দান-সাদাক্বাহ করলে মানুষ জাহান্নাম থেকে বাঁচতে পারে। আর গাছ লাগানো হ’ল সাদাক্বাহ। জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
: «ما من مسلم يَغرس غَرسا إلا كان ما أُكل منه له صدقة، وما سُرق منه له صدقة، ولا يَرْزَؤُهُ أحد إلا كان له صدقة». وفي رواية: «فلا يَغرس المسلم غَرسا فيأكلَ منه إنسان ولا دَابَة ولا طير إلا كان له صدقة إلى يوم القيامة»، وفي رواية: «لا يَغرس مسلم غرسا، ولا يزرع زرعًا، فيأكل منه إنسان ولا دَابَة ولا شيء، إلا كانت له صدقة».
“যে কোনো মুসলিম কোনো গাছ লাগায়, অতঃপর তা থেকে যতটা খাওয়া হয়, তা তার জন্য সাদকাহ হয়, তা থেকে যতটুকু চুরি হয়, তা তার জন্য সাদকাহ হয় এবং যে কোনো ব্যক্তি তার থেকে কিছু গ্রহণ করে, সেটাও তার জন্য সাদকাহ হয়ে যায়।” অন্য এক বর্ণনায় আছে, “মুসলিম যে গাছ লাগায়, আর তা থেকে কোনো মানুষ, কোনো জন্তু ও কোনো পাখী যা কিছু খায়, তা কিয়ামত পর্যন্ত তার জন্য সাদকাহ হয়ে যায়।” অন্য এক বর্ণনায় আছে, “মুসলিম যে গাছ লাগায় এবং ফসল বুনে অতঃপর তা থেকে কোনো মানুষ, কোন জন্তু অথবা অন্য কিছু খায়, তবে তা তার জন্য সাদকাহ হয়ে যায়” (মুসলিম হা/১৫৫২)।
ব্যাখ্যা :
যে মুসলিম কোনো গাছ লাগায় অথবা ফসল বুনে অতঃপর তা থেকে জীবিত মাখলুক থেকে কোনো প্রাণী খেল, তার বিনিময়ে তাকে অবশ্যই সাওয়াব দেওয়া হয়; এমনকি তার মৃত্যুর পরও। যতদিন ফসল ও তার রোপন অবশিষ্ট থাকবে ততদিন তার জন্য তার আমলও জারী থাকবে। এই বাবের হাদীসে ফসল উৎপাদন ও বৃক্ষরোপনের ওপর উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। আর অবশ্যই ফসল উৎপাদন ও বৃক্ষরোপনে অনেক কল্যাণ নিহিত। এতে দীন ও দুনিয়ার উপকারিতা রয়েছে। আর যখন তা থেকে ভক্ষণ করা হয় তখন তার জন্য তা সদকা হয়ে যায়। এর চেয়ে আরো আশ্চর্যের বিষয় হলো, যদি কোনো চোর তা থেকে চুরি করে; যেমন কোনো ব্যক্তি একটি খেজুর বৃক্ষের কাছে এসে তা থেকে খেজুর চুরি করল। এতে তার মালিকের সাওয়াব হবে, এতদসত্বেও যে, যদি সে এই চুরকে সম্পর্কে অবগত হতো তাহলে সে তাকে আদালতে উপস্থিত করত। তারপরও আল্লাহ তা‘আলা এই চুরির বিনিময়ে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত তার জন্য সদকার সাওয়াব লিখবেন।এমনিভাবে যদি তা থেকে যমীনে বিচরণশীল কোনো জন্তু ও কোনো হিংস্র প্রাণী খায় তাহলে এর জন্য তার মালিকের সাওয়াব হবে। আর এ হাদীসটি মুসলিমের জন্য খাস। কেননা সেই দুনিয়া ও আখেরাতে সদকার সাওয়াবের মাধ্যমে উপকৃত হয়।
বৃক্ষরোপণ ‘ছাদাক্বায়ে জারিয়া’:
বৃক্ষরোপণকে ‘ছাদাক্বায়ে জারিয়া’ বা প্রবাহমান দান হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, سَبْعَةٌ يَّجْرِي لِلْعَبْدِ أَجْرُهُنَّ وَهُوَ فِي قَبْرِهِ بَعْدَ مَوْتِهِ، مَنْ عَلَّمَ عِلْمًا أَوْ كَرَى نَهَرًا أَوْ حَفَرَ بِئْرًا أَوْ غَرَسَ نَخْلاً أَوْ بَنَى مَسْجِدًا أَوْ وَرَّثَ مُصْحَفًا أَوْ تَرَكَ وَلَدًا يَسْتَغْفِرُ لَهُ بَعْدَ مَوْتِهِ ‘মানুষের মৃত্যুর পর তার কবরে ৭টি নেক আমলের ছওয়াব জারী থাকে। (১) যে ব্যক্তি (উপকারী) ইল্ম শিক্ষা দিল বা (২) খাল-নালা প্রবাহিত করল অথবা (৩) কূপ খনন করল বা (৪) ফলবান বৃক্ষরোপণ করল অথবা (৫) মসজিদ নির্মাণ করল বা (৬) কুরআনের উত্তরাধিকারী বানাল অথবা (৭) এমন সুসন্তান রেখে গেল, যে মৃত্যুর পর তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে’ (বায়হাক্বী শো‘আব হা/৩১৭৫; ছহীহুত তারগীব হা/৭৩)।
সবুজ বৃক্ষের সাথে মুমিনের সাদৃশ্য বিষয়ে প্রসিদ্ধ একটি হাদীছ বর্ণিত হয়েছে যে,
عَنِ ابْنَ عُمَرَ يَقُولُ قَالَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَثَلُ الْمُؤْمِنِ كَمَثَلِ شَجَرَةٍ خَضْرَاءَ، لاَ يَسْقُطُ وَرَقُهَا وَلاَ يَتَحَاتُّ. فَقَالَ الْقَوْمُ هِىَ شَجَرَةُ كَذَا هِىَ شَجَرَةُ كَذَا، فَأَرَدْتُ أَنْ أَقُولَ هِىَ النَّخْلَةُ. وَأَنَا غُلاَمٌ شَابٌّ فَاسْتَحْيَيْتُ، فَقَالَ : هِىَ النَّخْلَةُ. فَقَالَ عُمَرَ : لَوْ كُنْتَ قُلْتَهَا لَكَانَ أَحَبَّ إِلَىَّ مِنْ كَذَا وَكَذَا، مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ-
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ‘মুমিনের উপমা হ’ল এমন একটি সবুজ বৃক্ষের ন্যায়, যার পাতা ঝরে পড়ে না এবং মলিন হয় না। তখন কেউ বলল, এটি অমুক অমুক গাছ। তখন আমি বলতে চেয়েছিলাম যে, এটি খেজুর গাছ। তবে আমি অল্প বয়সী হওয়ায় বড়দের সামনে বলতে সংকোচ বোধ করলাম। তখন রাসূল (ছাঃ) বলে দিলেন যে, সেটি হ’ল খেজুর গাছ। অতঃপর ওমর (রাঃ) বললেন, তুমি যদি এটা সবার সামনে বলতে, তবে তা এত এত ধন-সম্পদ থেকেও আমার জন্য বেশী খুশীর কারণ হ’ত’ (বুখারী হা/১৩১; মুসলিম হা/২৮১১)।
উল্লেখ্য যে, প্রতিটি বৃক্ষের পাতা, কান্ড, ছাল-বাকল, ফলমূল সবই যেমন আমাদের জন্য উপকারী, তেমনি প্রতিটি মুমিনের কথা-বার্তা, আচার-আচরণ, লেনদেন সবকিছুই অপর মুমিনের জন্য কল্যাণকর হওয়া উচিৎ।