দরসে হাদীস : স্বজ্ঞানে, একাগ্রতা ও একনিষ্ঠতার সাথে ঈমান রাখুন! (পর্ব-২)

 আল্লাহ তা‘আলা তাকে জান্নাত দান করবেন, তার আমল যাই হোক না কেন (?) অর্থাৎ যে ব্যক্তি এ সাক্ষ্য দিল যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন সত্য ইলাহ নেই। তিনি একক। তাঁর কোন শরিক নেই। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল। ঈসা (আঃ) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল, তিনি তাঁর এমন এক কালিমা, যা তিনি মারইয়াম (আঃ) এর প্রতি প্রেরণ করেছেন এবং তিনি তাঁরই পক্ষ থেকে প্রেরিত একটি রুহ। জান্নাত সত্য জাহান্নাম সত্য, আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাত দান করবেন। তার আমল যাই হোক না কেন। অর্থাৎ তাঁর ইখলাস তথা একনিষ্ঠতার সাথে উপরোক্ত বিষয়গুলোর ঘোষণা দেয়ার কারণে, সত্য বিষয়গুলোর সত্যায়ন করার কারণে, নবী-রাসূলদের প্রতি এবং তাদেরকে যেই নবুওয়াত ও রেসালাত দেয়া হয়েছে, তার প্রতি ঈমান আনয়নের কারণে, খৃষ্টান ও ইহুদীরা ঈসা (আঃ)এর ব্যাপারে যেই বাড়াবাড়ি ও দুর্ব্যবহার করেছে তার প্রতিবাদ ও বিরোধীতা করার কারণে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। সে ঈসা (আঃ)-এর ব্যাপারে আরও দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করেছে যে, তিনি আল্লাহর বান্দা ও রাসূল, জান্নাত ও জাহান্নামের প্রতিও ঈমান আনয়ন করেছে। যার আমল ও অবস্থা এই রকম হবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যদিও সৎকর্ম সম্পাদনে তার ত্রুটি রয়েছে এবং তাঁর বেশ কিছু গুনাহ্ও রয়েছে। এ সৎআমলটি অর্থাৎ নির্ভেজাল তাওহীদের ঘোষণা অন্যান্য সকল গুনাহ্-এর তুলনায় ভারী হয়ে যাবে। হে পাঠক! আপনি এই গুরুত্বপূর্ণ হাদীছটি ভাল করে বুঝে নিন।

ইমাম বুখারী ও মুসলিম সাহাবী ইতবান রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ

«فَإِنَّ اللَّهَ حَرَّمَ عَلَى النَّارِ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ يَبْتَغِى بِذَلِكَ وَجْهَ اللَّهِ»

‘‘আল্লাহ তাআলা এমন ব্যক্তির উপর জাহান্নামের আগুন হারাম করে দিয়েছেন, যে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলেছে’’।

ব্যাখ্যাঃ এটি বুখারী ও মুসলিম শরীফের একটি দীর্ঘ হাদীছের অংশ। লেখক তা থেকে শুধু ঐ টুকুই বর্ণনা করেছেন, যা এ অধ্যায়ের জন্য প্রযোজ্য। কালেমায়ে তায়্যেবার এটিই প্রকৃত অর্থ। এ পবিত্র বাক্যটি এবাদতের মধ্যে ইখলাসের দাবী জানায় এবং শির্ককে সম্পূর্ণরূপে নাকোচ করে। সিদ্ক এবং ইখলাস এই দু’টি বিষয় এমন, যার একটি অন্যটির সাথে জড়িত। এ দু’টির একটিকে অন্যটি ছাড়া কল্পনাও করা যায়না। বান্দা যদি এবাদতের মধ্যে একনিষ্ঠ না হয়, তাহলে সে মুশরিক হিসাবে গণ্য হবে। আর যদি সত্যবাদী না হয়, তাহলে মুনাফেক হিসাবে গণ্য হবে। মুখলিস হচ্ছে ঐ ব্যক্তি, যে কালেমায়ে তাওহীদ ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’কে জবান দিয়ে পাঠ করার সাথে সাথে খালেসভাবে কেবল আল্লাহর এবাদত করে। এর নামই তাওহীদ। এটিই ইসলামের মূল কথা। ইবরাহীম (আঃ) এই বিষয়ে বলেছেনঃ

رَبَّنَا وَاجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَمِن ذُرِّيَّتِنَا أُمَّةً مُّسْلِمَةً لَّكَ وَأَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَتُبْ عَلَيْنَا إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ

‘‘হে আমাদের রব! আমাদের উভয়কে তোমার আজ্ঞাবহ করো এবং আমাদের বংশধর থেকেও একটি অনুগত দল সৃষ্টি করো, আমাদের হজ্জের রীতিনীতি বলে দাও এবং আমাদের ক্ষমা করো। নিশ্চয়ই তুমি তাওবা কবুলকারী, দয়ালু’’। (সূরা বাকারাঃ ১২৮) ইয়ামানের সাবা শহরের রাণী বিলকীস বলেছিলঃ

رَبِّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي وَأَسْلَمْتُ مَعَ سُلَيْمَانَ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ

‘‘হে আমার প্রতিপালক, আমি তো নিজের প্রতি যুলুম করেছি। আমি সুলায়মানের সাথে সৃষ্টিজগতের প্রতিপালক আল্লাহ্‌র কাছে আত্মসমর্পন করলাম’’। (সূরা নামলঃ ৪৪) ইবরাহীম খলীল (আঃ) বলেছিলেনঃ

إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ حَنِيفاً وَمَا أَنَاْ مِنَ الْمُشْرِكِينَ

‘‘আমি একনিষ্ঠ হয়ে স্বীয় চেহারা ঐ সত্তার দিকে ফিরাচ্ছি, যিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত নই’’। (সূরা আনআমঃ ৭৯) হানীফ ঐ ব্যক্তিকে বলা হয়, যে সম্পূর্ণরূপে শির্ক বর্জন করে, শির্কের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে, মুশরিকদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে, তাদের সাথে শত্রুতা পোষণ করে এবং প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল আমল ও এবাদত কেবল আল্লাহ্ তাআলার জন্যই সম্পাদন করে। আল্লাহ্ তাআলা সূরা লুকমানের ২২ নং আয়াতে বলেনঃ

وَمَن يُسْلِمْ وَجْهَهُ إِلَى اللَّهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَى

‘‘যে ব্যক্তি সৎকর্মপরায়ণ হয়ে স্বীয় মুখমন্ডলকে আল্লাহ্ অভিমুখী করে, সে এক মজবুত হাতল ধারণ করে’’। মুখমন্ডলকে আল্লাহ্ অভিমুখী করার অর্থ হচ্ছে, বান্দা তাঁর এবাদতকে একমাত্র আললাহর জন্য এমনভাবে খালেস করবে যে, তাতে যেন কোন প্রকার শির্ক বা নিফাক স্থান না পায়। আলেমদের সর্বসম্মতিক্রমে এটিই হচ্ছে এ আয়াত এবং অন্যান্য আয়াতের অর্থ। যার অবস্থা এ রকম হবে, কালেমায়ে তাইয়্যেবা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ কেবল তারই উপকার করবে। এ জন্যই আয়াতের শেষাংশে আল্লাহ্ তাআলা বলেছেনঃ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَى ‘‘সে এক মজবুত হাতল ধারণ করল’’। কিন্তু যে ব্যক্তি কালেমায়ে তাওহীদ পাঠ করার সাথে সাথে আল্লাহ্ ছাড়া অন্যকে আহবান করবে, জীবিত কিংবা মৃত এমন অলীর কাছে সাহায্য চাইবে, যে উপকার কিংবা ক্ষতির মালিক নয় তার কালেমা পাঠ কোন উপকার করবেনা। অধিকাংশ বনী আদমের অবস্থা বর্তমানে এ রকমই। তারা জবানের মাধ্যমে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পাঠ করলেও তাদের কাজ তাদের কথার বিপরীত। কালেমায়ে তাওহীদ তখনই পাঠকের উপকারে আসবে যখন সে নেতিবাচক ও ইতিবাচকের সাথে এর অর্থ ভালভাবে উপলদ্ধি ও বিশ্বাস করার পরই তা পাঠ করবে। কালেমাটির অর্থ সম্পর্কে যে ব্যক্তি অজ্ঞ, কালেমাটি তাঁর কোন উপকার করবেনা। কেননা আরবী ভাষায় যে অর্থে এই পবিত্র বাক্যটি তৈরী করা হয়েছে তা সম্পর্কে সে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। আর তা হচ্ছে শির্ককে সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করা। এমনিভাবে যে ব্যক্তি এর অর্থ জানবে ও বুঝবে, কিন্তু অন্তর দিয়ে তা বিশ্বাস করবেনা, কালেমাটি তারও কোন উপকার করবেনা। কেননা যখন কোন বিষয়ে কারো ইয়াকীন চলে যাবে, তখন ঐ বিষয়ে তার অন্তরে সন্দেহ প্রবেশ করবে। এ জন্যই মুসলিম শরীফের এক বর্ণনায়غَيْرَ شَاكٍ কথাটি এসেছে। অর্থাৎ কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করার সময় আল্লাহ্ তাআলার ওয়াহ্দানিয়াত সম্পর্কে কোন প্রকার সন্দেহ পোষণ করলে কোন উপকার হবেনা। সুতরাং ইলম ও ইয়াকীন ব্যতীত কালেমাটি পাঠ করলে পাঠকের কোন উপকার হবেনা। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ صِدْقًا مِنْ قَلْبِهِ خَالِصاً مِنْ قَلْبِهِ অর্থাৎ পূর্ণ বিশ্বাস এবং একনিষ্ঠতার সাথে কালেমাটি পাঠ করলেই উপকার হবে। এমনি যে ব্যক্তি সত্যবাদী এবং একনিষ্ঠ না হয়ে কালেমাটির স্বীকারোক্তি প্রদান করবে, ঐ ব্যক্তির জন্য কালেমাটি উপকারী হবেনা। কেননা তাঁর অন্তর মুখের স্বীকারোক্তির বিরোধী। মুনাফিকদের অবস্থা এ রকমই। তারা মুখে এমন কথা বলে, যা তাদের অন্তরে নেই। এমনি অবস্থা মুশরিকদেরও। মুশরিকদের থেকেও এই কালেমাটি গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা র্শিক এবাদতের ক্ষেত্রে ইখলাস ও কালেমায়ে তাওহীদের তাৎপর্যের পরিপন্থী। কালেমায়ে তাওহীদ যেমন আল্লাহর কোন শরীক হওয়াকে অস্বীকার করে, তেমনি শির্কের সাথে সম্পর্কচ্ছেদেরও ঘোষণা দেয় এবং একমাত্র আল্লাহর জন্য পরিপূর্ণ ইখলাসেরও প্রমাণ বহন করে। সুতরাং যার স্বীকারোক্তি এই মর্মার্থ হতে মুক্ত হবে, তার এ কালেমার স্বীকারোক্তি কোন কাজে আসবেনা। এটিই হচ্ছে মাজার পূজারীদের অবস্থা। তারা মুখে বলে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’। কিন্তু তারা এককভাবে আল্লাহর এবাদত করতে অস্বীকার করে। শুধু তাই নয়, তারা তাওহীদপন্থীদের সাথে শত্রুতাও পোষণ করে এবং শির্ক ও মুশরিকদের সাহায্যও করে।

 ইবরাহীম খলীল (আঃ) তাঁর পিতা ও স্বগোত্রীয় লোকদেরকে বলেছিলেনঃ

وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ لِأَبِيهِ وَقَوْمِهِ إِنَّنِي بَرَاء مِّمَّا تَعْبُدُونَ إِلَّا الَّذِي فَطَرَنِي فَإِنَّهُ سَيَهْدِينِ وَجَعَلَهَا كَلِمَةً بَاقِيَةً فِي عَقِبِهِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ

‘‘আর যখন ইবরাহীম তার পিতা এবং তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন, তোমরা যাদের পূজা কর, তাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। তবে আমার সম্পর্ক তাঁর সাথে, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। অতএব, তিনিই আমাকে সৎপথ প্রদর্শন করবেন। এ কথাটিকে তিনি অক্ষয় বাণী স্বরূপ তার সন্তানদের মধ্যে রেখে গেছেন, যাতে তারা আল্লাহ্‌র দিকেই ফিরে আসে’’। (সূরা যুখরুফঃ ২৬-২৮) এটিই হচ্ছে, ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’-এর সঠিক অর্থ। ইবরাহীম খলীল (আঃ) তাঁর জবানের মাধ্যমে এই অর্থটিকেই প্রকাশ করেছেন। এই অর্থটির জন্যই কালেমাটি গঠন করা হয়েছে এবং তা এই অর্থই প্রকাশ করে। সেটি হচ্ছে শির্ক থেকে মুক্ত হয়ে একমাত্র আল্লাহর এবাদত করা, এতে তার কোন শরীক নেই। ইতিপূর্বে এর বিস্তারিত আলোচিত হয়েছে। এমনিভাবে যে ব্যক্তি কালেমাটি পাঠ করবে, কিন্তু এটি যেই ইখলাসের প্রমাণ বহন করে, তা কবুল করেনি, সে এই বাক্যটি পাঠে মিথ্যুক হিসাবে গণ্য হবে। শুধু তাই নয়; বরং এই কালেমাটির অর্থ পরিবর্তনকারী হিসাবে গণ্য হবে, কালেমায়ে তায়্যেবা যেই শির্ককে অস্বীকার করেছে, সেটিকেই সাব্যস্ত করবে এবং এটি যেই ইখলাসকে সাব্যস্ত করে তা অস্বীকারকারী হিসাবে গণ্য হবে।

ইসলামের প্রথম তিন যুগের পর উম্মতে মুহাম্মাদীর অধিকাংশ লোকের অবস্থা এ রকমই। এর কারণ হচ্ছে, কালেমায়ে তাওহীদের অর্থ সম্পর্কে জ্ঞান না থাকা এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ করা। এই মূর্খতা ও প্রবৃত্তির অনুসরণই মানুষকে সত্য গ্রহণ এবং আল্লাহ্ তাআলা তাঁর বান্দাদের জন্য যেই দ্বীন ও তাওহীদসহ নবী-রাসূলগণকে প্রেরণ করেছেন তা কবুল করতে বাধা দেয়।

প্রখ্যাত সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী রাযিয়াল্লাহু আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি এরশাদ করেছেন, মূসা (আঃ) বললেনঃ হে আমার রব! আমাকে এমন জিনিস শিক্ষা দিন যা দ্বারা আমি আপনাকে স্মরণ করব এবং আপনাকে ডাকব। আল্লাহ বললেন, ‘হে মূসা! তুমি لا إله إلا الله বল। মূসা বললেনঃ তোমার সব বান্দাই তো এটা বলে। তিনি বললেনঃ হে মূসা! আমি ব্যতীত সপ্তাকাশে যা কিছু আছে তা আর সাত তবক যমীন যদি এক পাল্লায় থাকে এবং আরেক পাল্লায় যদি শুধু لا إله إلا الله থাকে তাহলে لا إله إلا الله -এর পাল্লাই বেশী ভারী হবে’’।

ব্যাখ্যা : لا إله إلا الله-এর মধ্যে ব্যবহৃত لا অক্ষরটি লায়ে নফী জিন্স। এই প্রকার لا এর পরে যে বিষয়টি আসে, লা-এর মাধ্যমে উক্ত বিষয়ের সকল প্রকারকে প্রত্যাখ্যান করে দিয়ে শুধু إلا-এর পরে উল্লেখিত বিষয়টির জন্য তা সাব্যস্ত করা হয়। সুতরাং এর অর্থ হচ্ছে আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন সত্য ইলাহ নেই। এখানে আরেকটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আর তা হচ্ছে لا- এর খবর উহ্য রয়েছে। মূলতঃ বাক্যটি এরূপ لاإله حق إلا الله অর্থাৎ আল্লাহ্ ছাড়া কোন সত্য মাবুদ নেই। সূরা হজ্জের ৬২ নং আয়াতে আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ

ذَلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ هُوَ الْحَقُّ وَأَنَّ مَا يَدْعُونَ مِن دُونِهِ الْبَاطِلُ وَأَنَّ اللَّهَ هُوَ الْعَلِيُّ الْكَبِيرُ

‘‘এটা এ কারণে যে, আল্লাহ্ই সত্য; তার পরিবর্তে তারা যাকে ডাকে, তা অসত্য এবং আল্লাহ্ই সবার উচ্চে’’। সুতরাং আল্লাহই সত্য ইলাহ্। তিনিই এবাদতের একমাত্র হকদার। তিনি ব্যতীত যত ইলাহ আছে, তার সবই বাতিল। যেমনটি বর্ণিত হয়েছে এই আয়াতে এবং অন্যান্য আয়াতসমূহে।

সুতরাং এটিই অর্থাৎ لا إله إلا الله হচ্ছে মহান কালেমা, এটিই মজবুত হাতল, এটিই কালিমাতুত তাকওয়া এবং এটিই কালিমাতুল ইখলাস। এর উপরই আসমান-যমীনের ভিত্তি, এর পূর্ণতার জন্যই ফরয ও সুন্নাতসমূহকে শরীয়তের অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে, পৃথিবীতে এর শিক্ষা ও দাবীকে বাস্তবায়নের জন্যই তলোয়ার কোষমুক্ত করা হয়েছে এবং এর মাধ্যমেই আল্লাহর বান্দাদের মধ্য হতে অনুগত ও নাফরমান বান্দাদের মধ্যে পার্থক্য হয়েছে। সুতরাং যে ব্যক্তি সত্যায়ন, ইখলাস, মনেপ্রাণে গ্রহণ করে নিয়ে, মুহাববত এবং বিনয়ের সাথে এই বাক্যটি পাঠ করবে এবং এর উপর আমল করবে, আল্লাহ্ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তার আমল যাই হোক না কেন।

আব্দুল্লাহ্ ইবনে আমর রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে মারফু সূত্রে বর্ণিত হাদীছে এসেছে, কিয়ামতের দিন সমস্ত সৃষ্টির সামনে আমার উম্মতের একজন লোকের নাম ধরে চিৎকার করে ডাকা হবে এবং তার সামনে ৯৯টি রেজিষ্টার বই খোলা হবে। চোখের দৃষ্টি যত দূর যায়, ততদূর লম্বা হবে এক একটি রেজিষ্টার। অতঃপর তাকে বলা হবে, তুমি কি এ সমস্ত আমল থেকে কোনো কিছু অস্বীকার করতে পারবে? সে বলবেঃ হে আমার প্রতিপালক! না। কোন কিছুই অস্বীকার করতে পারবনা। তাকে বলা হবেঃ তোমার কোন ওজর (অযুহাত) আছে কি? অথবা তোমার কোন নেকী আছে কি? তখন লোকটি ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে বলতে থাকবেঃ না, আমার কোন নেক আমল নেই। অতঃপর বলা হবেঃ হ্যাঁ, নিশ্চয়ই আমাদের কাছে তোমার একটি নেকী রয়েছে। তোমার উপর কোন প্রকার যুলুম করা হবেনা। অতঃপর তার জন্য একটি কার্ড বের করা হবে। তাতে লেখা থাকবেঃ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ অর্থাৎ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কোনো সত্য উপাস্য নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসূল। লোকটি তখন বলবেঃ হে আমার প্রতিপালক! এত বিশাল বিশাল বইগুলোর সামনে এই কার্ডটির কোন মূল্য আছে কি? তখন তাকে বলা হবেঃ তোমার উপর কোন রকম যুলুম করা হবেনা। এ কথা বলার পর রেজিষ্টারগুলো রাখা হবে এক পাল্লায় এবং কার্ডটি রাখা হবে আরেক পাল্লায়। এতে বইগুলোর পাল্লা হালকা হয়ে যাবে এবং কার্ডটির পাল্লা ভারী হয়ে যাবে। (সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৩৫)।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loader-image

Scroll to Top