আদম (আঃ)-কে জান্নাত থেকে বের করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে সফলতা অর্জন করে। আদম (আঃ)-কে সিজদা না করায় মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ইবলীসের প্রতি ছিল চরম অভিশাপ। যার ফলশ্রুতিতে ইবলীস বা শয়তানের মানব জাতির সাথে চির শত্রুতা।
জাত বা বংশ :
শয়তান মানুষ ও জিন উভয় শ্রেণীভুক্ত। তবে নেতা বা মূল সরদার হ’ল ইবলীস।[1] মহান আল্লাহ বলেন, وَكَذَلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا شَيَاطِيْنَ الْإِنْسِ وَالْجِنِّ ‘এভাবে আমরা প্রত্যেক নবীর জন্য মানুষ ও জিনের মধ্য থেকে বহু শয়তানকে শত্রুরূপে নিযুক্ত করেছি। তারা প্রতারণার উদ্দেশ্যে একে অপরকে চাকচিক্যপূর্ণ কথা দ্বারা প্ররোচনা দেয়’ (আন‘আম ৬/১১২)। ইবলীস জিন জাতির অন্তর্ভুক্ত ছিল। আদম (আঃ)-কে সিজদার আদেশ এই ইবলীসই অমান্য করেছিল। আল্লাহ বলেন,فَسَجَدُوْا إِلَّا إِبْلِيْسَ كَانَ مِنَ الْجِنِّ فَفَسَقَ عَنْ أَمْرِ رَبِّهِ ‘তোমরা সিজদা কর আদমকে। তখন তারা সবাই সিজদা করেছিল, ইবলীস ব্যতীত। সে ছিল জিনদের অন্তর্ভুক্ত। ফলে সে তার প্রভুর আদেশ অমান্য করল’ (কাহফ ১৮/৫০)। এতে বুঝা যায় শয়তান জিন জাতের অন্তর্ভুক্ত।
আকার-আকৃতি :
এদের নির্দিষ্ট কোন আকার-আকৃতি নেই। প্রয়োজন মোতাবেক স্বেচ্ছায় নিজেদের আকার পরিবর্তন করতে পারে। শুধুমাত্র রাসূল (ছাঃ)-এর আকার ধারণ করতে পারে না। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,وَمَنْ رَآنِي فِي المَنَامِ فَقَدْ رَآنِي، فَإِنَّ الشَّيْطَانَ لاَ يَتَمَثَّلُ فِيْ صُورَتِيْ- ‘যে আমাকে স্বপ্নে দেখে সে ঠিক আমাকেই দেখে। কারণ শয়তান আমার আকৃতি ধারণ করতে পারে না’।[2]
ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, অনেকে মনে করে শয়তান লম্বা শিং, বিশাল দেহ, উজ্জ্বল অগ্নিঝরা দু’টি চোখ, লম্বা লেজ বিশিষ্ট এক প্রাণী। কিন্তু এর কোন দলীল প্রমাণ নেই’।[3] তবে বিভিন্নভাবে শয়তানের আকার-আকৃতি বর্ণিত হয়েছে। যেমন-
শয়তানের শিং :
উকবা বিন আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ইয়ামনের দিকে লক্ষ্য করে বলেন, …. ‘বেদুঈনদের মধ্যে যারা উট নিয়ে ব্যস্ত থাকে এবং ধর্মের প্রতি মনোযোগী হয় না, যেখান থেকে শয়তানের শিং দু’টি বের হয় তা হ’ল রাবী‘আহ ও মুযার গোত্রদ্বয়ের মাঝে’।[4]
আমর ইবনু আনবাসা আস-সুলামী বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘সূর্য শয়তানের দুই শিং-এর মাঝখান দিয়ে উদিত হয় এবং ঐ সময় কাফেররা শয়তানের পুঁজা করে’।[5]
বকরীর আকৃতি :
আনাস বিন মালেক হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,رُصُّوْا صُفُوْفَكُمْ وَقَارِبُوْا بَيْنَهَا وَحَاذُوْا بِالْأَعْنَاقِ، فَوَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ إِنِّيْ لَأَرَى الشَّيْطَانَ يَدْخُلُ مِنْ خَلَلِ الصَّفِّ كَأَنَّهَا الْحَذَفُ ‘তোমরা কাতারের মধ্যে পরস্পর মিলে মিশে দাঁড়াও। এক কাতার অপর কাতারের নিকটে কর এবং কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াও। যাঁর হাতে আমার জীবন তাঁর শপথ! আমি শয়তানকে ছালাতের কাতারের মধ্যে বকরীর ন্যায় প্রবেশ করতে দেখেছি’।[6]
কাল কুকুরের আকৃতি :
আবূ যার (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, الْكَلْبُ الْأَسْوَدُ شَيْطَانٌ ‘কাল কুকুর হ’ল শয়তান’।[7]
শয়তানের মাথা :
আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, (যে কূপে রাসূলের জন্য যাদু করা হয়) সে কূপের পানি মেহেদীর পানির মত (লাল) এবং তার পাড়ের খেজুর গাছের মাথাগুলো শয়তানের মাথার মত’।[8]
মহান আল্লাহ বলেন,إِنَّهَا شَجَرَةٌ تَخْرُجُ فِيْ أَصْلِ الْجَحِيْمِ، طَلْعُهَا كَأَنَّهُ رُءُوْسُ الشَّيَاطِيْنِ ‘এটি এমন বৃক্ষ, যা উদ্ধত হয়েছে জাহান্নামের তলদেশ থেকে। এর কলিগুলো যেন শয়তানের মাথা’ (ছাফ্ফাত ৩৭/৬৪-৬৫)। মূলতঃ এটা জাহান্নামী ব্যক্তিদের খাবার হিসাবে প্রস্ত্তত রাখা যাক্কুম গাছ। যার মাথা শয়তানের মাথার মত।
শয়তান সৃষ্টির উপাদান :
শয়তান তথা ইবলীস সৃষ্টির উপাদান হিসাবে আল্লাহ তা‘আলা আগুনের কথা উল্লেখ করে বলেন,قَالَ مَا مَنَعَكَ أَلَّا تَسْجُدَ إِذْ أَمَرْتُكَ قَالَ أَنَا خَيْرٌ مِنْهُ خَلَقْتَنِيْ مِنْ نَارٍ وَخَلَقْتَهُ مِنْ طِيْنٍ- ‘আল্লাহ বললেন, আমি যখন তোমাকে নির্দেশ দিলাম, তখন কোন বস্ত্ত তোমাকে বাধা দিল যে তুমি সিজদা করলে না? সে বলল, আমি তার চেয়ে উত্তম। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন আগুন থেকে এবং তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে’ (আ‘রাফ ৭/১২)। তিনি আরো বলেন,وَالْجَانَّ خَلَقْنَاهُ مِنْ قَبْلُ مِنْ نَارِ السَّمُومِ، ‘এর পূর্বে জিন জাতিকে সৃষ্টি করেছি অগ্নিশিখা হ’তে’ (হিজর ১৫/২৭)। অন্যত্র তিনি বলেন, وَخَلَقَ الْجَانَّ مِنْ مَارِجٍ مِّنْ نَارٍ ‘এবং জিনকে সৃষ্টি করেছেন অগ্নিস্ফুলিঙ্গ হ’তে’ (আর-রহমান ৫৫/১৫)।
বাসস্থান :
জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ) থেকে শুনেছি তিনি বলেন, নিশ্চয়ই ইবলীসের আসন সমুদ্রের উপরে স্থাপিত, সে লোকদেরকে ফিতনায় লিপ্ত করার জন্য তার বাহিনী প্রেরণ করে। শয়তানের নিকট সর্বাধিক বড় সেই, যে সর্বাধিক ফিৎনা সৃষ্টিকারী’।[9]
শয়তানের মূল আবাসস্থল সমুদ্রে। এছাড়াও তার কিছু থাকার জায়গা রয়েছে। যেমন মানুষের নাকের ছিদ্রে থাকে। নবী করীম (ছাঃ) বলেন,إِذَا اسْتَيْقَظَ أُرَاهُ أَحَدُكُمْ مِنْ مَنَامِهِ فَتَوَضَّأَ فَلْيَسْتَنْثِرْ ثَلاَثًا، فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَبِيتُ عَلَى خَيْشُومِهِ، ‘তোমাদের কেউ যখন ঘুম হ’তে উঠে এবং অযূ করে তখন তার উচিৎ নাক তিনবার ঝেড়ে ফেলা। কারণ শয়তান তার নাকের ছিদ্রে রাত কাটিয়েছে’।[10]
শয়তানের আড্ডাখানা :
বারা বিন আযেব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেন,وَسُئِلَ عَنِ الصَّلَاةِ فِيْ مَبَارِكِ الْإِبِلِ، فَقَالَ: لَا تُصَلُّوْا فِيْ مَبَارِكِ الْإِبِلِ، فَإِنَّهَا مِنَ الشَّيَاطِيْنِ ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হ’ল উটের আস্তাবলে ছালাত আদায় করা সম্পর্কে। তিনি সেখানে ছালাত আদায় করতে নিষেধ করেন। কেননা তা শয়তানের আড্ডাখানা’।[11]
সালমান ফারসী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত। তিনি বলেন,لَا تَكُوْنَنَّ إِنِ اسْتَطَعْتَ، أَوَّلَ مَنْ يَدْخُلُ السُّوْقَ وَلَا آخِرَ مَنْ يَخْرُجُ مِنْهَا، فَإِنَّهَا مَعْرَكَةُ الشَّيْطَانِ، وَبِهَا يَنْصِبُ رَايَتَه- ‘তোমার যদি সম্ভব হয় তবে প্রথম বাজারে প্রবেশকারী হয়ো না এবং সেখান থেকে সর্বশেষ প্রস্থানকারী হয়ো না। কারণ বাজার শয়তানের আড্ডাস্থল। সেখানে সে স্বীয় ঝান্ডা গাড়ে’।[12]
সাঈদ ইবনে আবী সাঈদ আল-মাকবুরী তার পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন। তিনি হাসান ইবনু আলী (রাঃ)-কে ছালাত রত অবস্থায় মাথার উপরাংশে চুল বাধার খোঁপা দেখে তার খোঁপা খুলে দেন। এতে তিনি রাগান্বিত হ’লে আবু রাফে‘ বলেন,
لَا تَغْضَبْ فَإِنِّيْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ : ذَلِكَ كِفْلُ الشَّيْطَانِ يَعْنِيْ مَقْعَدَ الشَّيْطَانِ، يَعْنِيْ مَغْرَزَ ضَفْرِهِ-
‘রাগান্বিত হবেন না। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি এটা শয়তানের আসন। অর্থাৎ পুরুষের মাথার উপরিভাগে চুলের খোঁপা বাধলে তা শয়তানের আড্ডাখানায় পরিণত হয়।[13]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একদা বিছানা প্রসঙ্গে বলেন, একটি বিছানা নিজের জন্য, অপরটি স্ত্রীর জন্য, আরো একটি মেহমানদের জন্য হওয়া দরকার। আর চতুর্থ বিছানাটি শয়তানের জন্য’।[14] অতএব বুঝা যায়, অতিরিক্ত বিছানায় শয়তানের থাকার সুযোগ হয়।
শয়তানের ক্ষমতা :
যখন ইবলীস আদম (আঃ)-কে সিজদা না করার কারণে বিতাড়িত শয়তানে পরিণত হয়ে গেল তখন সে বলল,
أَنْظِرْنِيْ إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُوْنَ، قَالَ إِنَّكَ مِنَ الْمُنْظَرِيْنَ، قَالَ فَبِمَا أَغْوَيْتَنِيْ لَأَقْعُدَنَّ لَهُمْ صِرَاطَكَ الْمُسْتَقِيْمَ، ثُمَّ لَآتِيَنَّهُمْ مِنْ بَيْنِ أَيْدِيْهِمْ وَمِنْ خَلْفِهِمْ وَعَنْ أَيْمَانِهِمْ وَعَنْ شَمَائِلِهِمْ وَلَا تَجِدُ أَكْثَرَهُمْ شَاكِرِيْنَ-
‘আমাকে ক্বিয়ামত দিবস পর্যন্ত অবকাশ দিন। আল্লাহ বললেন, তোমাকে অবকাশ দেওয়া হ’ল। সে বলল, যে আদমের প্রতি অহংকারের কারণে আপনি আমার মধ্যে পথভ্রষ্টতার সঞ্চার করেছেন, সেই আদম সন্তানদের পথভ্রষ্ট করার জন্য আমি অবশ্যই আপনার সরল পথের উপর বসে থাকব। অতঃপর আমি অবশ্যই তাদের কাছে আসব তাদের সামনে, পিছনে, ডাইনে, বামে সবদিক থেকে। আর তখন আপনি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না’ (আ‘রাফ ৭/১৪-১৭)।
অবশেষে শয়তানকে এমন ক্ষমতা দেয়া হয়েছে যে, সে বনী আদমের শিরায় প্রবেশ করতে পারে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
لَا تَلِجُوْا عَلَى المُغِيبَاتِ، فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَجْرِي مِنْ أَحَدِكُمْ مَجْرَى الدَّمِ، قُلْنَا: وَمِنْكَ؟ قَالَ: وَمِنِّي، وَلَكِنَّ اللهَ أَعَانَنِي عَلَيْهِ فَأَسْلَمُ،
‘সবামীর অনুপস্থিতিতে কোন স্ত্রীর নিকট তোমরা প্রবেশ কর না। কেননা শয়তান তোমাদের রক্তনালীতে চলমান রয়েছে। আমরা বললাম, আপনার মধ্যেও? তিনি বললেন, আমার মাঝেও। তবে আল্লাহ তা‘আলা আমাকে তার বিরুদ্ধে সাহায্য করেছেন। ফলে আমি নিরাপত্তা লাভ করেছি’।[15]
শয়তানের দলের লোক :
যারা অসৎ পথে থেকেও মনে করে সৎ পথে আছি তারা মূলত মিথ্যাবাদী। আর এমন মিথ্যাবাদীদের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন,
اسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ فَأَنْسَاهُمْ ذِكْرَ اللهِ أُولَئِكَ حِزْبُ الشَّيْطَانِ أَلَا إِنَّ حِزْبَ الشَّيْطَانِ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ-
‘শয়তান তাদেরকে বশীভূত করে নিয়েছে, অতঃপর আল্লাহর স্মরণ ভুলিয়ে দিয়েছে। তারা শয়তানের দল। সাবধান শয়তানের দলই ক্ষতিগ্রস্ত’ (মুজাদালাহ ৫৮/১৯)।
১. কবুতর দিয়ে খেলাধুলাকারী :
কবুতর দিয়ে খেলাধুলাকারীকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) শয়তান বলেছেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এক ব্যক্তিকে একটি কবুতরের অনুসরণ করতে দেখে বললেন, شَيْطَانٌ يَتْبَعُ شَيْطَانَةً ‘এক শয়তান আরেক শয়তানের পিছে লেগেছে’।[16]
২. মন্ত্র পাঠ করা :
মন্ত্র পাঠ করাকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) শয়তানের কাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন। জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে মন্ত্র পাঠ করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন,هُوَ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ ‘এটি শয়তানের কাজ’।[17]
কেউ যদি কাউকে অভিশাপ দেয় অথবা লাঞ্ছিত করার বদদো‘আ করে সে শয়তানের সাহায্যকারী। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরূপ করতে নিষেধ করেছেন।[18]
৩. শয়তানের মত বসা :
আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন তাশাহহুদের বৈঠকে বসতেন তখন বাম পা বিছিয়ে ডান পা খাড়া করে রাখতেন।وَكَانَ يَنْهَى عَنْ عَقِبِ الشَّيْطَانِ ‘তিনি শয়তানের মত বসতে নিষেধ করেছেন’। (তাহ’ল দুই পায়ের গোড়ালী খাড়া রেখে তার উপরে পাছা রেখে বসা)।[19]
৪. বিছিন্ন হওয়া শয়তানের কাজ :
আবু সা‘লাবা খুশানী (রাঃ) বলেন, লোকেরা যখন কোনস্থানে অবতরণ করতেন, তখন তারা উপত্যকায় ছড়িয়ে যেতেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তোমাদের এ সকল গিরিপথে ও উপত্যকায় বিক্ষিপ্ত হওয়া শয়তানের কাজ। এরপর তাঁরা কখনো কোন মনযিলে অবতরণ করলে একে অপরের সাথে মিলিত হয়ে থাকতেন।[20]
৫. বাম হাতে পান করা :
ইবনে ওমার (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, إِذَا أَكَلَ أَحَدُكُمْ فَلْيَأْكُلْ بِيَمِيْنِهِ، وَإِذَا شَرِبَ فَلْيَشْرَبْ بِيَمِيْنِهِ، فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَأْكُلُ بِشِمَالِهِ، وَيَشْرَبُ بِشِمَالِهِ، ‘তোমাদের কেউ যখন খাবার খায় তখন সে যেন ডান হাত দিয়ে খায় এবং যখন পান করে তখন যেন ডান হাত দিয়ে পান করে। কারণ শয়তান বাম হাত দিয়ে খায় ও পান করে’।[21]
৬. ছালাতে পাথর নাড়াচাড়া করা :
ছালাতের মধ্যে পাথর নাড়াচাড়া করাকে শয়তানের কাজ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি এক ব্যক্তিকে ছালাতে থাকা অবস্থায় পাথরের টুকরা নাড়াচাড়া করতে দেখে বললেন,لَا تُحَرِّكِ الْحَصَى وَأَنْتَ فِي الصَّلَاةِ فَإِنَّ ذَلِكَ مِنَ الشَّيْطَانِ، ‘তুমি ছালাতে থাকা অবস্থায় পাথরের টুকরা নেড়ো না। কারণ তা শয়তানের কাজ’।[22]
উল্লেখিত বিষয়গুলো মানবরূপী শয়তানের কাজ। ফলে যে ব্যক্তি এরূপ কাজে রত থাকবে তারাই শয়তান বা ইবলীসের দলভুক্ত বলে গণ্য হবে। এছাড়াও ছালাতে কোমরে হাত রাখা ব্যক্তি[23], গুপ্ত হত্যাকারী[24], অস্ত্র দ্বারা (কোন মুসলিমকে) ইশারাকারী[25] ও শয়তানের দলভুক্ত।
শয়তান মহান প্রভুর পক্ষ থেকে ক্ষমতা গ্রহণ করার পর মুমিনকে পথভ্রষ্ট করার জন্য রাস্তার মোড়ে মোড়ে বসে থাকে। হাদীছে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ هُوَ ابْنُ مَسْعُودٍ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: خَطَّ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَطًّا بِيَدِهِ، ثُمَّ قَالَ: هَذَا سَبِيل اللهِ مُسْتَقِيمًا. وَخَطَّ عَلَى يَمِينِهِ وَشِمَالِهِ، ثُمَّ قَالَ: هَذِهِ السُّبُل لَيْسَ مِنْهَا سَبِيْلٌ إِلَّا عَلَيْهِ شَيْطَانٌ يَدْعُو إِلَيْهِ. ثُمَّ قَرَأَ: {وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ}
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজ হাতে একটি দাগ দিলেন, অতঃপর বললেন, এটা আল্লাহর সরল সঠিক পথ। এরপর ডানে বামে দাগ কাটলেন এবং বললেন, এই রাস্তাগুলির প্রত্যেকটিতে একজন শয়তান দাঁড়িয়ে আছে। যে মানুষকে তার দিকে আহবান করে থাকে। অতঃপর পাঠ করলেন, ‘এটাই আমার সরল সঠিক পথ, এরই অনুসরণ কর। অন্যান্য পথের অনুসরণ করনা, তা হ’লে (শয়তান) তোমাদেরকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে’ (আন‘আম ৬/১৫৩)।[26]
আয়াতের মর্মে ও হাদীছের ভাষ্যে বুঝা যায় শয়তান রাস্তার মোড়ে মোড়ে বসে মানুষকে তাদের দিকে বিভ্রান্ত করার জন্য আহবান করে থাকে।
শয়তানের চক্রান্ত ও কর্মকান্ড সমূহ :
শয়তানের চক্রান্ত ও কর্মকান্ড কুরআন-হাদীছ হ’তে বিভিন্ন পরিভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে। যা পরিত্যাগ করা প্রতিটি মানুষের জন্য অত্যন্ত যরূরী। নিম্নে সংক্ষেপে বিষয়গুলো আলোকপাত করা হ’ল।
১. اَلْاِغْوَاءُ (বিভ্রান্ত করা, বিপথগামী করা) :
আদম (আঃ)-কে সিজদা না করার কারণে ইবলীস যখন অভিশপ্ত শয়তানে পরিণত হ’ল তখন ঈমানদার বান্দাদেরকে পথভ্রষ্ট করার জন্য প্রতিজ্ঞা করে। মহান আল্লাহ বলেন, وَإِنَّ عَلَيْكَ لَعْنَتِي إِلَى يَوْمِ الدِّينِ، قَالَ رَبِّ فَأَنْظِرْنِي إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ، قَالَ فَإِنَّكَ مِنَ الْمُنْظَرِينَ، إِلَى يَوْمِ الْوَقْتِ الْمَعْلُومِ، قَالَ فَبِعِزَّتِكَ لَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِيْن- ‘আর তোমার প্রতি আমার অভিশাপ রইল বিচারদিবস পর্যন্ত। সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে অবকাশ দিন পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত। তিনি বললেন, বেশ! তুমি অবকাশ প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হ’লে। নির্ধারিত সময়কাল উপস্থিত হওয়ার দিন পর্যন্ত। সে বলল, আপনার ইয্যতের কসম! আমি অবশ্যই তাদের সবাইকে বিপথগামী করব’ (ছোয়াদ ৩৮/৭৮-৮২)।
ইয়ায ইবনু হিমার আল-মুজাশী থেকে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) খুৎবায় বললেন,
أَلَا إِنَّ رَبِّيْ أَمَرَنِيْ أَنْ أُعَلِّمَكُمْ مَا جَهِلْتُمْ، مِمَّا عَلَّمَنِيْ يَوْمِيْ هَذَا، كُلُّ مَالٍ نَحَلْتُهُ عَبْدًا حَلَالٌ، وَإِنِّيْ خَلَقْتُ عِبَادِي حُنَفَاءَ كُلَّهُمْ، وَإِنَّهُمْ أَتَتْهُمُ الشَّيَاطِيْنُ فَاجْتَالَتْهُمْ عَنْ دِيْنِهِمْ، وَحَرَّمَتْ عَلَيْهِمْ مَا أَحْلَلْتُ لَهُمْ-
‘জেনে রাখ আমার রব আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমি তোমাদের শিক্ষা দেই যা তোমরা জান না, যা তিনি আমাকে আজকের এই দিনে শিক্ষা দিয়েছেন। আমি আমার বান্দাকে যে সম্পদ দিয়েছি তা হালাল। নিশ্চয়ই আমি আমার সকল বান্দাদেরকে শিরকমুক্ত একনিষ্ঠ করে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর তাদের নিকট শয়তান এসে তাদেরকে দ্বীন থেকে বিচ্যুত করেছে। তাদের উপর যা হালাল করেছি তা তারা হারাম করেছে’।[27]
মহান আল্লাহ বলেন,أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِيْنَ يَزْعُمُوْنَ أَنَّهُمْ آمَنُوْا بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيْدُوْنَ أَنْ يَتَحَاكَمُوْا إِلَى الطَّاغُوْتِ وَقَدْ أُمِرُوْا أَنْ يَكْفُرُوْا بِهِ وَيُرِيْدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُضِلَّهُمْ ضَلَالًا بَعِيْدًا- ‘তুমি কি তাদের দেখনি, যারা ধারণা করে যে, তারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে যা আপনার উপর নাযিল হয়েছে তার উপর এবং যা আপনার পূর্বে নাযিল হয়েছে তার উপর। তারা ত্বাগূতের নিকট ফায়ছালা পেশ করতে চায়। অথচ তাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল তাকে অস্বীকার করার জন্য। বস্ত্ততঃ শয়তান তাদেরকে দূরতম ভ্রষ্টতায় নিক্ষেপ করতে চায়’ (নিসা ৪/৬০)।
২. পদস্খলন করা :
মহান আল্লাহ বলেন,إِنَّ الَّذِيْنَ تَوَلَّوْا مِنْكُمْ يَوْمَ الْتَقَى الْجَمْعَانِ إِنَّمَا اسْتَزَلَّهُمُ الشَّيْطَانُ بِبَعْضِ مَا كَسَبُوْا وَلَقَدْ عَفَا اللهُ عَنْهُمْ إِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ حَلِيْمٌ- ‘তোমাদের মধ্যে যারা (ওহোদের যুদ্ধে) দু’দলের মুখোমুখি হবার দিন ঘাঁটি থেকে ফিরে গিয়েছিল, তাদের নিজেদের কিছু কৃতকর্মের দরুন শয়তান তাদের প্রতারিত করেছিল, আল্লাহ তাদের ক্ষমা করেছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও সহনশীল’ (আলে ইমরান ৩/১৫৫)।
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ওহোদের যুদ্ধে প্রথম দিকে মুশরিকরা যখন চরমভাবে পরাজিত হয়ে পড়ল, তখন ইবলীস চিৎকার করে (মুসলমানদের) বলল, হে আল্লাহর বান্দাগণ! পিছনের দিকে লক্ষ্য কর। তখন অগ্রবর্তীদল পিছনে ফিরে (শত্রুমনে করে) নিজ দলের উপর আক্রমণ করে একে অপরকে হত্যা করতে লাগল। এমন সময় হুযায়ফা (রাঃ) পিছনে তার পিতাকে দেখতে পেয়ে চিৎকার করে বললেন, এই যে আমার পিতা, আমার পিতা। শেষ পর্যন্ত তাকে হত্যা করে ফেলল।[28] এটা ছিল শয়তানের পদস্খলনের পরিণাম। আল্লাহ তাদেরকে মাফ করে দিয়েছেন।
কখনো কখনো আলেমদের মুখে গোমরাহী কথা বের করে দেয় এই ইবলীস। রাসূল (ছাঃ) বলেন,وَأُحَذِّرُكُمْ زَيْغَةَ الْحَكِيمِ، فَإِنَّ الشَّيْطَانَ قَدْ يَقُولُ كَلِمَةَ الضَّلَالَةِ عَلَى لِسَانِ الْحَكِيم ‘আমি আলেমদের গুমরাহী সম্পর্কে অধিক শংকিত। কেননা শয়তান কখনো কখনো আলেমদের মুখ থেকে গুমরাহী কথা বের করে দেয়’।[29]
ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, إِنَّ أَهْلَ فَارِسَ لَمَّا مَاتَ نَبِيُّهُمْ كَتَبَ لَهُمْ إِبْلِيسُ الْمَجُوسِيَّة ‘যখন পারসিকদের নবী মৃত্যু করেন, তখন ইবলীস তাদের অগ্নিপূজায় লাগিয়ে দেয়। (অর্থাৎ গুমরাহ করে ফেলে)।[30]
৩. الكيدছলনা করা, কৌশল করা :
শয়তান বিভিন্ন কায়দা-কৌশল ও ছলনা করে মানুষকে পথভ্রষ্ট করার চেষ্টা করে। তবে শয়তানের কৌশল খুবই দুর্বল। মহান আল্লাহ বলেন, إِنَّ كَيْدَ الشَّيْطَانِ كَانَ ضَعِيْفًا- ‘নিশ্চয়ই শয়তানের কৌশল একান্তই দুর্বল’ (নিসা ৪/৭৬)। ইউসুফ (আঃ) যখন স্বপ্নে তার ভবিষ্যতের সফলতার ইঙ্গিত পেলেন তখন তার পিতা তাকে বললেন,قَالَ يَا بُنَيَّ لَا تَقْصُصْ رُؤْيَاكَ عَلَى إِخْوَتِكَ فَيَكِيْدُوْا لَكَ كَيْدًا إِنَّ الشَّيْطَانَ لِلْإِنْسَانِ عَدُوٌّ مُبِيْنٌ- ‘পিতা বললেন, ‘বৎস! তোমার ভাইদের সামনে এ স্বপ্ন বর্ণনা কর না। তাহ’লে ওরা তোমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করবে। নিশ্চয়ই শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু’ (ইউসুফ ১২/৫)।
জাবির ইবনে সামুরা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
أَلاَ كُلَّمَا نَفَرْنَا فِى سَبِيلِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ خَلَفَ أَحَدُهُمْ لَهُ نَبِيبٌ كَنَبِيبِ التَّيْسِ يَمْنَحُ إِحْدَاهُنَّ الْكُثْبَةَ أَمَا إِنَّ اللهَ إِنْ يُمَكِّنِّى مِنْ أَحَدٍ مِنْهُمْ إِلاَّ نَكَلْتُهُ عَنْهُنَّ،
‘আমরা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের উদ্দেশ্যে সফর করি, তখন কাফেলার পেছনে তদারককারী হিসাবে এক ব্যক্তিকে নিযুক্ত করা হয়। সে বকরীর মত শব্দ করে এবং সুযোগমত কোন মহিলার সাথে শয়তানী চক্রান্তে যিনায় লিপ্ত হয়।[31]
৪. الوعد (প্রতিশ্রুতি) :
শয়তান মানুষকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ও দিক নির্দেশনা দিয়ে পথভ্রষ্ট করার চেষ্টা করে। আল্লাহ বলেন,
لَعَنَهُ اللهُ وَقَالَ لَأَتَّخِذَنَّ مِنْ عِبَادِكَ نَصِيبًا مَفْرُوضًا، وَلَأُضِلَّنَّهُمْ وَلَأُمَنِّيَنَّهُمْ وَلَآمُرَنَّهُمْ فَلَيُبَتِّكُنَّ آذَانَ الْأَنْعَامِ وَلَآمُرَنَّهُمْ فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلْقَ
اللهِ وَمَنْ يَتَّخِذِ الشَّيْطَانَ وَلِيًّا مِنْ دُونِ اللهِ فَقَدْ خَسِرَ خُسْرَانًا مُبِينًا، يَعِدُهُمْ وَيُمَنِّيهِمْ وَمَا يَعِدُهُمُ الشَّيْطَانُ إِلَّا غُرُورًا، أُولَئِكَ مَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ وَلَا يَجِدُونَ عَنْهَا مَحِيصًا-
‘আল্লাহ তাকে অভিসম্পাত করেছেন। আর সে বলেছিল যে, অবশ্যই আমি তোমার বান্দাদের মধ্য থেকে একটা নির্দিষ্ট অংশকে আমার দলে টেনে নেব। আমি অবশ্যই তাদের পথভ্রষ্ট করব, তাদেরকে মিথ্যা আশ্বাস দেব, তাদেরকে আদেশ দেব যেন তারা পশুর কর্ণ ছেদন করে এবং তাদেরকে আদেশ করব যেন তারা আল্লাহর সৃষ্টি পরিবর্তন করে। বস্ত্ততঃ যে ব্যক্তি আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, সে প্রকাশ্য ক্ষতিতে পতিত হয়। সে তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেয় ও মিথ্যা আশ্বাস দেয়। আর শয়তান তাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয়, তা প্রতারণা বৈ কিছু নয়। ওদের ঠিকানা হ’ল জাহান্নাম। সেখান থেকে তারা অন্য কোন আশ্রয়স্থল পাবে না’ (নিসা ৪/১১৮-১২১)।
তুচ্ছ অন্যায় করলেও শয়তান খুশি হয়। তাই সরাসরি শয়তানের অনুসরণ যেমন ত্যাগ করতে হবে তেমন ছোটখাট অন্যায়ও ত্যাগ করতে হবে। সুলায়মান ইবনে আহওয়াস (রহঃ) তার পিতার সূত্রে বর্ণণা করেন। তিনি বলেন, আমি
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বিদায় হজ্জের ভাষণে বলতে শুনেছি,أَلَا إِنَّ الشَّيْطَانَ قَدْ أَيِسَ أَنْ يُعْبَدَ فِيْ بَلَدِكُمْ هَذَا أَبَدًا، وَلَكِنْ سَيَكُوْنُ لَهُ طَاعَةٌ فِي بَعْضِ مَا تَحْتَقِرُوْنَ مِنْ أَعْمَالِكُمْ، ‘জেনে রেখ! তোমাদের এই শহরে শয়তান নিজের জন্য ইবাদত পাওয়ার ব্যাপারে চিরকালের জন্য নিরাশ হয়ে গেছে। কিন্তু কতগুলো কাজ যা তোমরা তুচ্ছজ্ঞানে করতে গিয়ে শয়তানের আনুগত্য করো, ফলে তাতে সে খুশি হয়’।(ইবনু মাজাহ হা/৩০৫৫)
ছোটখাট অন্যায় করলেও যেহেতু শয়তান খুশি হয় সেহেতু সকল প্রকার অন্যায় থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে হবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে কঠোর হ’তে হবে। যেমন কঠোর ছিলেন ওমর (রাঃ)। আমাদেরও অন্যায়, অনাচার ও শয়তানী কর্মকান্ড থেকে এমন প্রতিবাদী ও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে যেন শয়তান পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। মনে রাখতে হবে শয়তানের যতই শক্তি, ক্ষমতা থাকুক না কেন মুমিনের একটা ছোট দো‘আই তাকে ঘায়েল করতে যথেষ্ট। সুতরাং আমরা শয়তান থেকে বাঁচতে বেশী বেশী দো‘আ করব এবং সৎকাজে মশগূল থাকব। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে শয়তানের চক্রান্ত থেকে হেফাযত করুন- আমীন!
………………………… লেখক : মুহাম্মাদ খাইরুল ইসলাম (গাযীপুর) ………………………….
[1]. ইগাছাতুল লাহফান ফী মাছায়িদিশ শাইত্বান ১/৮।
[2]. বুখারী হা/১১০; মুসলিম হা/২২৬৬।
[3]. ইগাছাতুল লাহফান ফী মাছায়িদিশ শাইত্বান ১/৮।
[4]. বুখারী হা/৩৩০২।
[5]. মুসলিম, আবু দাঊদ হা/১২৭৭।
[6]. আবূদাঊদ হা/৬৬৭; মিশকাত হা/১০৯৩, সনদ ছহীহ।
[7]. মুসলিম হা/৫১০; আবূদাঊদ হা/৭০২; তিরমিযী হা/৩৩৮; নাসাঈ হা/৭৫০।
[8]. বুখারী হা/৫৭৬৩; মুসলিম হা/২১৮৯।
[9]. মুসলিম হা/২৮১৩।
[10]. বুখারী হা/৩২৯৫; মুসলিম হা/২৩৮।
[11]. আবু দাঊদ হা/১৮৪; ইরওয়া হা/১৭৬।
[12]. মুসলিম হা/২৪৫১; রিয়াযুছ ছালেহীন হা/১৮৫১।
[13]. আবুদাঊদ হা/৬৪৬; ছহীহাহ হা/২৩৮৬।
[14]. আবু দাঊদ হা/৪১৪২, সনদ ছহীহ।
[15]. বুখারী হা/৭১৭১; মুসলিম হা/২১৭৫; তিরমিযী হা/১১৭২।
[16]. আবূদাঊদ হা/৪৯৪০; ইবনে মাজাহ হা/৩৭৬৪; মিশকাত হা/৪৫০৬, সনদ ছহীহ।
[17]. আবূদাঊদ হা/৩৮৬৮; মিশকাত হা/৪৫৫৩; ছহীহাহ হা/২৭৬০।
[18]. বুখারী হা/৬৭৭৭।
[19]. মুসলিম হা/৪৯৮; আবূদাঊদ হা/৭৮৩।
[20]. আবূদাঊদ হা/২৬২৮; মিশকাত হা/৩৯১৪, সনদ ছহীহ।
[21]. আবূদাঊদ হা/৩৭৭৬; ছহীহাহ হা/১২৩৬।
[22]. নাসাঈ হা/১১৬০; আবূদাঊদ হা/৯৪৫।
[23]. বুখারী হা/১২২০; মুসলিম হা/৫৪৫।
[24]. আবূদাঊদ হা/৪৫৬৫।
[25]. বুখারী হা/৭০৭২; মুসলিম হা/২৬১৭।
[26]. হাকেম হা/৩২৪১; মিশকাত হা/১৬৬, সনদ হাসান; নাসাঈ, আস-সুনানুল কুবরা হা/১১১১০।
[27]. মুসলিম হা/২৮৬৫।
[28]. বুখারী হা/৪০৬৫।
[29]. আবু দাঊদ হা/৪৬১১।
[30]. আবু দাঊদ হা/৩০৪২।
[31]. আবুদাঊদ হা/৪৪২২।