) এ আয়াতের তাফসীর হ’ল- নূহের প্লাবন পরবর্তীতে কেবল তার তিন পুত্রসহ মুমিন নর-নারীগণই অবশিষ্ট ছিল (ইবনে কাছীর) ।
এ সম্পর্কে রাসূল (ছা:)বলেছেন:ّ سام ابو العرب و حام ابو الحبس و يافث ابو الروم” “সাম আরবের পিতা, হাম হাবশার পিতা এবং ইয়াফেছ রোমক-গ্রীকদের পিতা” । ইবনে আব্বাস ও ক্বাতাদাহ্ (রা:) বলেন, “পরবর্তী সকল মানব জাতি সবায় নূহের বংশধর” ।
ঐতিহাসিকদের মতে, সবচেয়ে পূরাতন জাতি হ’ল সেমিটিক জাতি সেমিটিক শব্দটি আদি বাইবেল (Old Testament) এর সেম্ (Shem) হ‘তে উদ্ভূত। হযরত নূহ (আ:) এর জৈষ্ঠ্য পুত্র সাম্ (سام)-এর বংশধর সেমিটিক জাতি নামে পরিচিত। তিনি ছিলেন ابو العرب বা আরব জাতির পিতা। তাঁর বংশধরগণের মধ্যেই হযরত ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসাহাক এবং ইসমাঈলের বংশধর ছিলেন মানব জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হযরত মুহাম্মাদ (ছা:) । সৈয়দ আমীর আলীর মতে, সেমিটিক জাতির আদি বাসস্থান মেসোপটিমিয়া। আনুমানিক খ্রীষ্টপূর্ব ৩৮০০ সালে ব্যাবিলন সভ্যতার বিকাশ লাভ করে এবং খ্রীষ্টপূর্ব ৩৫০০ হ‘তে ৫০০ সালের মধ্যে তারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে মেসোপটিমিয়া থেকে ফোরাত-দজলা উপত্যাকা, সিরিয়া, ফিলিস্তিন, সিনাই এলাকাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন ভূমিতে ছড়িয়ে পড়ে ।
হযরত নূহ (আঃ) এর প্লাবন পরবর্তী আ’দ জাতির বাসস্থান ছিল আহক্বাফ এলাকার ইয়েমেন ও ইয়ামামার মধ্যবর্তী দক্ষিণ আরবের বিস্তৃত এলাকা। অতঃপর পারস্য উপসাগর উপকূল ওমান ও হাজরা মাউত থেকে ইরাক পর্যন্ত। অর্থাৎ ইয়েমেন, সিরিয়া, ওমান, আম্মান, কাতার, হাজরা মাউত ও ইরাক এলাকা । আর লূত জাতি খ্রীষ্টপূর্ব ২৩০০-১৯০০ সাল
পর্যন্ত ইরাক ও ফিলিস্তিনের মধ্যবর্তী ট্রান্স জর্ডান এলাকায় বিপুল জনবসতি গড়ে তোলেন ।
আর ঐ সকল এলাকায় বাস-বসতি শুরু হয় তার বড় প্রমাণ হ’ল মহান আল্লাহ বলেন, নূহ (আঃ)-এর নৌকা জুদী পর্বতের উপর স্থির হ’ল (হুদ-১১/ ৪৪)। তাওরাতের বর্ণনা মতে, আরারাত পর্বতে স্থির হ’ল । কেহ বলেন, পর্বতের নাম জুদী ও স্থানের নাম আরারাত। কিন্তু ইরানীরা ঐ পর্বতের নাম কূহে নূহ বলে অবহিত করেন ।
তারা যখন জীবনের চাহিদা পূরণের জন্য বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে, তখন তাদের অন্তরে নিশ্চয়ই যে কোন ধর্ম বিশ্বাস ছিল, হোক তা একেশ্বরবাদ কিংবা একাধিকেশ্বরবাদ। এমনকি তাদের সাথে ছিল পূর্ববর্তী নবী-রাসূলের উপর প্রেরিত ঐশী গ্রন্থ, যা কালের চক্রে শয়তানের প্ররোচনায় নিজেদের সুবিধে মত ধর্ম গ্রন্থটি পরিবর্তন করে নিয়েছে। এর স্বপক্ষে মহান আল্লাহ্ বলেন, قَدْ كَانَ فَرِيقٌ مِنْهُمْ يَسْمَعُونَ كَلَامَ اللَّهِ ثُمَّ يُحَرِّفُونَهُ مِنْ بَعْدِ مَا عَقَلُوهُ وَهُمْ يَعْلَمُونَ “তাদের মধ্যে একদল ছিল, যারা আল্লাহর বাণী শ্রবণ করত; অতঃপর তা বুঝে-শুনে পরিবর্তন করে দিত এবং তারা তা অবগতও ছিল”(বাক্বারাহ-২/৭৫)। হিন্দুদের শাস্ত্র মতে রাসূল (ছা:) এর আবিভার্বের যে ভবিষ্যৎ বাণী বেদ, পুরাণে এসেছে তা ইসলামের সাদৃশ্যে নিম্নে আলোচনা হলো-
কল্কি অবতারের নাম :
রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ)-এর দাদা তার নাম মুহাম্মাদ এবং মা আমেনা স্বপ্নে এক ফেরেশতার সুসংবাদ পেয়ে নাম রেখেছিলেন আহমাদ । এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) নিজেই বলেছেন, (আরবি) যমীনে আমার নাম মুহাম্মাদ এবং আকাশে আহ্মাদ। তাওরাতে মুহাম্মাদ এবং ইঞ্জিলে আহমাদ নাম রয়েছে। অন্যত্র, আমি মুহাম্মাদ, আমি আহমাদ ও আমি হাশের । আবার রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, আমার পাঁচটি নাম রয়েছে; আমি মুহাম্মাদ ও আহমাদ। আমি আল-মাহী, আল-হাশির, আল-আকিব । হযরত হাসান বিন ছাবিত (রাঃ) তার কবিতায় লেখেনÑ আল্লাহ তার আরশের চার পাশের ভিড় করা ফেরেশতারা এবং সকল পবিত্র সত্তাগণ বরকত বিশিষ্ট আহমাদের উপর দরূদ পাঠ করেন । আর কিয়ামতের ময়দানে শাফা’আতের স্থানে রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ)-এর নাম হবে মাহমূদ।
ভাগবত পুরানে রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ)-কে নরাশংস প্রশংসিত বলা হয়েছে। যার আরবী প্রতি শব্দ মুহাম্মাদ। আবার কীরি হ’ল আহমাদ নামের প্রতিশব্দ। ঋস্বেদের ভাষায়Ñ যো ব্রাহ্মনো মাঘ নস্য কীরে সংস্কৃত ভাষায় কীরি শব্দের বাংলা অর্থ-ঈশ্বরের প্রশংসাকারী। আর আরবী প্রতিশব্দ হ’ল আহমাদ। আর কল্কি অবতার অর্থ হ’ল-খাতামুন্নাবিয়ীন বা শেষ নবী।
প্রশ্ন হতে পারে : ঈশ্বরের প্রশংসাকারী সকল ব্যক্তিই কি আহমাদ ? এর জবাব হ’ল- আহমাদ শব্দটি রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ)-এর জন্যই নির্দিষ্ট ছিল। মহান আল্লাহর ভাষায় হযরত ঈসা (আঃ) কর্তৃক আহমাদ নামের স্বাক্ষ্য দান وَمُبَشِّرًا بِرَسُولٍ يَأْتِي مِنْ بَعْدِي اسْمُهُ أَحْمَدُ فَلَمَّا جَاءَهُمْ بِالْبَيِّنَاتِ قَالُوا هَذَا سِحْرٌ مُبِينٌ এবং আমি এমন একজন রাসূলের সুসংবাদদাতা যিনি আমার পরে আগমন করবেন। তার নাম আহমাদ (আছ-ছাফ-৬১/০৬)।
মুহাম্মাদ বিন ইসাহাকের (মৃঃ-৭৬৮) উদ্ধৃতি দিয়ে ইবনে হিশাম (মৃঃ-৮২৮) জোন লিখিত ইঞ্জিলের (অধ্যায়-১৫; স্ত্রোত-২৩-২৭; এবং অধ্যায়-১৬; স্ত্রোত-০১) সম্পূর্ণ অনুবাদ করেছেন। সেই অনুবাদের মধ্যে তিনি গ্রীক শব্দ ফারক্লিত (Paracletusy/ Periclytos) ব্যবহার করার পরিবর্তে মুনহান্নামা শব্দ ব্যবহার করেছেন। তারপর তারা উভয়ে ব্যাখ্যায় বলেন যে, মুনহান্নামার অর্থ সুরিয়ানী ভাষায় মুহাম্মাদ এবং গ্রীক ভাষায় Periclytos ইঞ্জিল শরীফে হযরত ঈসা (আঃ) সুসংবাদ দিয়েছেন, এরপরে আমি তোমাদের সাথে বেশী কথা বলবনা, কারণ দুনিয়ার দলপতি (মুহাম্মাদ) আসছে। তার কিছুই আমার মধ্যে নেই । তাছাড়া রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ)-এর আগমন বার্তা পূর্বক্ত ঐশী কিতাবে উল্লেখ ছিল বলেই পাদ্রী বুহাইর (জারজিস), ওরাকা বিন নওফেল এবং বাদশা নাজ্জাশী রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) কে বিশেষ বৈশিষ্ট দ্বারা চিনতে পেরেছিলেন।
পিতৃ পরিচয় :
রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ)-এর পিতার নাম আব্দুল্লাাহ ইবনে আব্দুল মোত্তালেব (শায়বা) ইবনে হাশেম (আমর) ইবনে আব্দুল মান্নাফ ইবনে কোসাই ইবনে কিলাব । মাতার নাম আমিনা বিনতে ওহাব ইবনে আব্দুল মান্নাফ ইবনে কোসাই ইবনে কিলাব । তিনি বনূ যাহরা গোত্রের সরদার কন্যা ছিলেন ।
ভাগবত পুরানে রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ)-এর পিতার নাম বিষ্ণূ যশস, বিষ্ণূ ভাগত এবং মাতার নাম সুমতি, সোমবতি। কল্কি পুরানের ভাষায় : ভূবনে বিষ্ণূ যশস : কল্কি প্রাদুর্ভবিষাতি। অর্থ হ’ল- ভবিষ্যতে আগত কল্কি অবতারের পিতার নাম বিষ্ণূ যশস । বিষ্ণূ +যশস=ঈশ্বর+ভক্ত=আল্লাহ্+আব্দ= আব্দুল্লাহ। বিষ্ণূ +ভাগত=ঈশ্বর+দাস=আল্লাহ্+আব্দ=আব্দুল্লাহ এখানে সংস্কৃত যশস ও ভাগত শব্দের আরবী প্রতিশব্দ আব্দ।
অন্যত্র, পুরানের ভাষায় : সুমাতাং বিষ্ণূ যশসা গর্ভ মাধও বৈষ্ণবস্। অর্থ হ’ল- তার পিতার নাম বিষ্ণূ যশস ও মাতার নাম সুমতি (সোমবতি) হবে । সু+মতি=শান্তি+আত্মা=আমিনা। আমিনা অর্থ– শান্তিওয়ালী, তথা শান্তির আত্মার অধিকারিনী। এ প্রসঙ্গে F.R.Kurishi রচিত গ্রন্থ The Religion of Humanity -তে কল্কি পুরানের ১২ অধ্যায় থেকে বিশেষ উদ্ধৃতাংশ হ’ল- জগৎ গুরু বিষ্ণূ ভাগত ও সুমতির ঔরসে জন্ম গ্রহণ করবেন ।
জন্ম তারিখ ও সময় :
রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) ৯ই রবিউল আওয়াল সোমবার, মোতাবেক ২০ অথবা ২২শে এপ্রিল ৫৭১ খ্রীষ্টাব্দে; বসন্ত কালে সুবহে সাদিকের পর সূর্যোদয়ের পূর্বে জন্ম গ্রহণ করেন । সেই বছর ৫৫ দিন পূর্বে হাতি যুদ্ধের ঘটনাটি ঘটেছিল এবং সে সময় সম্রাট নওশেরওয়ার সিংহাসনে আরহনের ৪০ বছর পূর্তি হয়ে ছিল । কল্কি পুরানের ভাষায়:- দ্বাদশ্যাং শুষ্ক পক্ষস্য মাধবে মাসি মাধবম, অর্থ হ’ল- কল্কি অবতারের জন্ম শুষ্ক পক্ষের দ্বাদশ তিথির মাধব (বৈশাখ) মাসে হবে।
বিক্রমী ক্যালেন্ডারের মতে, মাধব বলতে বৈশাখকে বসন্তের মাস বলা হয়। বসন্তের আরবী শব্দ রবি অর্থাৎ ৯ রবিউল আওয়াল মাস। ঋ.জ.কঁৎরংযর তার গ্রন্থে লিখেছেন, ১২ই বৈশাখ সোমবার সূর্যোদয়ের দু’ঘন্টা পরে তার আগমন ঘটবে । ভারতীয় সময় মতে, জন্মের সময় সূর্যোদয়ের দু’ঘন্টা পর হ’লে আরব দেশে সেই সময় হবে ২ ঘন্টা পূর্বে অর্থাৎ সুবহে
সাদিকের পর সূর্যোদয়ের পূর্বে। কেননা, ভারতের গ্রীনিচমান ৭৫ ডিগ্রি এবং আরবদেশের গ্রীনিচমান ৪৫ ডিগ্রিতে অবস্থিত। অর্থাৎ ৩০ ডিগ্রি সমান দু’ঘন্টা সময়ের পার্থক্য।
জন্ম স্থান :
রাসূলুল্লাহ্(ছাঃ) পবিত্র মক্কা নগরী তথা নিরাপদ শান্তির নগরে জন্ম গ্রহণ করেন ৩২.। মহান আল্লাহ্ এই নগরীকে নিরাপদ ও শান্তির নগরী বলেছেন : নিরাপদ (মক্কা) শহরের শপথ (ত্বীন-৯৫/০৩)। জাহেলিয়াতের যুগেও এই মক্কা নগরী ছিল পবিত্র, শান্তি ও নিরাপত্তার স্থান। এখানে সকল প্রকার যুদ্ধ বিগ্রহ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ নিষিদ্ধ ছিল এবং তা মহাপাপ বলে গণ্য হত। কল্কি পুরানের ভাষায় : শম্ভলে বিষ্ণূ যশাসে গৃহে প্রাদুর্ভাবামাহম। অর্থ হ’ল- শম্ভল শহরে প্রধান পুরোহিত গৃহে তিনি জন্ম গ্রহণ করবেন । শম্ভল সংস্কৃত শব্দ। যার অর্থ হ’ল- শাস্তি, নিরাপদ। আরবী ভাষায় এই নগরীকে হেরেম শরীফ Ñ পবিত্র সম্মানিত স্থান, দারুল আমানÑ নিরাপদ স্থান, বালাদুল আমীন- শান্তি ও নিরাপদ শহর পবিত্র মক্কা নগরী।
কল্কি পুরানের ভাষায় অনুযায়ী পৃথিবীকে ছয়টি অংশে বিভক্ত করা হয়েছে। যেমন: জাম্বু, শাক, কারুঞ্চ, কাশ, শাকলী ও সালমান (শম্ভল)দ্বীপ। F.R.Kurishi রচিত গ্রন্থ The Religion of Humanity তে লেখেন, শম্ভল বা সালমান দ্বীপের রাজ নন্দীনীর সাথে তার বিবাহ হবে । আর শম্ভল দ্বীপ হ’ল পবিত্র মক্কা নগরী। সালমান আরবী শব্দ। সংস্কৃত ভাষায় এর অর্থ শম্ভল এবং বাংলায় শান্তি, নিরাপদ। অন্যত্র, অর্থবেদের ভাষায়ঃ- নরাশংস উষ্ট্রারস্য প্রবাহনো। অর্থ হ’ল- নরাশংস (মুহাম্মাদ)বাহন হিসেবে উট ব্যবহার করবেন । মহানবী (ছাঃ)-এর জন্মভূমি মরুভূমি এলাকা মক্কা নগরী এবং তিনি সেখানে বাহন হিসেবে উট ব্যবহার করেছেন। তাছাড়া হিজরতের সময় হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর উটের পিঠে করে রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) মদীনায় প্রবেশ করেন । অতএব, শম্ভল দ্বীপে যিনি জন্ম গ্রহণ করবেন তিনি আর কেহ নয়, তিনি হলেন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)।
বিবাহ ও বার জন পত্নী : রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) ২৫ বছর বয়সে বিবি খাদীজা (রাঃ) -এর সাথে প্রণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। তখন তার বয়স ছিল ৪০ বছর। এই বিবাহের পর তিনি ২৫ বছর জীবিত ছিলেন । রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) বিবাহের পূর্বে বিবি খাদীজা (রাঃ) –এর প্রতিনিধি হয়ে ব্যবসা দেখাশুনা করতেন। তার ব্যবসায় উত্তরোত্তর মুনাফা দেখে এবং তার কৃতদাস মাইসারের নিকটে রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) -এর সততা, সত্যবাদিতা, বিশ্বস্ততা ও উত্তম গুণাবলীর কথা শুনে বিস্মিত হন। তখন তিনি মনের গোপন কথা তার বান্ধবী নাফিসা বিনতে মুনব্বিহরের কাছে ব্যক্ত করেন। নাফিসা রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) -এর নিকটে সমস্ত কথা খুলে বললেন। রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ)-এতে রাজি হ’লেন এবং তার চাচাদের সাথেও এ ব্যপারে পরামর্শ করলেন। তারা বিয়ের পয়গাম পঠালেন এবং কিছু দিনের মধ্যে বিয়ে হয়ে যায়। এ বিয়েতে বনি হাশেম ও মুযার গোত্রের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন । বিবি খাদীজা (রাঃ) যতদিন জীবিত ছিলেন, ততদিন রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) অন্য কারো সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হননি ।
এ প্রসঙ্গে F.R.Kurishi তার গ্রন্থে লিখেছেন, সালমান দ্বীপের (আরব) রাজনন্দীনীর (খাদিজার) সাথে নরাশংসের (মুহ্ম্মাাদ) বিবাহ হবে। বিয়ে অনুষ্ঠানে তার চাচা ও তিন ভাই উপস্থিত থাকবেন । উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে তার চাচা আবু তালেব ও তিন ভাই হযরত জাফর, আক্বীল ও আলী (রাঃ)-এর বর্ণনা রয়েছে। বিবি খাদীজা (রাঃ) নবুওয়াতের দশম বছর রমযান মাসে ইন্তেকাল করেন ।
রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ)-এর পরবর্তী জীবনে ১৪ বছর (৫০-৬৩) ১১টি বিবাহ করেন। প্রশ্ন হতে পারে এত অল্প সময়ে তিনি এতবেশী বিয়ে করেছিলেন কেন? রাসূলুল্লাহ্ (রাঃ) এ প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, (আরবী) আমার শরীরে ৪০ জন বেহেশতী পুরুষের শক্তি রয়েছে ।
রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ)-এর ১২ জন স্ত্রীর নাম ও বিয়ের সন নিম্নে তুলে ধরা হ’ল-
১. হযরত খাদীজা (রাঃ)- ৫৯৬ খ্রীঃ।
২. হযরত সওদা বিনতে জাম’আ (রাঃ)- নবুওয়াতের দশম বছর।
৩. হযরত আয়েশা বিনতে আবু বকর (রাঃ)- নবুওয়াতের একাদশ বছর।
৪. হযরত হাফসা বিনতে ওমার (রাঃ)- তৃতীয় হিজরী।
৫. হযরত যয়নব বিনতে খোযায়মা (রাঃ)- চতুর্থ হিজরী।
৬. হযরত উম্মে সালমা হিন্দ বিনতে আবি উমাইয়া (রাঃ) – চতুর্থ হিজরী।
৭. হযরত যয়নব বিনতে জাহাশ ইবনে রিয়াব (রাঃ) – পঞ্চম হিজরী।
৮. হযরত যুয়াইরিয়া বিনতে হারেস (রাঃ) – পঞ্চম হিজরী।
৯. হযরত উম্মে হাবিবা বিনতে আবু সুফিয়ান (রাঃ)- সপ্তম হিজরী।
১০.হযরত সাফিয়া বিনতে হুয়াই (রাঃ)- সপ্তম হিজরী।
১১. হযরত মাইমূনা বিনতে হারেস (রাঃ)- সপ্তম হিজরী।
১২. হযরত রায়হানা বিনতে আমর ইবনে খানাক্বাহ (রাঃ)- ষষ্ট হিজরী।
হযরত রায়হানা বনু কোরায়যা গোত্রের একজন দাসী ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে ষষ্ট হিজরীতে মুক্ত করেন এবং বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন । বিদায় হজ্জ পালন শেষে মদীনায় ফিরে আসার পথে মৃত্যু হয় এবং বাকী গোরস্থানে দাফন করা হয়। রাসূলুল্লাহ্ (রাঃ)-এর বিবিদের সংখ্যা সম্পর্কে অর্থবেদে বলা হয়েছেঃ- “বধূমতো দ্বিদশ”। অর্থ হ’ল- তার বার জন পত্নী হবেন ।
শিক্ষা ও নবুওয়াত :
রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) প্রতিষ্ঠানিক কিংবা কোন পন্ডিত শিক্ষকের নিকটে গিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করেননি। মহান আল্লাহ তাকে উম্মী (নিরক্ষর) করে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তাকে যতটুকু ঞ্গান দান করেছেন,ততটুকু তিনি প্রচার করেছেন। তার বিধানদাতা মহান আল্লাহ, কিন্তু শিক্ষক ছিলেন হযরত জিব্রাঈল (আঃ)। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,(আরবি) আর তিনি প্রবৃত্তির তাড়নায় কোন কথা বলেন না। কুরআন ওহী যা প্রত্যাদেশ হয়। তাকে শিক্ষা দান করে এক শক্তিশালী ফেরেশতা (নাজম-৫৩/৩-৫)। এ প্রসঙ্গে F.R. Kurishi রচিত গ্রন্থ The Religion of Humanity -তে লেখেন, In a cave Pars Ram will educate him. অর্থাৎ পরস্ রাম এক গুহায় তাকে শিক্ষা দেবেন । এখানে পরস অর্থ- কুঠার, রাম অর্থ- স্রষ্টা বা আল্লাহ। পরস রাম অর্থ- আল্লাহর কুঠার বা আল্লাহর শক্তি তথা আল্লাহর শক্তিশালী ফেরেশতা হযরত জিব্রাঈল (আঃ) কে বুঝানো হয়েছে ।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) -এর শিক্ষা জীবন তথা নবুওয়াত শুরু হয়, তার বয়স যখন ৪০ বছর ০৬ মাস ১২ দিন । হাফেয ইবনে হাজার লিখেছেন, ৪০ বছর ০১ দিন বয়সে স্বপ্নের মাধ্যমে নবুওয়াতের সূচনা হয়েছিল। কিন্তু জাগ্রত অবস্থায় তার নিকটে হযরত জিব্রাঈল (আঃ) -এর মাধ্যমে প্রথম ওহী এসেছিল রমযান মাসে ২১ তারিখ । তাছাড়া রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) -এর জন্ম, মৃত্যু ও নবুওয়াত প্রপ্তীর দিন ছিল সমোবার। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এর নবুওয়াত প্রাপ্তীর ঘটনা এরকম ছিল- তিনি প্রায়ই পানি ও ছাতু নিয়ে মহর হতে কয়েক মাইল দুরে এক নির্জন স্থান হেরা পর্বতের গুহায় ইবাদতে মগ্ন থাকতেন। ঐ গুহার দৈর্ঘ্য চার গজ ও প্রস্থ ছিল পৌনে দু’গজ ।
এভাবে চলে যায় ছয় মাস এগার দিন। হযরত আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেন, একদিন হযরত জিব্রাঈল (আ:) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) -এর নিকটে আগমন করেন এবং বলেনঃ পড় اقرا তিনি বললেন, আমি পড়তে জানি না হযরত জিব্রাঈল (আঃ) তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে সজোরে চাপ দিলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আমার সব শক্তি যেন নিংড়িয়ে নেয়া হ’ল। এরপর হযরত জিব্রাঈল (আঃ) তাকে ছেড়ে দিয়ে বললেনঃ পড় اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ () خَلَقَ الْإِنْسَانَ مِنْ عَلَقٍ () اقْرَأْ وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُ () الَّذِي عَلَّمَ بِالْقَلَمِ () عَلَّمَ الْإِنْسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ তিনি আবারও বললেন, আমি তো পড়তে জানি না। পূনরায় হযরত জিব্রাঈল (আঃ) তাকে অনুরূপ চাপ দিলেন এবং বললেন, পড়। রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) এবারও বললেন, আমি তো পড়তে জানি না। হযরত জিব্রাঈল (আঃ) তৃতীয় বার তাকে জড়িয়ে ধরে অনুরূপ চাপ দিলেন এবং বললেনঃ (আরবি) পড়, তোমার প্রভুর নামে। যিনি মানুষকে এক ফোটা জমাট বাধা রক্ত থেকে সৃষ্টি করেছেন (আলাক্ব–৯৬/১-৫)।
এই আয়াতগুলো নাযিল হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) ঘরে ফিরে বিবি খাদীজা (রাঃ)-এর নিকটে সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন। সব শুনে তিনি তার চাচাত ভাই ওরাকা বিন নওফেলে নিকটে গিয়ে সব খুলে বললেন। ওরাকা হিব্র“ ভাষায় ইঞ্জিল পড়তে ও লিখতে পারতেন। তিনি বললেন এই সেই দূত যিনি হযরত মূসা (আঃ)-এর নিকটে ওহী নিয়ে এসেছিলে। হায়, আমি যদি সেই সময় বেচে থাকতাম, যখন তোমার কওম্ তোমাকে বের করে দিবে। আর যদি সেই দিন পর্যন্ত বেচে থাকি, তবে অবশ্যই তোমাকে সাহায্য করব। এর কিছু কাল পরে তিনি ইন্তেকাল করেন । এভাবে রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) -এর নবুওয়াতের সূচনা হয় এবং দীর্ঘ ২৩ বছর যাবৎ পবিত্র কুরআন নাযিল হতে থাকে।
লাইলাতুল্ মি’রাজ :
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বশরীরে বায়তুল্লাহ্ হতে বায়তুল মূকাদ্দাস এবং এখান থেকে উর্ধ্বলোকে ভ্রমন করেন। মি’রাজের তারিখ নিয়ে বিশেষ মতান্তর রয়েছে। তবে গ্রহণযোগ্য মত হ’ল ৬২১ খ্রীঃ মোতাবেক নবুওয়াতের দশম বছর রজব মাসের ২৭ তারিখ রাতে মি’রাজ সংঘটিত হয় । অর্থাৎ ২৬ শে রজব দিবাগত রাতে। আর ২৭ শে রজব দিবাগত রাতে মি’রাজ হয়ে ছিল বলে এ উপমহাদেশে যে কথা প্রচলিত আছে তা নিতান্তই দলীল বিহীন ।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে মক্কা মুকাররামা হতে বায়তুল মূকাদ্দাস পর্যন্ত রাত্রীকালীন এ সফর বোরাক্ব যোগে সংঘটিত হয় এবং সেখান থেকে রফরফ নামক সবুজ রঙের গদি বিশিষ্ট পাল্কীতে চড়ে আরশে মু’আল্লাকা পর্যন্ত পৌছে যায়।
মি’রাজে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মহান আল্লাহর নূর দেখে ছিলেন এবং ছয়শত ডানা বিশিষ্ট হযরত জিব্রাঈল (আঃ)কে, জান্নাত, জাহান্নাম, মাক্বামে মাহমূদ, হাউযে কাউসার ইত্যাদি স্বচক্ষে পরিদর্শন করেন। আর উম্মাতে মুহাম্মাদীর জন্য ত্বোহ্ফা হিসেবে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত নিয়ে ফিরে আসেন । হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করে ছিলাম, আপনি কি আপনার পালনকর্তাকে দেখেছেন? তিনি বললেনঃ না, বরং আমি জিব্রাঈল (আঃ) -কে নীচে আবতরণ করতে দেখেছি ।
লাইলাতুল মি’রাজ সম্পর্কে F.R. Kurishi রচিত গ্রন্থ The Religion of Humanity -তে লেখেন, Jagate guru will have a horse or ridding which he will fly over the earth and sevsn Heavens. অর্থাৎ জগৎ গুরু (মুহাম্মাদ) এক বিশেষ অশ্বে আরোহন পূর্বক পৃথিবী ও সপ্তাকাশ পরিভ্রমন করেন । অন্যত্র, ভাগবত পুরানে বলা হয়েছে : “অশ্ব মাশুগমারুহ্য দেবদত্ত জগৎপতি”। অর্থ হ’ল- জগৎ গুরু মুহাম্মাদ দেবতা জিব্রাইল কর্তৃক প্রদত্ত বেগবান অশ্ব পৃষ্ঠে আরোহন করবেন ।
শেষ কথা :
এই উপ-মহাদেশে সর্ব প্রথম যে জাতির আগমন ঘটেছিল তারা সাথে করে যে ধর্ম বিশ্বাস এবং ধর্মগ্রন্থ নিয়ে এসেছে তা কোন এক নবী-রাসূলের দেখানো ধর্মমত ও কিতাব (ছহিফা)। নিশ্চয়ই অন্তরে ছিল যে কোন ধর্ম বিশ্বাস, হোক তা একেশ্বরবাদ কিংবা একাধিকেশ্বরবাদ। পরবর্তীতে সেই জাতি নিজেদের খেয়াল খুশি মত ঐ কিতাব বিকৃত করেছে এতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ সমস্ত নবী-রাসূল একত্ববাদ সৃষ্টিকর্তার পবিত্রতা ঘোষনা করেছেন। মূর্তি পূজাসহ সকল অংশীদারিত্ব থেকে মানব জাতিকে একেশ্বরবাদের দিকে সর্বদা ডেকেছেন এবং প্রতিফল দিবসের ভয়াবহতা সম্পর্কে অবহিত করেছেন। অথচ হিন্দুরা আজও প্রতিমা পূজা পার্বনে বিশ্বাসী। যা তাদের ধর্ম শাস্ত্রের ঘোর বিরোধী অনুষ্ঠান, “একাম এবাদ্বিতীয়ম”
অর্থাৎ “তিনি কেবল একজন ও অদ্বিতীয়” অন্যত্র, “একং ব্রহ্ম দ্বিতীয়ং নাস্তি, নেহ নানাস্তি কিঞ্চন” অর্থাৎ ‘বিশ্ব প্রতিপালক এক, তিনি ব্যতীত কেহ নেই’ । “না তছ্য প্রতিমা অস্তি” অর্থাৎ ‘স্রষ্টার কোন প্রতিমা নেই’ অন্যত্র, “নৈনাম উর্ধভাব না তির্যনকাম না মধ্যে না পরিজাগ্রভাত না তস্য প্রাতিমে অস্তি যস্য নম মহত ইয়াছা” অর্থাৎ “ তাঁর কোন প্রতিকৃতি নেই এবং তাঁর নাম মহিমান্বিত” । “মা চিদান্যদভি শাংসত” অর্থাৎ ‘স্রষ্টার সাথে কাউকে শরীক করে ডেকো না বা অংশীদার কর না’ ।
অন্যদিকে তাদের ধর্মশাস্ত্র বেদ-পুরানে ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয় এবং কল্কি অবতার বা শেষ নবী, নরাশংস হযরত মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর আবির্ভাব ও তার সার্বিক আচরণবিধি বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং এ বর্ণনা ও রচনা কোন জ্যোতিষি বা মনীষীর নয়। বরং নিশ্চয়ই এ হ’ল মহান আল্লাহ্র জানিয়ে দেয়া ঐশী বাণী। মহান আল্লাহ্ বলেন, وَلَكِنْ رَسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ
“বরং তিনি হ’লেন আল্লাহর রাসূল ও সর্বশেষ নবী (আহযাব–৩৩/৪০)। সকল মতাদর্শের (ধর্মের) উপর এ’কে (ইসলাম) বিজয়ী করার জন্য; যদিও মুশরিকরা এ’কে অপছন্দ করে (সাফ্ফাত–৩৭/৯) কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানেনা”(সাবা–৩৪/২৮)। আমরা পৃথিবীর সকল মানুষ শেষ নবীর জীবনাদর্শে জীবন পরিচালিত করি। কেননা, রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) বলেছেন, (আরবি) “যদি আজ মূসা বেঁচে থাকতেন তাহ’লে আমার অনুস্বরণ করা ব্যতীত তার কোন উপায় থাকত না” ।
আর পৃথিবীতে যতগুলো ধর্মমত রয়েছে তন্মধ্যে ইসলামই একমাত্র আল্লাহর মনোনীত পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান, বাঁকী সকল ধর্মই বাতিল। যেমন মহান আল্লাহ্ বলেন, إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ “ নিঃসন্দেহে ইসলামই আল্লাহর নিকট একমাত্র জীবন ব্যবস্থা (ইমরান-৩/১৯) এবং “তিনি (আল্লাহ্) তোমাদেরকে মনোনীত করেছেন এবং ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন সংকীর্ণতা রাখেননি। তোমরা তোমাদের পিতা ইবরাহীমের ধর্মে কায়েম থাকো। তিনিই তোমাদের নাম মুসলমান রেখেছেন পূর্বেও এবং এই কুরআনেও, যাতে তোমাদের রাসূল তোমাদের জন্যে সাক্ষ্যদাতা এবং তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও সমস্ত মানব জাতির জন্যে” (হজ্জ-২২/৭৮)। আলোচ্য প্রবন্ধ থেকে এটাই শিক্ষা নিতে পারি পৃথিবীর যত ধর্মমত তা কালের প্রেক্ষাপটে সত্য। কিন্তু বর্তমানে আমাদের সামনে যে ইসলাম তা পূর্বের সকল ধর্মমতকে রহিত করেছে। বিধায় আমরা সকল ভেদাভেদ ভুলে শান্তির ধর্ম ইসলাম তথা পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে নিজেদের জীবন পরিচালিত করি। মহান আল্লাহ আমাদের হেদায়েত দান করত: সঠিক পথে চলার সহায়ক হউন। আমিন !
ইসলামের ইতিহাস সবাই জানা,আরবে বা এ ভূবনে ইসলাম নামে কোন জাতি ধমে'র লোক বসবাস করতো না।মোহামমদ আসার পর ৫৭০খিঃদের অনেক পরে মোহাঃ এই ধম'তৈরী করে।তার চাচা তার ধম'গহন করেনী।এক করে সাহাবী যোগার করে ডাকাত দল তৈরী করে জোর করে মানুষের উপর জুলুম চালাত।৬বছরের শিশু আয়শাকে য়ে বিয়ে করতে পারে সে কখনও নবী হতে পারেনা।
১৩টা বিয়ে পাগল ছারা কে করতে পারে।সব বিবিরা তাকে ছেরে চলে গিয়েছিল।আরবের লোকেরা বাংলাদেশ থেকে কাজের লোক নিয়ে গিয়ে ধষ'ন করে।এটাই তাদের চরিএ
সনাতন এক মাএ ধম' ।যা আছে আগামীতে থাকবে।