আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : যখন তোমার মাঝে চারটি বস্তু বিদ্যমান থাকে, তখন দুনিয়ার যা কিছুই তোমার ছাড়া হয়ে যায় তোমার কোন ক্ষতি নেই। আমানত রক্ষা, সত্য কথা, উত্তম চরিত্র ও খানাপিনায় সাবধানতা অবলম্বন। (আহমাদ, মিশকাত হা/৫২২২)
ব্যাখ্যা: মানব স্বভাব ও চরিত্রের কয়েকটি মৌলিক বৈশিষ্ট্যের কথা এখানে বলা হয়েছে, যেগুলো কোন মানুষের মধ্যে থাকলে পার্থিব সম্পদ বা অন্য কিছু না থাকলেও কিংবা নষ্ট হয়ে গেলেও কোন ক্ষতি নেই। ‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন : উল্লেখিত বাক্যে (مَا) হলো মাসদারিয়্যাহ্ এবং এখানে (الْوَقْت) উহ্য রয়েছে। অতএব বাক্যটি হবে এরূপ: (لَابأْسَ عَلَيْهَ وقْتَ فَوْتِ الدُّنْيَاإِنْ حَصَلَتْ لَكَ هٰذِهِ الْخِصالُ) অর্থাৎ যদি এই বৈশিষ্ট্যগুলো তোমার অর্জিত হয় তাহলে দুনিয়ার বস্তুগুলো ছুটে গেলে তোমার কোনই সমস্যা নেই। এই (مَا)-টি না-বাচকও হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তখন বাক্যের অর্থ হবে এরূপ: এ বৈশিষ্ট্যগুলো তোমার মধ্যে থাকলে তোমার কোনই সমস্যা হবে না, আর দুনিয়াও তোমার থেকে কখনো ছুটে যাবে না। প্রথম অর্থটা অধিক সামঞ্জস্যশীল। হাদীসে বর্ণিত চারটি বৈশিষ্ট্যের অন্যতম নিচে দেওয়া হ’ল-
একটি হলো- আমানতের হিফাযত; আর সম্পদ ও ‘আমল দুটিও আমানতের অন্তর্ভুক্ত। দ্বীনের বিধি-বিধান তথা হালাল-হারাম বিষয় রক্ষা করে চলাও আমানত।
দ্বিতীয়টি হলো- সত্য কথা। এটিও ব্যাপকার্থে গ্রহণ করতে হবে। অর্থাৎ সকল প্রকারের কথাতেই সত্যবাদী হতে হবে। সত্যবচন, এ সত্য নিজের কথার ক্ষেত্রে যেমন অন্যের কথা নকল করার ক্ষেত্রেও তেমন। অনুরূপ আমানত আদায় করাটাও। পূর্বের হাদীসের মতোই সকল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আর সকল প্রকার অনর্থক কাজ ও কথা-বার্তা ত্যাগ করা। অর্থাৎ যা উপকার দেয় না তা যে স্তরেই। হোক না কেন লুকমান তা বর্জন করে চলতেন। এসব গুণাবলি তাকে অনন্য মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ মুওয়াত্ত্বা মালিক ৯ম খণ্ড, হা. ১৮০৩; আল লু’আহ্ ৮ম খণ্ড, ৪৪৮ পৃ.; আল কাশিফ ১০ম খণ্ড, ৩৩০৬ পৃ.)।
তৃতীয়টি হলো- সৎ চরিত্র। সৎ চরিত্রের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মানবীয় গুণ আর কিছু নেই। এটা সৃষ্টিগতভাবেই যারা ভালো সেই এর প্রকৃত হকদার। অনেক খারাপ চরিত্রের মানুষকেই কসরত করে ভালো চরিত্রের অধিকারী হওয়ার চেষ্টা করতে দেখা যায়, কিন্তু চরিত্রের সঠিক পরীক্ষার সময় তাদের সে মেকী চরিত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে।
চতুর্থ বৈশিষ্ট্য হলো- খানা-পিনায় পবিত্র ও নিষ্পাপ হওয়া অর্থাৎ হারাম থেকে আত্মরক্ষা করা এবং হালালে পরিতুষ্ট থাকা। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; আল কাশিফ ১০ম খণ্ড, ৩৩০৬; আল লুম্’আহ্ ৮ম খণ্ড, ৪৪৮ পৃ.)
উপরের চারটি বিষয় পালন করলে একটি পবিত্র ক্বালব গঠিত হবে।’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলা হলো, মানুষের মধ্যে উত্তম কে? তিনি বললেন: প্রত্যেক নিষ্কলুষ অন্তঃকরণ-সত্যভাষী। সাহাবীগণ বললেন, “সুদূকুল লিসান” তো আমরা বুঝি, তবে “মাখমূমুল ক্বলব” কী? তিনি বললেন: সচ্ছ ও পবিত্র অন্তঃকরণ, যা পাপ করেনি, যুলম করেনি ও হিংসা-বিদ্বেষে জড়ায়নি।
ব্যাখ্যা : (مَخْمُومُالْقَلْبِ) হলো (قَلْبٌ سَلَيمٌ) আল্লাহ বলেন: (اِلَّا مَنۡ اَتَی اللّٰهَ بِقَلۡبٍ سَلِیۡمٍ) “তবে যে নিষ্কলুষ ও পবিত্র ক্বলব নিয়ে আল্লাহর দরবারে হাযির হবে….।” (সূরা আশ শুআরা- ২৬ : ৮৯)
আল কামূস অভিধান গ্রন্থের ভাষ্য মতে, (مَخْمُومُ) শব্দটি (خَمَمْتَ الْبَيْتَ إِذَاكَنَسْتَهٗ) থেকে এসেছে। এটা তখন বলবে, যখন ঘর ময়লা কুটো থেকে পরিষ্কার করবে। (مَخمومُ الْقلب) এর অর্থ হলো দুশ্চরিত্র থেকে এবং অপবিত্র ‘আক্বীদা-বিশ্বাস ইত্যাদি থেকে কলবকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা।
(صدق اللِّسَانِ) যবানের সত্যবাদিতা’, এটা হলো ঐ গুণ যার দ্বারা মানুষের সত্যবাদীর পরিচয় ঘটে। মুনাফিক এবং লৌকিক ব্যক্তি এর অন্তর্ভুক্ত নয়। কেননা তাদের মুখের কথার সাথে তাদের কার্যের মিল নেই।
(مَخْمُومُالْقَلْبِ) পরিচ্ছন্ন কলবের’ ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন- তা এমন একটি কলব যা স্বচ্ছ, নির্মল, সংযমী, পবিত্র এবং যুলম ও হিংসা-বিদ্বেষ থেকে মুক্ত। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ইবনু মাজাহ ৩য় খণ্ড, হা, ৪২১৬; লুম্’আহ্ আত্ তানক্বীহ ৪৪৭ পৃ.)