আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, «إِيَّاكُمْ وَالْجُلُوسَ بِالطُّرُقَاتِ» .‘তোমরা রাস্তার উপর বসা হতে বিরত থাকো’। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের রাস্তায় বসা ছাড়া গত্যন্তর নেই। কারণ, আমরা তথায় বসে প্রয়োজনীয় কথাবার্তা সমাধা করি। তিনি বললেন, «فَإِذَا أَبَيْتُمْ إِلَّا الْمَجْلِسَ فَأَعْطُوا الطَّرِيقَ حَقَّهُ» .‘যদি তোমরা তথায় বসতে বাধ্যই হও, তবে রাস্তার হক আদায় করবে’। সাহাবীগণ আবারও জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! রাস্তার হক কি? তিনি বললেন, «غَضُّ الْبَصَرِ وَكَفُّ الْأَذَى وَرَدُّ السَّلَام والأمرُ بِالْمَعْرُوفِ وَالنَّهْي عَن الْمُنكر» ‘চক্ষু বন্ধ রাখা, কাউকে কষ্ট না দেয়া, সালামের জবাব দেয়া, ভালো কাজের আদেশ করা এবং মন্দ কাজের নিষেধ কর ‘। (বুখারী হা/২৪৬৫; মুসলিম হা/২১২১; মিশকাত হা/৪৬৪০) অন্যত্র তিনি বলেন, এবং মাযলূমের ফরিয়াদে সাড়া দান করবে এবং পথহারাকে পথপ্রদর্শন করবে’’।(আবূ দাঊদ হা/৪৯১৭, মিশকাত হা/৪৬৪২)
রাস্তার হক সম্পর্কে একাধিক রিওয়ায়াত বর্ণিত হয়েছে, এসব হাদীস থেকে হাফিয ইবনু হাজার ‘আসকালানী (রহিমাহুল্লাহ) চিন্তা ভাবনা করে ১৪টি আদবের ইঙ্গিত প্রদান করেন। সম্মানিত ভাষ্যকার এ চৌদ্দটি আদবকে একত্রিত করে তিনটি চরণে উল্লেখ করেন যা নিম্নে প্রদত্ত হলো,
আমি রাস্তায় বসতে চাওয়া ব্যক্তির জন্য সৃষ্টির সেরা মানুষের (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর) নিকট থেকে আদাবসমূহ একত্রিত করেছি :
১. সালাম বিস্তার কর, সুন্দর কথা বল, হাঁচিদাতা ও সালাম প্রদানকারীর উপযুক্ত জবাব দাও,
২. বোঝা বহনকারী ও মাযলূমকে সাহায্য কর, দুঃখির সাহায্যে পাশে দাঁড়াও, পথিক ও দিশেহারাকে পথের দিশা দাও,
৩. সৎকাজের আদেশ কর, মন্দ কাজ থেকে বাধা দান কর, কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দাও, দৃষ্টি অবনমিত রাখ, আমাদের প্রভু (আল্লাহর) বেশি বেশি যিকির কর।
রাস্তায় বসা নিষেধ হওয়ার কতগুলো তাৎপর্য রয়েছে। যেমন যুবতী মহিলার ফিৎনার আশংকা, তাদের প্রতি নযর পড়ার ভয়। কারণ প্রয়োজনে রাস্তায় মহিলার গমন করা নিষেধ নয়। আল্লাহ ও মুসলিমদের অধিকার সম্পর্কিত বিষয়াদি এসে পড়া যা বাড়ীতে থাকা অবস্থায় আবশ্যক নয়। যা একাই করা দরকার তা রাস্তায় একাই সম্পাদন করার সুযোগ পায় না। মন্দ কোন কিছু চোখে পড়া ও সৎকর্ম বাধাগ্রস্ত হওয়া। এসব ক্ষেত্রে আদেশ করা ও নিষেধ করা মুসলিমের ওয়াজিব দায়িত্ব। যদি সে এগুলো পরিহার করে তাহলে সে অপরাধী হবে। অনুরূপভাবে সে তার নিকটে গমনকারী ও সালাম প্রদানকারীর মুখোমুখি হয়। কখনো এদের সংখ্যা এত বেশি হয় যে, তাদের জবাব দিতে অক্ষম হয়ে পড়ে। অথচ তার জবাব দেয়া ওয়াজিব। ফলে সে পাপী হয়ে যায়। আর মানুষকে ফিৎনা ও সাধ্যাতিরিক্ত কোন কিছুর সম্মুখীন না হতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সে কারণ ঐসব বিষয়ের নিষ্পত্তিকল্পে শারী‘আত প্রণেতা মানুষদেরকে রাস্তায় না বসতে সচেতন করেছেন। এর পরেও সাহাবীরা যখন তাদের প্রয়োজন, যেমন- তাদের পারস্পারিক খোঁজ-খবর নেয়া, দীন সম্পর্কে আলোচনা, বৈষয়িক কল্যাণকর কর্মকাণ্ড, ভালো জিনিসের ব্যাপারে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আত্মিক প্রশান্তির কথা রসূলের সামনে তুলে ধরলেন তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে উপরোক্ত সমস্যা দূরীকরণে সুনির্দেশনা দান করলেন।
কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ হাদীসে মুসলিমদের পারস্পরিক সদাচরণের জাগরণ ফুটে উঠেছে। অবশ্য রাস্তায় উপবিষ্ট ব্যক্তির পাশ দিয়ে অসংখ্য মানুষ গমনাগমন করে। আবার কখনো তারা তাদের প্রয়োজনীয় বিষয়সমূহ ও পথঘাট সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে থাকে। এ সময় তাদের সাথে হাসিমুখে কথা বলা আবশ্যক। সে যেন তাদের সাথে রূঢ় আচরণ না করে, সামগ্রিকভাবে এটাই হচ্ছে রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরানো।
ইবনু হাজার ‘আসকালানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ গমনকারী থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানোর অর্থ হলো এমনভাবে না বসা যাতে রাস্তা সংকুচিত হয়ে যায়। অথবা বাড়ীর দরজায় না বসা যাতে লোক কষ্ট পায় অথবা তার পরিবার-পরিজন বা যেটা গোপনীয় কিছু যা এর দ্বারা উন্মোচিত হয়ে যায়। (ফাতহুল বারী ১১শ খন্ড, হাঃ ৬২২৯)
ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানোর মধ্যে গীবত, কুধারণা, গমনকারীরদের হেয় মনে করা থেকে বিরত থাকা এর অন্তর্ভুক্ত। তেমনিভাবে যখন রাস্তায় এমন লোক বসে থাকে যাদেরকে পথিক ভয় পায় এবং বিকল্প পথ না পেয়ে নিজেদের প্রয়োজনীয় কাজে যেতে বাধাপ্রাপ্ত হয়। (শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ২১২১)
রাস্তায় বসা অবস্থায় নিরূপায় মযলুম ব্যক্তির ফরিয়াদে সাড়া দিতে হবে এবং কোন পথিক পথ হারিয়ে ফেললে তাকে পথের সন্ধান বা পথ দেখিয়ে দিতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ (ছা,)-এর নির্দেশ পালনের তাওফিক্ব দান করুন, আমীন।