রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেন, أفضل الإيمان الصبر والسماحة ‘সর্বোত্তম ঈমান হ’ল ধৈর্য ও উদারতা’ (সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৪৯৫; ছহীহুল জামি‘ হা/২৭৯৫)।
ধৈর্য হলো কর্মময় স্থিরচিত্ততা ও হতাশামুক্ত সুদৃঢ় মনোবল। মুমিন দৃঢ় মনোবল নিয়ে নিজের কল্যাণ ও স্বার্থ অর্জনের জন্য চেষ্টা করবেন। বিপদে আপদে কখনোই অতীতের ভুলভ্রান্তি নিয়ে হতাশা বা আফসোস করে সময় নষ্ট করবেন না বা মনের মধ্যে শয়তানের কুমন্ত্রণা ও হতাশার অনুপ্রবেশের দরজা খুলে দিবেন না। বরং যা ঘটার আল্লাহর ইচ্ছাতেই ঘটেছে এই বিশ্বাস নিয়ে ধৈর্য ধারণ করতে হবে এবং দৃঢ় মনোবল নিয়ে কর্মের পথে এগোতে হবে।
ধৈর্য প্রধানত তিন প্রকার :
(১) বিপদ-আপদ ও কষ্টে ধৈর্য,
(২) পাপ ও লোভ থেকে ধৈর্য এবং
৩) ক্রোধের মধ্যে ধৈর্য।
বিপদে হতাশ বা অধৈর্য হয়ে পড়া একদিকে যেমন ঈমানের পরিপন্থী, অপরদিকে তা মানবীয় ব্যক্তিতেরব চরম পরাজয়। হতাশা, অস্থিরতা বা উৎকণ্ঠা বিপদ দূর করেনা, বিপদের কষ্ট কমায় না বা বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার পথ দেখায় না। সর্বোপরি হতাশা বা ধৈর্যহীনতা স্বয়ং একটি কঠিন বিপদ যা মানুষকে আরো অনেক কঠিন বিপদের মধ্যে নিপতিত করে। পক্ষান্তরে ধৈর্য বিপদ দূর না করলেও তা বিপদ নিয়ন্ত্রণ করে, বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য শান্তভাবে চিন্তা করার সুযোগ দেয় এবং অস্থিরতা জনিত অন্যান্য বিপদের পথরোধ করে। সর্বোপরি বিপদে কষ্টে ধৈর্যের মাধ্যমে মুমিন আল্লাহর নিকট মহান মর্যাদা, সাওয়াব, জাগতিক বরকত ও পারলৌকিক মুক্তি অর্জন করেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “আমি তোমাদেরকে ভয়, ক্ষুধা এবং ধনসম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা অবশ্য পরীক্ষা করব। আর আপনি শুভ সংবাদ প্রদান করুন ধৈর্যশীলদেরকে, যারা তাদের উপর বিপদ আপতিত হলে বলে, ‘আমরা তো আল্লাহরই এবং নিশ্চিতভাবে তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তণকারী।” (বাক্বারাহ ২/১৫৫-১৫৬)
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, «لَا أَحَدَ أَصْبَرُ عَلَى أَذًى يَسْمَعُهُ مِنَ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ، إِنَّهُ يُشْرَكُ بِهِ، وَيُجْعَلُ لَهُ الْوَلَدُ، ثُمَّ هُوَ يُعَافِيهِمْ وَيَرْزُقُهُمْ». “কষ্টদায়ক কোন কথা শ্রবণ করার পর আল্লাহ তা‘আলা থেকে অধিক ধৈর্যশীল আর কেউ নেই। মানুষ আল্লাহর সঙ্গে শরীক করে এবং তাঁর জন্য সন্তান সাব্যস্ত করে; এরপরও তিনি তাদেরকে ক্ষমা করে দেন এবং তাদেরকে রিযিক দেন।”(মুসলিম হা/২৮০৪)
হাদীসে কুদসী, রাসূল (ছাঃ) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, «كَذَّبَنِي ابْنُ آدَمَ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ ذَلِكَ، وَشَتَمَنِي وَلَمْ يَكُنْ لَهُ ذَلِكَ، أَمَّا تَكْذِيبُهُ إِيَّايَ أَنْ يَقُولَ: إِنِّي لَنْ أُعِيدَهُ كَمَا بَدَأْتُهُ، وَأَمَّا شَتْمُهُ إِيَّايَ أَنْ يَقُولَ: اتَّخَذَ اللَّهُ وَلَدًا، وَأَنَا الصَّمَدُ الَّذِي لَمْ أَلِدْ وَلَمْ أُولَدْ، وَلَمْ يَكُنْ لِي كُفُؤًا أَحَدٌ». “আদম সন্তান আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছেন; অথচ এরূপ করা তার জন্য উচিত হয় নি। সে আমাকে গালি দিয়েছে; অথচ এমন করা তার পক্ষে সমীচীন হয় নি। আমার প্রতি তার মিথ্যা আরোপ করার মানে হচ্ছে এই যে, সে বলে, আমি পুনর্জীবিত করতে সক্ষম নই যেমনিভাবে আমি তাকে প্রথমে সৃষ্টি করেছি। আমাকে তার গালি দেয়া হচ্ছে এই যে, সে বলে, আল্লাহ তা ‘আলা সন্তান গ্রহণ করেছেন; অথচ আমি কারো মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী। আমি এমন এক সত্তা যে, আমি কাউকে জন্ম দেইনি, আমাকেও জন্ম দেয়নি এবং আমার সমকক্ষও কেউ নেই।”(বুখারী হা/৪৯৭৫)
আল্লাহ তা‘আলা বাধ্য ও অবাধ্য সকলকেই রিযিক দান করেন। আল্লাহর অবাধ্যরা যদিও তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধে রত, তাঁকে মিথ্যারোপ করে, তাঁর রাসূলগণকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, তাঁর দীনকে ফুৎকারে নিভিয়ে দিতে চায়; অথচ তিনি তাদের এসব অবাধ্য কথা ও কাজের উপর ধৈর্যধারণ করেন, তাদের এসব অবাধ্য কাজ সহ্য করেন। তারা অকল্যাণ কাজ একটার পরে একটা করতে থাকে; অথচ তিনি তাদেরকে তাঁর নি‘আমত ধারাবাহিক ভাবে দিতে থাকেন। তাঁর ধৈর্য পরিপূর্ণ ধৈর্য; কেননা তাঁর ধৈর্য তাঁর পূর্ণ কুদরতের ও তিনি সৃষ্টিকুল থেকে সম্পূর্ণ অমুখাপেক্ষী এবং তাঁর রহমত ও ইহসান পরিপূর্ণ। মহান দয়াময় রব যার ধৈর্যের অনুরূপ কারো ধৈর্য নেই, যিনি ধৈর্যশীলদেরকে ভালোবাসেন এবং তাদেরকে প্রত্যেক কাজে সাহায্য করেন। (আল-হাক্কুল ওয়াদিহ আল-মুবীন, পৃ. ৫৭-৫৮; তাওদীহুল কাফিয়া আশ-শাফিয়া, পৃ. ১২১; ফাতাওয়া আস-সা‘দিয়্যাহ, পৃ. ২৯)
সর্বদা ধৈর্য ধারনের প্রস্তুত থাকুন। সবুরকারী বান্দাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি। আপনি যদি কাউকে ভালোবাসেন তবে সূরা আছরের আলোকে ভালোবাসুন। এ সূরা থেকে শিক্ষাগ্রহণ করুন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা`আলা বলেন, وَالْعَصْرِ () إِنَّ الْإِنْسَانَ لَفِي خُسْرٍ () إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ () ‘কালের শপথ! নিশ্চয়ই সকল মানুষ অবশ্যই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। তারা ব্যতীত যারা (জেনে-বুঝে) ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম সম্পাদন করেছে এবং পরস্পরকে ‘হক’-এর উপদেশ দিয়েছে ও পরস্পরকে ধৈর্য্যরে উপদেশ দিয়েছে’ (আছর ১০৩/১-৩)।