আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসেছিলেন, এমতাবস্থায় জনৈক ব্যক্তি আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ)-কে গালিগালাজ করতে লাগল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটা শুনে আশ্চর্যান্বিত হলেন এবং মৃদু হাসতে লাগলেন। লোকটি যখন খুব বেশি মন্দ বকল, তখন আবূ বকর সিদ্দীক(রাঃ) তার কোন কথার প্রতি-উত্তর দিলেন। এতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুব রাগান্বিত হলেন এবং উঠে গেলেন। আবূ বকর সিদ্দীক(রাঃ) তাঁর পিছন পিছন গেলেন এবং বললেনঃ হে আল্লাহর রসূল! লোকটি আমাকে মন্দ বলছিল আর আপনি বসেছিলেন। যখন আমি তার কোন কথার প্রতি-উত্তর করলাম, আপনি রাগ করে উঠে এলেন। তিনি বললেন, তোমার সাথে একজন মালাক (ফেরেশতা) ছিলেন, যিনি ঐ লোকটির জবাব দিচ্ছিলেন। যখন তুমি নিজেই তার জবাব দিলে, তখন তোমাদের মাঝে শয়তান উপস্থিত হলো। তারপর তিনি বললেনঃ হে আবূ বকর! তিনটি কথা আছে, সেগুলোর প্রত্যেকটি হক।
(১) যদি কোন বান্দার ওপর জুলুম করা হয় এবং ঐ ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জুলুমের বিরুদ্ধে কোন প্রকার প্রতিবাদ না করে চুপ করে থাকে, তাহলে আল্লাহ তা’আলা খুব সাহায্য করেন।
(২) যে ব্যক্তি তার দানের দরজা খুলে দেয় এবং ঐ দানের সাহায্যে তার স্বজন-প্রতিবেশীর সাথে অনুগ্রহের ইচ্ছা পোষণ করে, আল্লাহ তা’আলা তার ধন-সম্পদ আরো বৃদ্ধি করে দেন।
(৩) যে ব্যক্তি ভিক্ষার দরজা খুলে দিয়ে নিজের ধন-সম্পদ বৃদ্ধি করতে চায়। এতে আল্লাহ তা’আলা তার ধন-সম্পদ আরো কমিয়ে দেন। (আহমাদ হা/৯৬২৪, ছহীহুল জামি‘ হা/৫৬৪৬, শু‘আবুল ইমান হা/৩৪১৩, মিশকাত হা/৫১০২)।
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এবং আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে তারা যেন ভাল ও সত্য কথা বলে, নতুবা চুপ থাকে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلَا يُؤْذِ جَارَهُ وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ» . ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন অবশ্যই মেহমানের সম্মান করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন অবশ্যই ভালো কথা বলে, নতুবা যেন চুপ থাকে। অপর এক বর্ণনায় ’’প্রতিবেশী’’র স্থলে রয়েছে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন অবশ্যই আত্মীয়ের হক আদায় করে’(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪২৪৩)।
কোন ব্যক্তি তার আখলাক বা চরিত্রকে সৌন্দর্য্য মন্ডিত করতে ইচ্ছা পোষণ করেন, তবে সে যেন দীর্ঘ ক্ষণ চুপ থাকেন। একদিন তিনি আবু যার গিফারী রাযিয়াল্লাহু আনহুকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘তুমি উত্তম চরিত্রবান হও এবং দীর্ঘ সময় চুপ থাক’ (মুসনাদ আবু ইয়া‘লা, মিশকাত হা/৪৮৬৭; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/১৯৩৮, সনদ হাসান।)।
ইয়াযীদ বিন আবু হাবীব (রহঃ) বলেন, ,مِنْ فِتْنَةِ الْعَالِمِ أَنْ يَكُوْنَ الْكَلَامُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنَ الِْاسْتِمَاعِ، وَإِنْ وَجَدَ مَنْ يَكْفِيهِ، فَإِنَّ فِي الِْاسْتِمَاعِ سَلَامَةً، وَزِيَادَةً فِي الْعِلْمِ وَالْمُسْتَمِعُ شَرِيكُ الْمُتَكَلِّمِ فِي الْكَلاَمِ ‘শিক্ষিত ব্যক্তির জন্য অন্যতম ফিৎনা হ’ল, অন্যের কথা শোনার চেয়ে নিজের কথা বলা তার কাছে অধিক পসন্দনীয় মনে হয়। যদি তিনি কোন যোগ্য ব্যক্তির সন্ধান পান তাহ’লে মনোযোগ দিয়ে তার কথা শ্রবণ করার মধ্যেই নিহিত রয়েছে নিরাপত্তা ও জ্ঞান বৃদ্ধির সম্ভাবনা। কেননা শ্রোতা চুপ থাকার মাধ্যমে বক্তার আলোচনায় অংশগ্রহণ করে থাকেন’(ইবনু আবিদ্দুনয়া, কিতাবুছ ছামতি ওয়া আদাবিল লিসান, পৃঃ ৮৮)|
যে ব্যক্তি চুপ থাকে তার তাক্বওয়া বৃদ্ধি পায় এবং অন্তরে প্রশান্তি অনুভব করে থাকেন। আব্দুল্লাহ ইবনু আবি যাকারিয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেন: ‘যার কথা বেশী হবে, তার ভুল-ভ্রান্তি বেশী হবে, আর যার ভুল-ভ্রান্তি বেশী হবে, তার তাক্বওয়া হ্রাস পাবে, আর যার তাক্বওয়া কমে যাবে, আল্লাহ তা’ আলা তার অন্তরকে নিষ্প্রাণ বানিয়ে দিবেন’ (হিলয়াতুল আউলিয়া ৫/১৪৯)।
পরিশেষে, চুপ থাকা একজন ব্যক্তিত্ববোধ ব্যক্তির জীবনের জন্য সম্মান বয়ে আনে। চুপ থাকলে দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য কল্যাণকর। চুপ থাকা মনীষীদের উত্তম পন্থা। রাসূল (ছাঃ) তিনিও যে বিষয়ে জানতেন না সে বিষয়ে চুপ থেকেছেন অহী নাযিলের পরে তিনি তা সবায়কে জানিয়ে দিয়েছেন। অতএব কথা বলার পূর্বে ভেবে চিন্তা করে সঠিক ও সত্য কথা বলা উচিৎ। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন, আমীন।